Thank you for trying Sticky AMP!!

সীমান্ত দেয়াল নিয়ে ট্রাম্পের একগুঁয়েমি পদক্ষেপ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থী ও অভিবাসী আটকাতে দেয়াল তুলতে প্রয়োজনীয় অর্থ আদায়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেদের ট্রাম্প বলেন, অর্থ বরাদ্দ পেলে এমনটা করার দরকার ছিল না।
এই পদক্ষেপের দরুন কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিরেকেই দেয়াল তোলার জন্য রফা হওয়া অর্থের পরিমাণের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৩৬০ কোটি ডলার থেকে অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণে এটি কংগ্রেসের এখতিয়ারের বাইরে থাকছে।
ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্ত দেয়াল তুলতে ৫৭০ কোটি ডলার চেয়েছিল কংগ্রেসের কাছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট সদস্যেদের তীব্র আপত্তি ও বিতর্ক শেষে ১৪০ কোটি ডলার অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। যেভাবে আপত্তি ও বিতর্ক চলছিল, তাতে অর্থের অনুমোদন মিলবে কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধে। দেয়াল তোলার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের মতবিরোধ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, গত বছরের শেষ নাগাদ ফেডারেল সরকারে শুরু হওয়া আংশিক অচলাবস্থা (শাটডাউন) রেকর্ড ৩৫ দিন স্থায়ী হয়। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হলেও এখন জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণে নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন দক্ষিণ সীমান্তে ৩৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পাকা দেয়াল তুলে দিতে। কিন্তু সে পরিকল্পনায় সায় দেয়নি কংগ্রেস। শেষমেশ কংগ্রেসের অনুমোদনেই সায় দেন ট্রাম্প। পাশাপাশি জরুরি অবস্থা চলাকালে নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে কংগ্রেসের কাছ থেকে আরও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নেবেন প্রেসিডেন্ট। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তে প্রাচীর তোলার কাজ সারতে প্রয়োজনে ৮০০ কোটি ডলার পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ব্যয় করতে পারবেন। তবে জরুরি অবস্থা জারি করলেও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সমঝোতা বিলেও অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মেনে নেননি অনেকেই। জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আপত্তি ও প্রতিবাদ জোরালো হতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সিনেটের মাইনরিটি কমিটির নেতা চাক শুমার জরুরি অবস্থার বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এটা সংবিধানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের মতো। ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আদালতে যাওয়ারও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সীমান্তে প্রাচীর তোলাটা অত্যাবশ্যকীয় কোনো কাজ নয়। অথচ এমন একটি বিষয়ের জন্য প্রতিবন্ধকতা সরাতে জরুরি অবস্থা জারি করা হলো, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি অবস্থা প্রয়োগ করে দেয়াল তুলতে অন্য খাত থেকে অর্থ সরালে তা ভবিষ্যতের জন্য একটি বাজে নজির হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টরাও এমন নজির দেখিয়ে একই পথে হাঁটতে পারেন। কারণ, এটা বেআইনি কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়। এটি ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়। শুধু তাই নয়, মার্কিন সংবিধান ও দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধেও আক্রমণ এটি। নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে অন্য খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়াল তৈরির মতো পদক্ষেপ এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নেননি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এভাবে সরকারি অর্থ ব্যবহার করা আমেরিকার সংবিধানের পরিপন্থী। জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল তৈরির প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীর তহবিলই শুধু নেবেন না, তিনি এমনকি বাহিনীর ১০ লাখ সংরক্ষিত (রিজার্ভ) কর্মীকেও এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রশাসন। এ কারণে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করা হচ্ছে।