Thank you for trying Sticky AMP!!

'ট্রাম্পের বক্তব্য বর্ণবাদী' - কংগ্রেসে নিন্দা প্রস্তাব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের চার নারী ও অশ্বেতকায় কংগ্রেস সদস্যকে ‘যার যার দেশে ফিরে যাওয়ার’ পরামর্শ দিয়ে করা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বর্ণবিদ্বেষী। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নবাগত ও অশ্বেতকায় মানুষের প্রতি ঘৃণা ও ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে নিন্দনীয় অভিহিত করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

এই প্রস্তাবে বলা হয়, অভিবাসীদের অবদানে আমেরিকা সবল হয়েছে। যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আইনসম্মত উপায়ে আসতে চান, তাদের জন্য সে পথ খোলা রাখতে মার্কিন কংগ্রেস প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ জন্য বর্ণ, জাতি পরিচয়, ধর্ম বা জন্মস্থান বিবেচনায় আসবে না।

২৪০-১৮৭ ভোটে গৃহীত এই প্রস্তাবের পক্ষে সব ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য ভোট দিলেও মাত্র চারজন রিপাবলিকান ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য সমর্থন করেন। এটি একটি প্রতীকী প্রস্তাব। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এরপরও গত ১০০ বছরে এই প্রথম একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ রকম নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের চরিত্রে কালিমা লেপে দিল।

এই চার নারী কংগ্রেস সদস্য হলেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেস, রাশিদা তালিব, আইয়ানা প্রেসলি ও ইলহান ওমর। তাঁদের মধ্যে প্রথম তিনজনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। আর ওমর ছোটবেলায় সোমালিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির এই চার নারী কংগ্রেস সদস্য প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত। গত রোববার একাধিক টুইটে এই চার নারীকে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন ট্রাম্প। টুইটে ট্রাম্প চার নারীর উদ্দেশে বলেন, এই নারীরা এমন সব দেশ থেকে এসেছেন, যাদের সরকার পুরোটাই ব্যর্থ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কীভাবে পরিচালনা করতে হবে, সে পরামর্শ দেওয়ার বদলে তাঁদের উচিত যার যার দেশে ফিরে যাওয়া। সেখানে অবস্থা বদলানোর পর তাঁরা ফিরে এসে বলুক, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

গতকাল কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা যাতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এর ভাষা যথেষ্ট নমনীয় রাখা হয়। তবে কোনো রিপাবলিকান যাতে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেন, সে জন্য সকালেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাবধান করে দেন। নিন্দাসূচক প্রস্তাব আসলে ডেমোক্র্যাটদের একটি চাতুরী, তাদের ফাঁদে পড়ে তাঁরা যেন নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ না করে, সে ব্যাপারে ট্রাম্প নিজ দলের সদস্যদের সতর্ক করে দেন। এক টুইটে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তিনি বর্ণবাদী নন। তাঁর শরীরের কোনো হাড়ে বর্ণবাদের বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই।

ট্রাম্পের এই টুইটের জবাবে কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়া-করতেস বলেন, ‘ঠিক বলেছেন। আপনার হাড়ে কোনো বর্ণবাদ নেই। বর্ণবাদ আছে আপনার হৃদয়ে, আপনার মগজে।’

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, যে ভাষায় ট্রাম্প কথাগুলো বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে তার প্রতিবাদ করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যের, তা তিনি রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যা-ই হন, তাদের অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্ণবাদী টুইটের নিন্দা জানানো উচিত।

প্রেসিডেন্টকে বর্ণবাদী বলায় রিপাবলিকান সদস্যরা তার প্রতিবাদে সে কথা কংগ্রেসের রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান। এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেওয়ায় এক ভিন্ন ভোট গ্রহণের মাধ্যমে স্পিকারের বক্তব্য পরিষদের কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়।

অধিকাংশ ভাষ্যকার একমত, নিজের অনুগত সমর্থকদের অভিবাসন প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ রাখতেই ট্রাম্প কংগ্রেসের অশ্বেতকায় চার নারী সদস্যের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ২০২০ সালে তাঁর পুনর্নির্বাচন ক্যাম্পেইনে তিনি অভিবাসন ও বর্ণ বিদ্বেষ—এই দুই রণকৌশল ব্যবহার করবেন, ট্রাম্পের ব্যবহার থেকে সে কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

অপ্রত্যাশিত হলেও ট্রাম্পের টুইট ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। ট্রাম্পের টুইটের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে নীতিগত প্রশ্নে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে প্রগতিশীল শাখার যে অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, তার স্থলে এক নতুন সংহতির সৃষ্টি হয়েছে। ভোট গ্রহণের আগে পেলোসি তাঁর দলের সদস্যদের উদ্দেশে এক ভাষণে এই চার নারী সদস্যকে ‘আমাদের বোন’ সম্বোধন করে বলেন, ‘এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আমরা দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় তুলে ধরব।’ তিনি আশা করেন রিপাবলিকানরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে। যদি তা না দেয়, তাহলে তাদের স্বরূপ প্রকাশিত হবে, সেটাও সবার জন্য একটি বার্তা হবে।