Thank you for trying Sticky AMP!!

স্যান্ডার্সের বিজয়ে ডেমোক্র্যাটরাই ভীত

বার্নি স্যান্ডার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের বাছাইপর্বের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোট পেয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ককাস পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই ভোটে শ্বেতকায় ছাড়া আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক ভোটারদের সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হন ৭৮ বছর বয়সীয় এই ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’।

স্যান্ডার্সের এই বিজয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা আনন্দিত হওয়ার বদলে রীতিমতো ভীত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ধারণা, যে অতি বামপন্থী কর্মসূচি নিয়ে স্যান্ডার্স নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করছেন, তাতে এ বছর নভেম্বরে তাঁর পক্ষে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাস্ত করা অসম্ভব হবে। শুধু তিনিই হারবেন তা নয়, তাঁর সঙ্গে সিনেটে ও কংগ্রেসে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাঁদের অনেককেও টেনে নামাবেন স্যান্ডার্স।

ডেমোক্রেটিক ‘স্ট্যাবলিশমেন্ট’ আশা করেছিল, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্যান্ডার্সকে থামাতে পারবেন। এর আগে অনুষ্ঠিত আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাছাই পর্যায়ের নির্বাচনে বাইডেনের অবস্থান ছিল চতুর্থ ও পঞ্চম। আর নেভাদায় তাঁর অবস্থান দ্বিতীয় হলেও স্যান্ডার্সের সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান প্রায় ৩০ শতাংশ।

জো বাইডেন পিছিয়ে পড়ছেন টের পেয়ে দলনেতারা বিকল্প হিসেবে ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গকে বাছাই করেছিলেন। তাঁকে সুযোগ করে দিতে প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন পর্যন্ত পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু নেভাদায় দলীয় প্রার্থীদের নবম বিতর্কে দারুণ খাবি খাওয়ার পর তাঁর ব্যাপারেও উৎসাহে ভাটা পড়েছে।

স্যান্ডার্স খোলামেলাভাবেই নিজেকে সমাজতন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি স্বাস্থ্য খাতকে পুরোপুরি জাতীয়করণ করতে চান, সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চান, সব শিক্ষাঋণ মওকুফ করে দিতে চান এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি চালুর পক্ষপাতী।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতৃত্ব স্যান্ডার্সের এই কর্মসূচিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তার প্রবল সমালোচনা করেছেন। তাদের বক্তব্য, স্যান্ডার্স যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার মতো দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। জো বাইডেন, ব্লুমবার্গসহ অধিকাংশ ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও একই কারণে স্যান্ডার্সেকে আক্রমণ করেছেন।

স্যান্ডার্সের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের ‘সমাজতন্ত্রের’ ভয় ভাঙানো। এ জন্য স্যান্ডার্সের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ‘সমাজতন্ত্র’ অর্জিত হয়েছে। তবে এই ‘সমাজতন্ত্রের’ একমাত্র সুবিধাভোগী হলো দেশের ১ শতাংশ অতিধনী গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিমার বাইরে। অধিকাংশের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার রুদ্ধ। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্র হচ্ছে আরও দরিদ্র। তিনি এ অবস্থা বদলাতে চান।

কিন্তু স্যান্ডার্সের এমন বক্তব্যের ফলে সবাই তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, এমনটা নয়। এক সপ্তাহ আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এক জনমত জরিপে বলা হয়েছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ একজন ‘সমাজতন্ত্রীকে’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। তবে জরিপে এ–ও বলা হয়েছে, ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মধ্যে ৫০ শতাংশ সমাজতন্ত্রকে ইতিবাচকভাবে দেখে।

সবাই এ কথা মানেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সফল হতে হলে ডেমোক্রেটিক চ্যালেঞ্জারকে ২০০৮ ও ২০১২ সালের মতো ‘ওবামা কোয়ালিশন’ গঠন করতে হবে। নেভাদায় নাটকীয় বিজয়ের ভেতর দিয়ে স্যান্ডার্স প্রমাণ করেছেন যে একমাত্র তাঁর পক্ষেই তেমন কোয়ালিশন গঠন সম্ভব।

কোনো চূড়ান্ত ঘোষণার সময় এখনো আসেনি। দলের অন্য প্রার্থীরাও হাল ছেড়ে দেননি। বাইডেনও আশায় আছেন আফ্রিকান-আমেরিকানদের সমর্থনে বাছাইপর্বের পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে তিনি চলতি ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ব্লুমবার্গও আশা করছেন বিজ্ঞাপনের জোরে তিনি এ কথা প্রমাণে সক্ষম হবেন, ধনকুবের ট্রাম্পকে হারাতে হলে তাঁর মতো আরেকজন ধনকুবের দরকার। ৩ মার্চ তথাকথিত ‘সুপার টুইসডে’তে একসঙ্গে ১৪টি অঙ্গরাজ্যে বাছাইপর্বের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেন ও ব্লুমবার্গ উভয়েই আশা করছেন, এই ভোটেই তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হবেন।