Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারি সুবিধা নিলে গ্রিনকার্ড মিলবে না

ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকায় গ্রিনকার্ড ও নাগরিকত্ব পাওয়ার নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। এই নিয়মে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য বা গৃহায়ণের জন্য সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বহিরাগতদের গ্রিনকার্ড পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। গ্রিনকার্ড আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য বৈধ অনুমোদন। গ্রিনকার্ড পাওয়ার পাঁচ বছর পরে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
নতুন নিয়মে নিজেদের ভরণপোষণে সক্ষম এবং ভবিষ্যতে কোনোভাবেই সরকারের বোঝা হয়ে উঠবেন না—এমন প্রমাণ দিতে পারলেই আমেরিকায় গ্রিনকার্ড অথবা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। যেসব অভিবাসী আমেরিকায় বসবাসের আইনি অনুমোদন পেয়েছে, তারা এই নীতিমালার আওতাভুক্ত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১০ মাস আগেই জানিয়েছিল এ রকম নীতিমালা চালু হবে। সে সময় বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা কেন কুচিনেলি ১৩ আগস্ট সকালে নতুন নিয়ম ঘোষণার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ‘আমরা চাই এমন মানুষ এ দেশে স্থায়ী বসবাসের জন্য আসুন, যাঁরা নিজেদের খরচ বহন করতে পারে। আগাগোড়াই এই নিয়মের ভিত্তিতে এ দেশে অভিবাসননীতি পরিচালিত হয়েছে।’ ১৫ অক্টোবরের মাঝামাঝি এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি জানান।
যারা ইতিমধ্যে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন বা মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। তবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা, যারা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পান সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা কার্যকর হবে না। মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য, উদ্বাস্তু ও আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা কার্যকর হবে না।
অভিবাসন অধিকার নিয়ে কাজ করে—এমন বিভিন্ন সংস্থা নতুন এই নীতিমালার কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এই ঘোষণার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র মানুষেরা। বৈধ হওয়া সত্ত্বেও শুধু আইনি ঝামেলা এড়াতে ও ভয়ে তাঁদের অনেকেই খাদ্য, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার মতো সরকারি অনুদান নিতে চাইবে না। ফলে, যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যেমন শিশুরা, তারাই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে।

বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংস্থা জানিয়েছে, তাঁরা এই নীতিমালার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করবে। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলও জানিয়েছেন, তিনি এই নীতিমালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। নতুন নীতিমালার ফলে যেসব অভিবাসী বা বহিরাগতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে চিন্তিত নিউইয়র্ক নগরীর মেয়রের অফিস থেকে তাদের আইনি সাহায্যের জন্য ৩১১ নম্বরে ফোন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যারা ফোন করবে, তাদের ‘অ্যাকশন নিউইয়র্ক’ কথা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এতে সঠিক দপ্তরে তাদের প্রশ্ন পাঠানো সহজ হবে।
আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করে থাকে। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার আবেদনকারী নতুন নীতিমালার আওতায় পড়তে পারে। জানা গেছে, গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করেছে—এমন ব্যক্তিদের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য অন্তত তিন বছরের কর প্রদানের হিসাব ও এই সময়ে চাকরির প্রমাণ দেখাতে হবে। যাদের বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে গ্রিনকার্ডের অনুমোদন সহজ হবে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ দেশে অভিবাসীদের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন নানা রকম ফন্দিফিকির খুঁজছে। এই নতুন নীতিমালা তারই অংশ। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত দরিদ্র বহিরাগতরা। পারিবারিক সূত্রে যারা নাগরিকত্বের সুযোগ পেত, তারাও এই নিয়মের আওতায় আসতে পারে। এর আগে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, পারিবারিক সূত্রে অভিবাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে মেধাভিত্তিক নিয়ম চালু করতে তারা আগ্রহী। এই নিয়মে শিক্ষিত, আর্থিকভাবে সচ্ছল ও ইংরেজি ভাষায় অভিজ্ঞ আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কবে এই মেধাভিত্তিক নিয়ম চালু হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।