Thank you for trying Sticky AMP!!

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

ট্রাম্প-বাইডেন দ্বৈরথে মেনথল সিগারেট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সবকিছু ঠিক থাকলে এতে মুখোমুখি হবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবাক করা বিষয়, ট্রাম্প-বাইডেনের এ দ্বৈরথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠেছে সিগারেট। আরও স্পষ্ট করে বললে, মেনথলযুক্ত সিগারেট।

আফ্রিকান-আমেরিকানদের কাছে মেনথলযুক্ত সিগারেট বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু জো বাইডেন প্রশাসন এ সিগারেট নিষিদ্ধ করতে চাইছে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়ে আলাপ-আলোচনাও চলছে। আর এ আলোচনা নির্বাচনের বছরে এসে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।

বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক হিসেবে পরিচিত আফ্রিকান আমেরিকানরা। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের এমন উদ্যোগে তাঁদের অনেকেই বেশ বিরক্ত। তাই মনে করা হচ্ছে, এমন উদ্যোগ বাইডেনের ভোটের বাক্সে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

সাউথ ক্যারোলিনায় ‘বিল্ডিং আমেরিকাস ফিউচার’ নামের একটি রক্ষণশীল গোষ্ঠী গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৭৫ হাজার ডেমোক্র্যাট ভোটারের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তাঁরা অঙ্গরাজ্যটির প্রাইমারিতে জো বাইডেনকে ভোট না দিতে আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে মেনথলযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধ করতে বাইডেনের উদ্যোগের কথা বলা হয়।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তামাক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাব বিস্তারকারী গোষ্ঠীর মনোভাব ভয় জাগিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা দেশটিতে পুলিশিং ও বর্ণবাদের বিস্তার ঘটাতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের বছরে এসে রিপাবলিকান পার্টি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মন জয়ে এ বিষয়টি ব্যবহার করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ২০২২ সালে একটি খসড়া পরিকল্পনার কথা জানায়। এতে বিশেষ গন্ধযুক্ত তামাক উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধের কথা জানানো হয়। এফডিএর মতে, এর ফলে ভবিষ্যৎ ধূমপায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন। আর যাঁরা ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন, তাঁদেরও উপকার হবে।

গত বছরই কেন্দ্রীয় এই নিয়ম কার্যকর করার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছিলেন বাইডেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমন ভাবনা থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত সেটার বাস্তবায়ন ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে তামাকবিরোধী প্রচারণাকারীদের আশঙ্কা, নিয়মটি হয়তো এখন আর কার্যকর করা হবে না।

শ্বেতাঙ্গ ধূমপায়ীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ ধূমপায়ীরা মেনথলযুক্ত সিগারেট বেশি কেনেন। তাই দেশটিতে তামাকশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেরই ধারণা, বাইডেন প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ ধূমপায়ীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে।

নির্বাচনের বছরে এসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ পর্যন্ত এটা নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন, তা অনিশ্চিত। কিন্তু এমন বিলম্বের কড়া সমালোচনা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কেননা এফডিএর তথ্য জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ ধূমপানসংক্রান্ত অসুস্থতায় মারা যায়।  

আফ্রিকান-আমেরিকান ধূমপায়ীদের ১০ জনের ৮ জনই মেনথল সিগারেট কিনেন। এসব সিগারেট দিয়ে ধূমপান করেন। অন্যদিকে প্রতি ১০ জন শ্বেতাঙ্গ ধূমপায়ীর মাত্র ৩ জন মেনথলযুক্ত সিগারেট দিয়ে ধূমপান করেন।

বাইডেন প্রশাসনের এমন উদ্যোগের ঘোর বিরোধী নাগরিক অধিকারবিষয়ক কর্মী আল শার্পটন। ২০১৯ সালে এক আয়োজনে তিনি বলেছিলেন, ‘ধূমপান আপনার জন্য ভালো কিছু নয়। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু যদি স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা বলা হয়, তাহলে আপনারা কেন সব ধরনের সিগারেট নিষিদ্ধ করছেন না?’

Also Read: আবার বাইডেন-ট্রাম্প লড়াই

বাইডেন প্রশাসন মেনথলযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধ করতে চাইছে

এফডিএর প্রস্তাব নিয়ে হোয়াইট হাউসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন আল শার্পটন। চিঠিতে তিনি লিখেন, মেনথলযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধ করা হলে তা মার্কিন সমাজে বর্ণ অনুযায়ী চিহ্নিত করা, বৈষম্য ও পুলিশিং নিয়ে বিদ্যমান উত্তপ্ত সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, গত বছর নিউইয়র্কে এমন একটি রাজ্যপর্যায়ের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব উঠেছিল। তার বিরুদ্ধে চিঠিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন বিখ্যাত এ অধিকারকর্মী।

এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রিপাবলিকানরা ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন।

সাউথ ক্যারোলিনায় ‘বিল্ডিং আমেরিকাস ফিউচার’ নামের একটি রক্ষণশীল গোষ্ঠী গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৭৫ হাজার ডেমোক্র্যাট ভোটারের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তারা অঙ্গরাজ্যটির প্রাইমারিতে জো বাইডেনকে ভোট না দিতে আহ্বান জানায়। কারণ হিসেবে মেনথলযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধ করতে বাইডেনের উদ্যোগের কথা বলা হয়।

Also Read: আমি না জিতলে রক্তগঙ্গা বইবে, হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

এ নিয়ে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে বিল্ডিং আমেরিকাস ফিউচার। তাতে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা কী করতে পারেন, আর কী পারেন না, সেসব নিয়ে কথা না বলে বাইডেনের উচিত আরও বড় অগ্রাধিকারে মনোযোগ দেওয়া।  

মার্লবোরোসহ জনপ্রিয় কয়েকটি  ব্র্যান্ডের সিগারেটের মালিক প্রতিষ্ঠান আলট্রিয়া গত বছর একটি জরিপ চালায়। ওই জরিপেও উঠে আসে, মেনথলযুক্ত সিগারেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ভোটের মাঠে সংখ্যালঘু ভোটাররা জো বাইডেনের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারেন।

যদিও অন্যান্য জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার এ–সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছেন।

নির্বাচনের বছরে এসে প্রেসিডেন্ট বাইডেন শেষ পর্যন্ত এটা নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন, তা অনিশ্চিত। কিন্তু এমন বিলম্বের কড়া সমালোচনা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কেননা এফডিএর তথ্য জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ ধূমপানসংক্রান্ত অসুস্থতায় মারা যায়।  

Also Read: ‘যেকোনো সময়ে, যেকোনো জায়গায়’ বাইডেনকে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের

এ বিষয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এমিলি হলুবোউইচ বাইডেনের উদ্দেশে বলেন, আপনি নির্বাচনের যত কাছাকাছি আসবেন, কঠিন জিনিসগুলো ততই নিকটে আসবে। তবে এটা করা সঠিক। ইতিহাস আপনার পক্ষে আছে। জনস্বাস্থ্য আপনার পক্ষে আছে।

নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন এনএএসিপির প্রেসিডেন্ট ড্যারিক জনসন মেনথলযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধের পক্ষে। হোয়াইট হাউসের প্রতি তাঁর আহ্বান, বিজ্ঞান, গবেষণা ও আফ্রিকান-আমেরিকানদের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
এর আগে ২০২০ সালে মেনথলযুক্ত সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়।

Also Read: ঘরে-বাইরে গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে: বাইডেন