Thank you for trying Sticky AMP!!

১০ দিনেই নির্বাহী আদেশ জারি করে রেকর্ড গড়লেন বাইডেন!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ১০ দিনেই ৪২টি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন জো বাইডেন। এত অল্প সময়ে এতগুলো নির্বাহী আদেশ জারি করে রেকর্ডই গড়লেন তিনি। এসব আদেশের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ের আমেরিকা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তিনি।

অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক নীতিমালা বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস খুব টেকসই নয়। এ নিয়ে বাইডেনকে এরই মধ্যে সতর্ক করেছে তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল সংবাদমাধ্যম। নির্বাহী আদেশের বদলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে সমঝোতা করে আইন পাল্টানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এসব পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনিও। অভিবাসন থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে আসেন। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছেন, মধ্যপ্রাচ্য নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করতে পারে—এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে অনেক কিছুই ঝড়ের বেগে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নির্বাহী আদেশ জারি করা প্রত্যাশিত হলেও বাইডেন যেভাবে একের পর এক আদেশে সই করছেন, তা নিয়ে কথা উঠছে। নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক মার্কিন গণমাধ্যমে তাঁকে ধীরে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নির্বাহী আদেশ নয়, আইনপ্রণেতাদের ঐক্যের ওপর জোর দেওয়ার জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

অন্যদিকে বাইডেন ক্ষমতায় আশার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি দ্রুতই ট্রাম্পের নীতিমালা থেকে বেরিয়ে আসতে নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। এমন বহু আদেশ ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রথম দিনই যাতে কিছু আদেশে তিনি সই করতে পারেন, সেই প্রস্তুতির কথা ২০ জানুয়ারির আগেই জানানো হয়েছিল।

তাই ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নির্বাহী আদেশ জারি করা প্রত্যাশিত হলেও বাইডেন যেভাবে একের পর এক আদেশে সই করছেন, তা নিয়ে কথা উঠছে। নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক মার্কিন গণমাধ্যমে তাঁকে ধীরে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নির্বাহী আদেশ নয়, আইনপ্রণেতাদের ঐক্যের ওপর জোর দেওয়ার জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০ দিনে সাতটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। তাঁর রেখে যাওয়া জঞ্জাল থেকে বেরিয়ে আসতে বাইডেনকে এর চার গুণের বেশি আদেশে এরই মধ্যে সই করতে হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০ দিনে নয়টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। একই সময়ে জর্জ বুশ সই করেছিলেন মাত্র দুটি আদেশে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাইডেনের নির্বাহী আদেশের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে।

মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী আদেশ দিয়ে জরুরি পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও আইনপ্রণেতাদের পাশ কাটিয়ে এমন নির্বাহী আদেশ জারি করা মার্কিন সমাজে কখনো ভালো চোখে দেখা হয়নি।

আবার নির্বাহী আদেশ সহজে আদালতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ আদালতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাইডেনের নির্বাহী আদেশও আদালতে বাধায় পড়েছে। অভিবাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়ন স্থগিত করার আদেশ স্থগিত করে রায় দিয়েছেন টেক্সাসের আদালত।

আদালতের প্রক্রিয়ায় টিকে গেলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সহজেই পাল্টা নির্বাহী আদেশ জারি করে আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা আদেশ বাতিল করতে পারেন। যেমন ট্রাম্পের আদেশগুলো কলমের খোঁচায় বাতিল করছেন বাইডেন। অথচ কংগ্রেসে প্রণীত কোনো আইন পাল্টাতে আরেকটি আইন পাস করতে হয়। নতুন আইন পাস হতে হলে এ-সংক্রান্ত বিলকে কংগ্রেসে বিতর্কসহ নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঐতিহ্য অনুসরণ করেই বাইডেন এমন নির্বাহী আদেশ জারি করছেন। যদিও বাইডেন নিজ দল ও রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতাদের ঐক্য এবং কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের গুরুত্বকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পাবলিক সার্ভিস বিভাগের অধ্যাপক পল লাইট বলেছেন, আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। শুধু নির্বাহী আদেশে একটি শক্ত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা যায় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে বাইডেনকে।

বাইডেনের বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ অনেকটাই প্রতীকী পদক্ষেপ। নির্বাচনী প্রচারণাকালে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দ্রুত নির্বাহী আদেশ জারি করে মার্কিন সমাজে যে বিভেদের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

কংগ্রেসে যেকোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ এখন চরমভাবে বিভক্ত। অভিবাসন, অপরাধ আইনের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়েও ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে মতৈক্য নেই। রিপাবলিকানদের মধ্যে অতি রক্ষণশীলতা ও উদার রক্ষণশীলতার সংঘাত। একইভাবে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে চরম উদারনৈতিক ভাবধারার অনুসারীদের সঙ্গে মধ্যপন্থীদের সংঘাত এখন প্রকাশ্যে।

মার্কিন সমাজও এমনিভাবে নানা ভাবধারায় ভীষণভাবে বিভক্ত এখন। এসব থেকে বেরিয়ে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের ঐক্য অনেকটাই দুরূহ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। নিজেদের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানেও তাঁদের মধ্যে একতা নেই। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমায় এমন অনৈক্যের প্রমাণ সুস্পষ্ট হয়েছে।

অভিবাসনব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিবাসন, পুলিশ বাহিনী ও অপরাধ আইনের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের নিয়মনীতির পরিবর্তনে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন—এমন আভাস এখন থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

মধ্যবাম ধারার মার্কিন থিঙ্কট্যাংক ‘থার্ড ওয়ে’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ম্যাট ব্যানেট প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অতিরিক্ত নির্বাহী আদেশ জারি করার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহামারি, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয়গুলো এখন কঠিনভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আত্মায় যে রক্তক্ষরণ চলছে, তা দ্রুত নিবারণে এমন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াই জরুরি। নির্বাহী আদেশ জারি করে বাইডেন কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

পক্ষে-বিপক্ষে এমন মতামতের মধ্যে নিজ দল ও রিপাবলিকানদের নিয়ে এক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা মোকাবিলা করার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন বাইডেন। একাই সবকিছু করতে পারবেন না, কংগ্রেসকে তাঁর প্রয়োজন—এ কথা মাথায় রেখেই তিনি কাজ শুরু করেছেন বলে ম্যাট ব্যানেট বলেন।