Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্রাট ডোনাল্ড ট্রাম্প!

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর ক্যাম্পেইনের আঁতাতের প্রশ্নে অব্যাহত তদন্তে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি একের পর এমন সব কাণ্ড করে চলেছেন, যাতে তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নন, নিজেকে দেশের সম্রাট ভাবতে শুরু করেছেন।

সর্বশেষ যে ঘটনার ফলে তিনি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তা হলো সাবেক সিআইএ-প্রধান জন ব্রেননের ‘নিরাপত্তা অনুমতিপত্র’ বাতিল। গত সপ্তাহে এক নির্বাহী ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, তিনি ব্রেননের অনুমতিপত্র বাতিল করছেন, কারণ তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। একজন সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যে গোপনীয় গোয়েন্দা নথি পড়ার সুযোগ পান, এর অপব্যবহার করে তিনি এই মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।

শুধু ব্রেননই নন, আরও এক ডজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার নিরাপত্তা অনুমতিপত্র বাতিল করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এঁদের মধ্যে বিচার বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, ব্রেনন ও অন্য সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ম্যুলার তদন্তের পেছনে রয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তদন্ত। তাই এদের ব্যাপারে একটা কিছু করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।

ব্রেনন ও অন্যান্য যাঁদের নাম বাতিল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাঁরা প্রায় সবাই ট্রাম্পের প্রবল সমালোচক। টিভি বা সংবাদপত্রে বিভিন্ন সংবাদ ভাষ্যে ট্রাম্পের অনুসৃত নীতির কঠোর সমালোচনা করে তাঁরা প্রেসিডেন্টের বিরাগভাজন হয়েছেন। বলা হচ্ছে, এরা সবাই ট্রাম্পের ‘শত্রু তালিকা’য় রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির সময় তাঁর প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তাঁদেরও এই রকম একটি ‘শত্রু তালিকা’ তৈরি করেছিলেন।

ব্রেননের নিরাপত্তা অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রবল সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এঁরা সবাই বলছেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা কোনো সম্পর্ক নেই। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিগত চারটি প্রশাসনের ১৩ জন শীর্ষ কর্মকর্তা, যাঁদের অধিকাংশ হয় সিআইএর সাবেক প্রধান বা পরিচালক, একযোগে এক প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করেছেন, যার মূল কথা, ট্রাম্প তাঁর সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আরও ৬০ জনের মতো সাবেক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাও পরে এই প্রতিবাদপত্রের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করে এক বিবৃতি দেন।

সবচেয়ে নাটকীয় প্রতিবাদটি আসে ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সামরিক কমান্ডার উইলিয়াম ম্যাকরাভেনের কাছ থেকে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক উপসম্পাদকীয়তে নিজের নিরাপত্তা অনুমতিপত্র বাতিল করার অনুরোধ করে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, জন ব্রেনন একজন অসাধারণ সরকারি কর্মকর্তা, আপনি তাঁর নিরাপত্তা অনুমতিপত্র বাতিল করেছেন। আপনি যদি আমার অনুমতিপত্রও বাতিল করেন, তাহলে আমি সেটি গভীর সম্মানের কাজই মনে করব।’

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক উপসম্পাদকীয়তে একজন ভাষ্যকার লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জন ব্রেননের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা হলো সম্রাটের বিরুদ্ধে সমালোচনার দুঃসাহস। একসময় ফ্রান্সে বা আজকের সৌদি আরবে, রাজার বিরুদ্ধে কথা বলা রাজদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু সেই অপরাধে আজ আমেরিকায় কেউ অভিযুক্ত হতে পারেন, তা অভাবনীয়।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প তাঁর কথা ও কাজের সব সমালোচনাকে ষড়যন্ত্র বলে বিষোদ্‌গার করে আসছেন। তথ্যমাধ্যমকে তো বটেই, তিনি নিজের প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধেও খড়গহস্ত। রাশিয়া তদন্ত বাতিলে সম্মত না হওয়ায় সিআইএ-প্রধান জেমস কোমিকে তিনি দায়িত্বচ্যুত করেছিলেন। তারপরও সে তদন্ত বাতিল না হওয়ায় কখনো কথায় কখনো ইঙ্গিতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টাইনের অপসারণ দাবি করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এসব কাজের মাধ্যমে ট্রাম্প বিচারকাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, তার বিস্তর প্রমাণ রাবার্ট ম্যুলারের হাতে ইতিমধ্যে জমা পড়েছে।

রাশিয়া তদন্তকে ট্রাম্প যতই ‘ষড়যন্ত্র’ বলে বাতিল করুন না কেন, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার ইতিমধ্যে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নামা চূড়ান্ত করেছেন। নিজের অপরাধ স্বীকার করে এই তদন্তকাজে সহযোগিতা করছেন—এমন লোকের সংখ্যা পাঁচ। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের আইনজীবী ডন ম্যাগেন পর্যন্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই তদন্তের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন।

ট্রাম্প নিজেকে সম্রাট ভেবে এই মুহূর্তে স্বস্তি পেতে পারেন, কিন্তু তাঁর গায়ের কাপড় যে দ্রুত সরে যাচ্ছে, এ কথা এখন দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে আসছে।