Thank you for trying Sticky AMP!!

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি জায়ান্ট রেডউডগাছ

বিশ্বের সবচে বড় রেডউড কোন দেশে বেশি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাছ জায়ান্ট রেডউড। এগুলোর মূল জন্মস্থল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া। প্রায় ১৬০ বছর আগে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে জায়ান্ট রেডউডগাছ যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। নতুন এক গবেষণা বলছে, এখন ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়েও যুক্তরাজ্যে এ গাছের সংখ্যা অনেক বেশি।

ব্রিটিশ গবেষকেরা বলছেন, এখন যুক্তরাজ্যে এ ধরনের বিশালাকার গাছের সংখ্যা পাঁচ লাখ। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় এমন গাছ আছে ৮০ হাজার।

তবে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে যুক্তরাজ্যের গাছগুলো এখনো ক্যালিফোর্নিয়ার গাছগুলোকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। ক্যালিফোর্নিয়ায় এসব গাছ ৯০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে যুক্তরাজ্যে এসব গাছের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকায় গাছের উচ্চতা ৫৪ দশমিক ৮৭ মিটার।

এর একটি কারণও আছে। যুক্তরাজ্যের গাছগুলোর বয়স এখনো অনেক কম। জায়ান্ট রেডউডগাছের আয়ু ২ হাজার বছরের বেশি। সেদিক থেকে যুক্তরাজ্যের গাছগুলোর বেড়ে ওঠার জন্য আরও অনেক সময় আছে।

জায়ান্ট রেডউডসগাছ প্রথম যুক্তরাজ্যে আনা হয় ভিক্টোরীয় যুগে। তখন এগুলোকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সাধারণত সম্পদশালীদের বাসভবন এলাকায় এ ধরনের গাছ রোপণ করা হয়েছিল। তবে এখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এর অস্তিত্ব চোখে পড়ে।

কীভাবে বিশালাকারের গাছগুলো যুক্তরাজ্যে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তা জানতে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য নমুনা হিসেবে ওয়েকহার্স্ট, আরগিলশায়ারের বেনমোর বোটানিক গার্ডেন, স্কটল্যান্ড এবং এসেক্সের হ্যাভারিং কান্ট্রি পার্কের প্রায় পাঁচ হাজার গাছকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছিল।

কিছুসংখ্যক গাছের উচ্চতা ও আয়তন মাপতে তাঁরা লেজার স্ক্যানার ব্যবহার করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় গাছ না কেটে মাপজোখ করা যায়।

গবেষকেরা দেখেছেন, জন্মস্থান সিয়েরা নেভাদার পার্বত্য এলাকায় গাছগুলো যে গতিতে বেড়ে ওঠে, সে একই গতিতে এগুলো বেড়ে উঠছে। গবেষক ফিল উইলকেস বলেন, গাছগুলোকে দেখে মনে হয়েছে এগুলো যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এগুলো যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় বেড়ে ওঠে, তখন এগুলো সেখানে আপনাদের ধারণার চেয়েও বেশি শীতল ও আর্দ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠে। আমাদের এখানকার জলবায়ু পরিস্থিতি একই রকমের। এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত আর্দ্র। আর বেড়ে ওঠার জন্য এগুলোর (জায়ান্ট রেডউড) আর্দ্রতা প্রয়োজন হয়।’

যুক্তরাজ্যের একটি পার্কে জায়ান্ট রেডউডগাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন

এসব গাছ কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে তা নিয়েও পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গবেষকেরা দেখেছেন, বিশালাকৃতির এসব গাছ বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার গাছগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণ কার্বন শোষণ করছে।

গবেষক উইলকেস বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ওয়েকহার্স্টের গাছগুলোর উচ্চতা প্রায় ৪৫ মিটার। এসব গাছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সঞ্চিত থাকতে দেখা গেছে। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার গাছে দেখা গেছে প্রায় ২৫০ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সঞ্চিত। আর এ গাছগুলো অনেকটাই ছোট। তবে আপনারা জানেন এগুলো বড় হতে পারে।’

ক্যালিফোর্নিয়াতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক আশ্চর্যের জায়গাগুলো হুমকির মধ্যে আছে। উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন দাবানলের ঘটনা ঘটছে।

এ গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জায়ান্ট রেডউডের বন তৈরি করার মধ্য দিয়ে বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উল্লেখজনক মাত্রায় কমে যাবে—বিষয়টা এমন নয়। তবে বিভিন্ন গাছের পাশাপাশি এটিকে রোপণ করা হলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এটি ভূমিকা রাখতে পারে।