Thank you for trying Sticky AMP!!

সততা, কর্মনিষ্ঠা আর মানবসেবাই হোক ধর্ম

বাংলাদেশে আমার পরিচিত মহলে এমন কাউকে পাইনি যে বা যারা আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু অসিমকে চিনেন না! কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের টিকিট রাখা থেকে শুরু করে ডাক্তার দেখানো, সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ; বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ছোটদের প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসার কারণে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার কাছে প্রিয়পাত্র সেই অসিম। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা ও চাকরির পাশাপাশি এত কিছু সে কীভাবে ম্যানেজ করে কোনো দিনই তা বুঝে উঠতে পারিনি। তবে আমার কাছে মনে হয় মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসাই এর গোপন রহস্য। আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে আমেরিকার শিকাগোতে ধর্মীয় বিশ্ব-সম্মেলনে সর্বপ্রথম যিনি আমন্ত্রিত সম্মানী বক্তা ছিলেন তাঁর নাম স্বামী বিবেকানন্দ। সেই বিবেকানন্দের মতে, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। তাই, আমার মতে, যদিও কখনো আমি অসিমকে সরাসরি চিরাচরিত ধর্ম পালন করতে দেখিনি তবুও সে একজন বড় ধার্মিক। কারণ মানুষের সেবার মাধ্যমে সে প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তারই সেবা করছে, সৃষ্টিকর্তারই প্রার্থনা করছে।
মানব সেবাই যদি বড় ধর্ম হয় তাহলে আমার মতে একজন বিজ্ঞানীই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় ধার্মিক। কীভাবে? চিন্তা করুন যে মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছেন তাঁর কথা। শুধু বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাসের মাধ্যমে উনি এ পৃথিবীতে কতজন মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন! হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচারসহ সবকিছুতেই আজ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। এতে এ বিশ্বের কতজন মানুষ প্রতিদিন সেবা পাচ্ছেন! উনি কী অনেক বড় ধার্মিক নন? যদিও আমি জানি না উনি কোনো ধর্মবিশ্বাস করতেন না নাস্তিক ছিলেন। তাই আমার মতে, ধর্মের চিরাচরিত বিধি-বিধান না মেনেও ধার্মিক হওয়া যায় নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে মানুষের সেবা করে।
প্রচলিত ধর্ম-কর্ম না করেও যে একজন মানুষ ধার্মিক হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। ধরুন, আপনার বড় একটা সবজির খামারে সবজিতে পানি দেওয়ার জন্য তিনজন মানুষ রাখলেন। প্রথম জন সবজিতে নিয়মমত পানি দেন না। তবে আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধা-ভক্তির ত্রুটি নাই। আপনাকে দেখলেই সালাম-আদাব দেওয়া থেকে শুরু করে আপনি কেমন আছেন না আছেন সব সময় খোঁজ-খবর নেন। দ্বিতীয় জন সবজিতে ঠিক-ঠাক মতো পানি দেন। কিন্তু আপনাকে সালাম-আদাব দেন না বা আপনি কেমন আছেন না আছেন তা নিয়ে তাঁর মোটেও মাথা ব্যথা নাই। তৃতীয় জন তাঁর দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করেন এবং আপনাকে শ্রদ্ধা-ভক্তিও করেন। মাস শেষে আপনি কার প্রতি বেশি সন্তুষ্ট থাকবেন? নিশ্চয়ই তৃতীয় জনের ওপর। তাই নয় কি? দ্বিতীয় জনকে আপনার তেমন ভালো না লাগলেও তাঁর প্রাপ্য বেতন দিতে আপনি মোটেও দ্বিধাবোধ করবেন না। কারণ তিনি তাঁর দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছেন। কিন্তু প্রথম জনকে কী আপনি মাস শেষে বেতন দেবেন? মোটেই না। আমার মতে সৃষ্টিকর্তার বিচারও ঠিক একই রকম। যে তার দায়িত্ব ভালোমতো পালন করবেন, সৃষ্টিকর্তা তাকে তার প্রাপ্য দিয়ে দেবেন। কারণ উনি ন্যায় বিচারক। আর যদি তৃতীয় ব্যক্তির মতো কেউ নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করেন, নিঃসন্দেহে তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রিয়পাত্র হবেন।
কর্মই ধর্ম, সত্যই ধর্ম আর মানুষের সেবাই পরম ধর্ম। এ কথাগুলো যদি আমরা মানি তাহলে কে কোন ধর্মের মানুষ তা বড় ভাবে না দেখে কে তাঁর কাজ ঠিকমতো করছেন, সত্য কথা বলছেন, ন্যায় ও সৎ পথে চলছেন আর মানুষের সেবা করছেন তা দিয়ে বিচার করলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটা সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কী সমস্যা? ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা। প্রত্যেক ধর্ম সমান কথা বললেও, শান্তি চাইলেও আমরা সবাই অন্য ধর্মের মানুষের আচার-আচরণ বা রীতি-নীতি মেনে নিতে পারি না। কারণ আমাদের পছন্দের পরিমাপক হয় আমাদের নিজস্ব ধর্মের নিয়মকানুন যা অন্য ধর্মের নিয়মকানুনের সঙ্গে অনেক অংশেই মিলে না। তাই ভাবুন, আমরা কী ধর্মীয় সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা চাই? যদি চাই, তাহলে আসুন, আমরা মানুষকে ধার্মিক ভাবি তাঁর কাজের, সততার ও মানুষকে সেবা করার মাপকাঠিতে, কোন ধর্মের অনুসারী তা দেখে নয়।