Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজনীতিতে 'ট্র্যাশ'

ট্র্যাশ। রাজনীতিতে ট্র্যাশ দেখেছেন? এক সময় শুনতাম ‘পতিত’। ওটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট। যাদের পতন হয়েছে তারা ‘পতিত’। এখন শুনছি ‘ট্র্যাশ’। আবর্জনা হিসেবে ছুড়ে ফেলা। আমেরিকা বা বাংলাদেশে এখন হরদম ‘ট্র্যাশ’ হচ্ছে। ট্রাম্পের কথাই বলি। তার পরিবার ছাড়া কেউ তার পাশে নেই। অন্যভাবে বলা যায়, কাউকে তিনি কাছে রাখেননি। সমালোচকেরা বলেন, তার তো একটাই কাজ, নিজের ও পরিবারের সেবা করা। দেশটা চালাচ্ছেন তৃতীয় বিশ্বের শাসকদের মতো। আক্রমণ (কথার) করছেন সবাইকে। দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তিনি ঘায়েল করেছেন ধমকিয়ে। তার ধমক থেকে কেউ বাদ পড়েনি।
হোয়াইট হাউসে বসেই বিদেশের এক সরকার প্রধানকে ফোনে বললেন, জানেন আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন। আমি পৃথিবীর এক নম্বর। এই তো শুরু। সিআইএ, এফবিআই, বিচার বিভাগ, সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র—সব জায়গায় তাঁর আক্রমণ। গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতাকে ম্লান করেছেন। রিপাবলিকান পার্টিকে তিনি জানিয়েছেন ‘ট্র্যাশ পার্টি’। তাঁর কথার বাইরে রিপাবলিকান পার্টির কোনো কথা নেই বলতে বলতে যখন তিনি সীমা অতিক্রম করে ফেলছিলেন, তখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রবার্টস মুখ খুললেন। বললেন, ওবামা জাজ, ট্রাম্প জাজ বা বুশ জাজ বলে কিছু নেই। সবাই জাজ এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধান বিচারপতির ধমক খেয়েও হাল ছাড়লেন না ট্রাম্প। বললেন, আমতা-আমতা করে ৯ নম্বর সার্কিট কোর্টটা ঠিক না। ওরা দেশের ক্ষতি করছে।

কেন বললাম তৃতীয় বিশ্বের শাসকদের মতো, একটু ব্যাখ্যা করি। তৃতীয় বিশ্বের শাসক যেভাবে বিরোধী পক্ষকে সহ্য-ই করতে পারে না, চেষ্টা থাকে দমন করা বা জেলে পুরে রাখার। ট্রাম্পও চান না, তাঁর কোন প্রতিপক্ষ থাকুক। তার বাক্যে তিনিই সেরা। প্রয়োজনে সবাইকে ‘ট্র্যাশ’ করতে রাজি। করছেনও অনবরত। সর্বশেষ তাঁর এক সময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মানুষ, তাঁর আইনজীবী কোহেন আদালতে তাঁর দোষ স্বীকার করেছেন। এতে নির্বাচনী প্রচারণায় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলতে পারে। ট্রাম্প পড়তে পারেন বিপদে। কিন্তু তাতে ট্রাম্প কম যান না। তাঁর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, কোহেন বলে কাউকে তিনি চিনেনও না। কয়েক দিন আগে অ্যাটর্নি জেনারেল সেশনকে বিদায় দিয়েছেন। অথচ একসময় সিনেটর সেশন ছিলেন ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থক। পৃথিবীর এক প্রভাবশালী ব্যক্তি, তেল সাম্রাজ্যের উজ্জ্বল তারকা টিলারসনকে এনে বানালেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তা। কিছুদিন পর ‘ট্র্যাশ’। এভাবে তার সমর্থক হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা একে একে ‘ট্র্যাশ’। সমালোচকেরা বলেন, তাঁর পরিবার ছাড়া যে কাউকে যেকোনো সময় ‘ট্র্যাশ’ করতে ট্রাম্প পিছপা হন না।
হাত দিতে চেয়েছিলেন হাউস ডেমোক্র্যাটদের ওপর। সম্ভবত বুঝে ফেলেছেন, সেটা সহজ হবে না। ডেমোক্র্যাটরা তার ‘ট্র্যাশ’ কারচুপিসহ নানা বিষয়ে তদন্তের সংকেত দিয়ে রেখেছে। হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ডেমোক্র্যাটরা তা পারবে। অবশ্য স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলেছেন ট্রাম্প। এখন থেকে ব্যর্থতার দায় সব চাপাবেন ডেমোক্র্যাটদের ওপর। সাফল্য যত কিছু তাঁর, ব্যর্থতা ডেমোক্র্যাটদের। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম, রাজনীতির আগামী দিনগুলোর জন্য।
বাংলাদেশে ‘ট্র্যাশ’ বহু পুরোনো খেলা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই খেলাটা বেশ জমে উঠেছে।
‘দলছুট’ এক ঐতিহাসিক মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। অনেকের সারা জীবনের ‘তপস্যা’ মুহূর্তে ‘ধুলিস্যাৎ’ হচ্ছে, সবাইতো ‘ট্র্যাশ’। কোনটি নেতার ইচ্ছায়, কোনটি নিজের ভুলে। অকল্পনীয় সব ঘটনা ঘটেছে। ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট। এক আসনের কথা শুনেছি, নৌকা ও ধানের শিষ নিয়ে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। দুজনই সাবেক সাংসদ। মজার বিষয় হলো, এই আসনে যিনি নৌকা নিয়ে লড়ছেন, এর আগে তিনি ধানের শিষ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। একইভাবে ধানের শিষ নিয়ে যিনি লড়ছেন, এর আগে নৌকা নিয়ে এ আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কি বিচিত্র দেশ! কি বিচিত্র নির্বাচন!

লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক