Thank you for trying Sticky AMP!!

শরণার্থী থেকে কংগ্রেসের পথে

ইলহান ওমর

সিএনএনে ভ্যান জোনস শো চলছে। মঞ্চে দুজন তরুণীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সঞ্চালক। একজনকে চেনা চেনা মনে হলো। হ্যাঁ, আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজ; কুইন্স -ব্রঙ্কসে জোসেফ ক্রাউলিকে হারিয়ে কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক টিকিট নিশ্চিত করা তরুণী। অপরজন এক কৃষ্ণ সুন্দরী। হিজাব পরা কালো-লাল পোশাকে অপরূপ লাগছিল তাঁকে। নাম ইলহান ওমর; সোমালীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম আমেরিকান। মিনেসোটার ডিস্ট্রিক্ট ৫ থেকে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হয়েছেন। ইলহানকে দেখে বিশ্বখ্যাত মডেল নাওমি ক্যাম্পবেলের কথা মনে পড়ল। তিনিও জগদ্বিখ্যাত এক কালো সুন্দরী।
ইলহান ওমর বর্তমানে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের আইনসভার প্রতিনিধি। আইনসভায় মাইনরিটি দলের ডেপুটি চিপ হুইপ। ওখানে সোমালি কমিউনিটির কথা অনেক শুনেছি। বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনায় তাঁদের কথা এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের জীবনধারা। এই কমিউনিটির এক তরুণী আমেরিকার হাউসে প্রথম মুসলিম কংগ্রেসউইম্যান হতে যাচ্ছেন—এটা তো ঐতিহাসিক ঘটনা।

মনে পড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা। মিনেসোটার এক জনসভায় দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প বলছিলেন, মিনেসোটাবাসী জানেই না যে, তাদের অঙ্গরাজ্যে এত উদ্বাস্তু এসে জড়ো হয়েছে, যার মধ্য থেকে এখন বের হচ্ছে সন্ত্রাসীরা। ট্রাম্পের মুসলিম অভিবাসীবিরোধী এই বক্তব্য তাঁর সমর্থক বর্ণপ্রিয় রক্ষণশীলদের নিশ্চয়ই খুশি করেছিল। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সোমালি কমিউনিটিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এখন একটা বদল হতে যাচ্ছে। এখন তাদের কণ্ঠ তাদেরই প্রতিনিধির মাধ্যমে পৌঁছে যাবে ক্যাপিটাল হিলে।
ভ্যান জোনস শো দেখছিলাম। আলেক্সান্দ্রিয়া ও ইলহান; দুজনই সপ্রতিভ। দুজনের বার্তা ও লক্ষ্য একই। আমেরিকার সমাজের বৈষম্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক দুর্দশা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করবেন তাঁরা। আলেক্সান্দ্রিয়ার কথা আগেই শুনেছি। বার্নি স্যান্ডার্সের বৈপ্লবিক কর্মসূচির আরও শাণিত রূপ এসেছে তাঁর কাছ থেকেই। কেউ ভাবেনি, ডেমোক্রেটিক দলের প্রভাবশালী নেতা জোসেফ ক্রাউলি তাঁর কাছে ধরাশায়ী হবেন; কিন্তু হয়েছেন। ইলহান ওমরের কাহিনি আরও চমকপ্রদ। সিএনএন, এমএসএনবিসি, টাইম, বিবিসিসহ সব মিডিয়ায় তাঁর কথা এসেছে। আসবেই বা না কেন? এক শরণার্থী কন্যা এখন ক্যাপিটাল হিলের দ্বারপ্রান্তে।
ইলহানের জন্ম ১৯৮২ সালে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়া থেকে শরণার্থী হয়ে তাঁরা আশ্রয় নেন কেনিয়ায়। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে আসেন আমেরিকায়। নর্থ ডেকোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে রাজনীতিতে এসে সাফল্য পান। স্টেট অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সোমালি কমিউনিটির মুখপাত্র। এবারের কংগ্রেস নির্বাচনে মিনেসোটা ডিসট্রিক্ট -৫ থেকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নভেম্বরে তিনিই বিজয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইলহান ওমর ২০১১ সালে বিয়ে করেন; স্বামী আহমেদ। এ দম্পতির তিন সন্তান। তাঁর বক্তৃতার কিছু কিছু শুনেছি। এক বক্তৃতায় তিনি বলছিলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম।’ আরেক বক্তৃতায় ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প বর্ণবাদী, এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তিনি আমেরিকায় একনায়কতন্ত্র চালু করেছেন।’
ইলহান ওমর শুধু অভিবাসী কমিউনিটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেননি, তাঁর সাফল্যে আমেরিকান সমাজের সুন্দর দিকটিও পরিস্ফুট হয়েছে। বহু জাতি, গোত্র, বর্ণ, ধর্ম মিলে যে আমেরিকান সমাজ—সে সমাজে কেউ কাউকে দাবিয়ে রাখতে পারে না; একদিন না একদিন আপন মহিমায় তা ভাস্বর হয়ে উঠবেই। এই সুন্দরকে ফুটিয়ে তুলতে শুধু তিনটি জিনিসের প্রয়োজন—শিক্ষা, শিক্ষা এবং শিক্ষা ।
এই শিক্ষা ও বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকেই ভয় পান ট্রাম্পের মতো শাসকেরা। যতই বদলের কথা বলুন না কেন, তরুণ ও সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে আদতে ভয় পায় ট্রাম্প প্রশাসন। অবশ্য এটা অস্বাভাবিকও নয়। কারণ ভ্যান জোনস শোর সাক্ষাৎকারে নির্বাচিত হলে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আলেক্সান্দ্রিয়া ও ইলহান দুজনই দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ’।
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসই সাংবাদিক।