Thank you for trying Sticky AMP!!

১২ বছর বয়সী সাল্লি হারনান্দেজ ও তার পরিবারকে তাদের পুরোনো আশ্রয়স্থল ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজ করতে হচ্ছে

নিউইয়র্কে নতুন নিয়ম জারির পর কেমন আছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হোটেলের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল ১২ বছর বয়সী সাল্লি হারনান্দেজ ও তার পরিবার। তবে নতুন আবাসনবিধির আওতায় গত বুধবার হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের বহিষ্কার করেছে। তাদের নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। এএফপির প্রতিনিধির সঙ্গে সাল্লি যখন কথা বলছিল, তখন সে হাঁপাচ্ছিল।

নিউইয়র্কে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল সামাল দিতে নতুন আবাসনবিধি কার্যকর করার কারণে অনেককেই এখন এভাবে আশ্রয়ের খোঁজ করতে হচ্ছে। নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র না থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

নিউইয়র্কে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কিছু মানুষ একই জায়গায় দুই বছর পর্যন্ত আছেন। নগর কর্তৃপক্ষের নতুন বিধি অনুযায়ী, অভিবাসীরা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ দিনের বেশি সময় থাকতে পারবেন না। আবার পুরোনো আশ্রয়স্থলটি না ছাড়া পর্যন্ত তাঁরা নতুন জায়গার জন্য আবেদনও করতে পারবেন না। মেয়াদ শেষ হওয়ামাত্রই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়স্থলটি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে হবে। সেদিন থেকেই তাদের ভিন্ন আশ্রয় খুঁজতে হবে, প্রতিদিন নতুন করে আসা (প্রধানত লাতিন আমেরিকা থেকে) অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে।

সাল্লিরা কলম্বিয়ান বংশোদ্ভূত। তার মা কারোল হারনান্দেজ, বাবা সেবাস্তিয়ান আরানগো। ১৮ মাসের আরেক সন্তানসহ নতুন আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন হারনান্দেজ-আরানগো দম্পতি। তাঁরা ভারী ব্যাগ টানতে টানতে একটি অভিবাসনপ্রক্রিয়ার কেন্দ্রের দিকে চলে যান।

বৃষ্টি ও হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্যেই তাঁদের ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে টানা বৃষ্টির কারণে ব্রুকলিনে তাঁবুতে থাকা দুই হাজার মানুষকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাঁবুতে থাকা কিছুসংখ্যক অভিবাসীকে ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ড থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ৯ জানুয়ারি, ২০২৪

ভেনেজুয়েলার নাগরিক ২২ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলো চিরিনো গত নভেম্বরে স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানকে নিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘৬০ দিন খুব বেশি সময় নয়...কাজের অনুমতি কিংবা থাকার জন্য সাময়িক অনুমতি-সংক্রান্ত (টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস) আইনি কাগজপত্র ঠিক করতে আরও বেশি সময় লাগবে।’
এই অভিবাসন সংকটের শুরু প্রায় দুই বছর আগে। এর পর থেকে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিউইয়র্কে এসেছেন।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস মানুষের এই ঢেউ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। যেসব কোম্পানির বাসে করে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা শহরটিতে ভিড় জমাচ্ছেন, সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর আবাসনের খরচ বাবদ ৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

মেয়র ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও অর্থসহায়তা চেয়েছেন। তিনি চান, অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষদের জন্য যেন কাজের অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়া আগের চেয়ে সহজ হয়।

নিউইয়র্ক সিটি ঐতিহাসিকভাবেই উদার শহর হিসেবে পরিচিত। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কেউ আবাসনের জন্য আবেদন জানালে তাঁকে আবাসন দেওয়া হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র শহর, যেখানে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।

বুধবার সাল্লির মতোই একই ভোগান্তিতে পড়েন ব্লাঙ্কা নামের এক নারী। ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী মধ্য আমেরিকার নাগরিক। হোটেলের আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁর থাকার অনুমতি শেষ হয়ে গেছে। এখন তাঁকেও নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে হচ্ছে।

এএফপিকে কাঁদতে কাঁদতে ব্লাঙ্কা বলেন, তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সেদিন স্কুলে যেতে পারেনি। কারণ তার আশঙ্কা, ক্লাস শেষ হওয়ার পর হয়তো তার মাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

নতুন নীতিমালার সমালোচনাকারীরা বলছেন, কম বয়সীদের ওপর নতুন আবাসনবিধির প্রভাব বেশি পড়বে। কারণ, আশ্রয়কেন্দ্র পরিবর্তনের পাশাপাশি তাদের স্কুলও পরিবর্তন করতে হয়।

ব্লাঙ্কা তাঁর নামের শেষ অংশ প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁর সন্তানদের একজনের বয়স এক বছরের কম। তিনি বলেন, থাকার জায়গা ও আশ্রয় পেতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন নয়, সেগুলো তৈরি করতে সহযোগিতা করার মতো কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। কাজ না থাকায় আইনজীবীর খরচ জোগানোর মতো সামর্থ্য নেই বলেও দাবি তাঁর।
ব্লাঙ্কা বলেন, ‘কাজ পেলে আমি আমাদের মেয়েদের খরচ জোগাতে পারব।’

ব্লাঙ্কা যখন এএফপির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো তিনি জানেন না যে মেয়েদের নিয়ে শীতের রাতে তিনি কোথায় ঘুমাবেন। হয়তো যে হোটেল থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানকারই একটি ক্যাম্প বেডে সবাইকে একসঙ্গে জড়সড় হয়ে থাকতে হবে কিংবা প্রশাসনিক কেন্দ্রের কোনো চেয়ারে রাত কাটাতে হবে।

অভিবাসনপ্রত্যাশী অনেক একা মা বা একা বাবার মতো করেই ব্লাঙ্কাকেও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এগুলো হলো তাঁদের কোনো টাকা নেই, তাঁরা ইংরেজি বলতে পারেন না। সন্তানদের দেখার মতো কেউ না থাকায় তাঁরা কাজও করতে পারেন না।

তবে সেদিক থেকে অনেকটাই ভাগ্যবান নিকারাগুয়ার সান্দ্রা গোমেজ। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একটি হোটেলে থাকার পর তিনি কাজ করার অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) পেয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে স্বামী ও ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে নিউ জার্সিতে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছেন। আরও চারটি পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে তারা সে বাসায় থাকছেন।

হাসিমুখে গোমেজ বলেন, ‘এখন আমাকে কাজ খোঁজার জন্য বাইরে বেরোতে হবে।’