Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধের তোড়জোড়?

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য সাধারণ মানুষের তরফে সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ কঠিন করে তুলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানসম্মত পন্থায় কাগজপত্র ছাড়া যাঁরা আসছেন, তাঁদের সামীন্তে আটকে দিয়ে কোনোরকম আইনের আশ্রয়ের সুযোগ না দিয়েই দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলছেন। ২৫ জুন তিনি এক টুইটে এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ‘না, এভাবে সম্ভব না। হাজার হাজার বিচারক নিয়োগ করে, অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি আইনের শুনানি দিয়ে অভিবাসন বিচার করতে গেলে এটা কার্যকর হবে না। সীমান্তে আটক মানুষদের সেখান থেকে বাচ্চাসহ ফেরত পাঠাতে হবে। মানুষদের এটা বলতে হবে, তুমি অবৈধভাবে আমার দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। কেবল এভাবে করতে পারলেই অবৈধ অভিবাসন অনেক সফল উপায়ে এবং কম খরচে বন্ধ করা যাবে। এবং একই সঙ্গে, আমাদের সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করতেই হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব আচরণের কারণেই মূলধারার গণমাধ্যমজুড়ে আলোচনা হচ্ছে ট্রাম্প কি তাহলে স্বীকৃত পন্থায় রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন বন্ধ করতে চান, যেটা আমেরিকার সংবিধান ও অভিবাসন আইনের অন্যতম মূল ভিত্তি?

যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস বা ইউসিসির ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন-সম্পর্কিত তথ্যাদির বর্ণনায় প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সশরীরে যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত হতে হবে বা থাকতে হবে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আসার এক বছরের মধ্যেই আপনাকে কার্যকারণ দেখাতে হবে যে কেন আপনার নিজ দেশে থাকা নিরাপদ নয়।’ এই এক বছর সময়ের বাইরেও আবেদন করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য কারণ থাকতে হবে। সেই হিসেবে যাঁরা অনেক বছর আগে এসে এক বছরের মধ্যে আবেদন করেননি, তাঁদের জন্য আবেদনের ক্ষেত্র খুবই কম।
সাধারণ পন্থায় যেকোনো রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারীকে তাঁর কেস আবেদন করতে হয় আই-৫৮৯ ফর্মের মাধ্যমে। সেটা যদি বিচারক গ্রহণ না করেন, তাহলে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে আই-৮৬২ ফর্ম পূরণ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার শুনানি হয়। সেখানেও যদি বিচারক তাঁর কেসে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তাঁকে ডিফেন্সিভ অ্যাসাইলাম প্রসেস উইথ ইওআইআর নামক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সব মিলিয়ে এই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রথম শুনানিতে নিষ্পত্তি না হলে অনেক ক্ষেত্রে তিন-চার বছর পর্যন্তও সময় লেগে যায়। এটাই হলো রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের দীর্ঘ আইনি জটিলতা, যেটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোঝাতে চেয়েছেন।
এই আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা কমাতে ২০১৮ সাল থেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের প্রথম শুনানি ২১ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেটা অধিকতর শুনানির প্রয়োজন হলে আরও বাড়তি ২১ দিন সময় পাওয়ার বিধান রাখা হয়। সব মিলিয়ে ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই এখন নতুন আবেদনের ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ২০১৮ সালের আগে করা আবেদনগুলোর মধ্যে লটারি করে একেকজনকে ডাকা হচ্ছে। নতুন আইনের কারণে, যাঁরা ভাবতেন কেবল একটা আবেদন করে ফেলে রেখে দিলেই দু-চার বছর নিশ্চিন্তে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে অবস্থান করা যাবে যুক্তরাষ্ট্রে, তাঁদের জন্য পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যে পারিবারিক নির্যাতনের কারণ দেখিয়ে যে নারী বা পুরুষেরা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করবেন, সেটা আর গ্রহণ করা হবে না। সেটা ছিল রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের ওপর প্রথম বড় আঘাত। এখন ট্রাম্প বলতে চাইছেন সীমান্ত পেরিয়ে আসা কাগজপত্রহীনদের সীমান্তে আটক করে ফিরিয়ে দিতে। তাঁদের কোনো আইনি সুবিধা গ্রহণের সুযোগ দিতে তিনি রাজি নন।
আর বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার মানুষ যাঁরা বনজঙ্গল পাড়ি দিয়ে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় বসবাসের বৈধতা অর্জন করেন, তাঁদের জন্য এটা বড় আঘাত হয়ে আসতে যাচ্ছে। কেননা, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী একটা বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এই টুইট বার্তা করেছেন, প্রতিক্রিয়া দেখতে। একটা সময় তিনি নির্বাহী আদেশ দিলে, এটা আইন হিসেবে পালন করার সুযোগ তৈরি হবে।
কেননা এর আগে সাতটি দেশের থেকে নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার ঠেকাতে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তিনি, ভিন্ন ভিন্ন আদালতে সেটির কার্যকারিতা স্থগিত করলেও সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। সে কারণে আবার সক্রিয় হচ্ছে ট্রাভেল ব্যান নির্বাহী আদেশের সব কার্যকারিতা। এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে নতুন নির্বাহী আদেশ দিলে হাজার হাজার মানুষের যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দিয়ে বসবাসের স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন অভিবাসনের দেশ আমেরিকার সংবিধানের অন্যতম বড় একটি ভিত্তি।