Thank you for trying Sticky AMP!!

স্মার্ট চিপ যুক্ত করা হলে নগর পরিচয়পত্র না গ্রহণের পরামর্শ

নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ পৌর পরিচয়পত্রের (আইডিএনওয়াইসি) সঙ্গে আর্থিক সেবা যুক্ত করার লক্ষ্যে একটি স্মার্ট চিপ যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু অভিবাসন আইনজীবীরা এই স্মার্ট চিপের সংযোজনকে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অবৈধ অভিবাসীদের উচিত হবে নতুন এই পরিচয়পত্র গ্রহণ না করা।
একাধিক অভিবাসন আইনজীবীর বরাত দিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইডিএনওয়াইসির সঙ্গে স্মার্ট চিপ সংযোজনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অবৈধ অভিবাসীদের বিপদ বাড়িয়ে তুলবে। কারণ এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে, যা অন্য পক্ষের হাতে চলে যেতে পারে। এই পরিচয়পত্রকে নগর কর্তৃপক্ষ নিরাপদ বললেও তা সংশ্লিষ্ট অবৈধ অভিবাসীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ এর মাধ্যমে কঠোর অভিবাসন নীতি অনুসরণ করা ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে সবকিছু জেনে তার ওপর চড়াও হতে পারে।
অভিবাসন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মেক দ্য রোড নিউইয়র্কে’র কর্মী নাতালিয়া অডি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, এই প্রকল্প যদি এভাবেই বাস্তবায়ন হয়, তাহলে কমিউনিটির একজন সদস্য হিসেবে আমরা কখনোই কাউকে এই পরিচয়পত্র নিতে উৎসাহিত করব না। তারা যদি আমাদের শঙ্কাকে বিবেচনায় না নেয়, তবে আমরা বলতে চাই যে, দুঃখিত এই পরিচয়পত্র আমরা নেব না।’
১১ ফেব্রুয়ারি এই প্রস্তাবের বিষয়ে নগর পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার জন্য অভিবাসন অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনকে ডাকা হয়। সেখানে ‘মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক’ যোগ দিয়ে নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে সতর্ক করে। কারণ এই পরিকল্পনায় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যে স্মার্ট চিপ যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, তা সরবরাহ করবে তৃতীয় পক্ষের একটি আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানি। অথচ এই পরিচয়পত্রেই থাকবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য। এই তথ্য তারা বিক্রিও করতে পারে। কিংবা ফেডারেল কর্তৃপক্ষের চাপে তারা এ তথ্য তাদের হাতে তুলে দিতে পারে।
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেটসি পাম বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিচয়পত্রটি রয়েছে, তাতে লাভের তুলনায় ঝুঁকি কম। এ কারণে আমরা এটি গ্রহণের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করি। কিন্তু এই পরিচয়পত্র যদি অতি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে আমরা অবশ্যই তা না নেওয়ার পরামর্শ দেব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ এমন একটি বাস্তবতার মুখেই এনে দাঁড় করিয়েছে আমাদের।’
নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈধ অবৈধ নির্বিশেষে নিউইয়র্ক নগরবাসীদের সবার জন্য ব্যাংকসহ আর্থিক সেবা অবারিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে থাকবে পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও। নগর কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এই সেবা সবার জন্য অবারিত করার প্রক্রিয়াটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে সব অভিবাসন গ্রুপ। তাদের মতে, এটি বিপজ্জনক প্রক্রিয়া। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
অভিবাসন অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নিউ ইকোনমিক প্রোজেক্টের সমন্বয়ক দিয়ানিরা দেল রিওর মতে, ‘নগর কর্তৃপক্ষের অভিপ্রায়টি ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রক্রিয়াটি নিয়ে। তাদের বোঝা উচিত এটি কতটা বিপজ্জনক। এর মাধ্যমে পরিচয়পত্রধারীদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য চল যাবে তৃতীয় পক্ষের হাতে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন অবৈধ অভিবাসীরা। ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না অন্যরাও। এমন নয় যে, এই কার্ডের মাধ্যমে আরও বেশিসংখ্যক ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাব খুলতে পারবেন। কার্ডধারী ব্যক্তি শুধু এই কার্ডকে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এটি বড় কোনো সুবিধা নয়, যার জন্য এত বড়ু ঝুঁকি নেওয়া যায়।’
এ বিষয়ে ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্স কমিশনার বিটা মোসটোফি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে চিন্তা চলছে। এখনো চূড়ান্ত নয়। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না দিয়েই এই ব্যবস্থাটি অর্থাৎ স্মার্ট চিপটি তৈরি করা যায় কিনা, তা দেখছে নগর কর্তৃপক্ষ। সুরক্ষা ও সুবিধা দুইই যদি আমাদের সন্তুষ্ট করে, তবেই আমরা এ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হব। এ নিয়ে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে আমরা বাধ্য নই। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করেই এটি করা হবে।’