Thank you for trying Sticky AMP!!

ডোনাল্ড ট্রাম্প

মসনদ হারালেও আলোচনায় ট্রাম্প

ক্ষমতার মসনদ ছেড়েছেন প্রায় দুই বছর হতে চলল। কিছুটা ‘পাগলাটে’ স্বভাবের কারণে ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি ক্ষমতার পুরোটা সময় ছিলেন ব্যাপক আলোচনায়। গদি ছাড়লেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। কারণ, তিনি আলোচনার রেশ রেখে গেছেন সেই একুশে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এই প্রেসিডেন্টের বয়স এখন ৭৭। কেন তাঁকে নিয়ে একুশের রেশের কথা বলা হচ্ছে, তা এতক্ষণে আঁচ করা গেছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) হামলার পেছনে তাঁর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে ধারণা করা হয়। খোদ তাঁর রিপাবলিকান পার্টির অনেক আইনপ্রণেতাও তা–ই মনে করেন। সর্বশেষ কংগ্রেশনাল কমিটির ৯ সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে ওই ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজধারি অভিযোগের সুপারিশ করেছেন। ৯ সদস্যের ওই কমিটিতে সাতজন ডেমোক্র্যাট সদস্য। বাকি দুজন রিপাবলিকান।

একুশের কমিটির বার্তা

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হন। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেনের জয়ের সত্যায়নে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বসে। সত্যায়ন প্রক্রিয়া ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা কংগ্রেস ভবনে সহিংস হামলা চালান। এতে পুলিশসহ কয়েকজন নিহত হন।

ওই ঘটনা তদন্তে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এই কমিটি গঠন করে। কমিটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে ১৮ মাস সময় নিয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে ওই ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে চারটি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। কমিটির সবাই এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় একজনকে আটক করছে পুলিশ
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা

চার অভিযোগের মুখে ট্রাম্প

কংগ্রেস কমিটির সদস্যরা বলছেন, চারটি অভিযোগে ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাঁদের হাতে। বিষয়গুলো হলো দাপ্তরিক কার্যক্রমে বাধা, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্র, মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং উগ্র বিক্ষোভকারীদের প্ররোচনা, সহায়তা ও প্রশ্রয় দেওয়া।

কংগ্রেস কমিটির ভাষ্য, ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সহিংস ওই হামলায় প্ররোচনা দেন। এটি করতে গিয়ে তিনি একাধিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। ক্যাপিটলে কোনো ঘটনাই তাঁর প্ররোচনা ছাড়া ঘটত না।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলা চলাকালে এক ট্রাম্প সমর্থক
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের তৎপরতা
২০২১ সালের ৬জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনের সামনে ট্রাম্প সমর্থকেরা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
ক্যাপিটলের ভেতর ট্রাম্প সমর্থকেরা। ৬ জানুয়ারি, ২০২১
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
ক্যাপিটলের ভেতর ট্রাম্পের সমর্থকেরা। ৬ জানুয়ারি, ২০২১
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতা
ক্যাপিটলের ভেতর এক ট্রাম্প সমর্থক। ৬ জানুয়ারি, ২০২১
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল) ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা
ক্যাপিটলের ভেতর এক ট্রাম্প সমর্থক। ৬ জানুয়ারি, ২০২১
ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা কাভার করছেন সংবাদ কর্মীরা
ক্যাপিটলে হামলার পর ভবনের ভেতরে এক ট্রাম্প সমর্থক। ৬ জানুয়ারি, ২০২১

কমিটির সুপারিশ

ট্রাম্প যাতে ভবিষ্যতে আর সরকারি কোনো পদে বসতে না পারেন, সে সুপারিশ করেছে কংগ্রেস কমিটি। এর মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে।

কমিটি বলেছে, ক্যাপিটলে হামলার বিষয়টি ট্রাম্প নিজেই উসকে দিয়েছেন। তাঁরা ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর ট্রাম্পের করা একটি টুইট বার্তা সামনে এনেছেন, যাতে তিনি বলেছিলেন, ‘৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে যোগ দিন, বেপরোয়া হয়ে উঠুন।’

তদন্ত কমিটি সুপারিশ আরও বলছে, নির্বাচনে কারচুপি, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা ছাড়াও আরেকটি কাজ করেছিলেন ট্রাম্প। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে নির্বাচনের ফল বদলে দিতে চাপ দিয়েছিলেন।

তবে যত আলোচনাই হোক না কেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গার ঘটনাই যে ট্রাম্পকে দুই বছরের মাথায়ও আলোচনায় রাখছে, তা স্বীকার করতেই হবে। এই আলোচনা এখনই থামছে না। একুশের রেশ চলবে অন্তত ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

‘সংকেত মাত্র’

কংগ্রেস কমিটি যে অপরাধের জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছে, যদি তাতে তিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁর কয়েক হাজার ডলার জরিমানা, ২০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ হতে পারেন।
কংগ্রেস কমিটি তাদের ভোটের মাধ্যমে মূলত বিচার বিভাগের কাছে আইনি সুপারিশ করেছেমাত্র। তারা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে, তা-ই এ সুপারিশের মধ্য দিয়ে তারা তুলে ধরেছে। তারা প্রায় দুই বছর ধরে বিভিন্ন তথ্য ও নথি জোগাড় এবং যাচাইয়ের মাধ্যমে অভিযোগের অনুকূলে একটি ভান্ডার তৈরি করেছে। তবে বিচার বিভাগ এসব নথিপত্র কীভাবে আমলে নেবে, তা কমিটির নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

ট্রাম্পের আইনি সমস্যা

কমিটির সুপারিশের সামান্য আইনি ওজন থাকতে পারে। বিচার বিভাগ ইতিমধ্যে ট্রাম্পের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্ত করছে।  

ফেডারেল অ্যাটর্নিদের নিয়ে গঠিত একটি জুরিবোর্ড ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন এবং তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার কয়েক ডজন কর্মকর্তাকে ডেকেছে। ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন—তিনি ইতিমধ্যে এমন ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্য গত মাসে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য জ্যাক স্মিথ নামের একজন বিশেষ পরামর্শদাতাও নিয়োগ করেছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে সাতটি রাজ্যের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে বিতর্কিত করতে ট্রাম্প বা তাঁর উপদেষ্টারা এসব ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

ক্যাপিটল হামলাই ট্রাম্পের একমাত্র আইনি উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ, জ্যাক স্মিথ ট্রাম্পের মার-এ-লাগো এস্টেট নিয়ে তদন্তও করছেন। জর্জিয়ার একজন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলাও রয়েছে।

রাজনৈতিক পতন

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তাঁকে আবার ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব ফৌজদারি ও দেওয়ানি অভিযোগের তদন্ত চালানো হচ্ছে।

আইনি ও তদন্তপদ্ধতি যা–ই হোক, ট্রাম্পের জন্য পুরো বিষয়টি নেতিবাচকই। কারণ, এটি দিন দিন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে শিরোনাম হবে। এসব মার্কিনদের ৬ জানুয়ারির সহিংসতার কথা মনে করিয়ে দেবে।

ইতিমধ্যে রাজনীতির মাঠে ট্রাম্পের অবস্থান আরও নড়বড়ে হয়েছে—এমন আভাস পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক জরিপগুলোর তথ্য বলছে, রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে, তিনি দলীয় প্রাথমিক বাছাই দৌড়ে ৪৪ বছর বয়সী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসের চেয়ে পিছিয়ে গেছেন।

১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন রন ডিস্যান্টিস। ইউএসএ টুডে ও সাফোক ইউনিভার্সিটি ওই জরিপ চালিয়েছিল। পিছিয়ে পড়ার এই বিষয়কে ট্রাম্পের অহংবোধের প্রতি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে একই সময় পরিচালিত মর্নিং কনসাল্টের আরেকটি জরিপ বলছে, ডিস্যান্টিসের চেয়ে ট্রাম্প ১৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া ফাইভথার্টিএইট এখন পর্যন্ত অধিকাংশ জনমত জরিপে ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছে।

আয়কর ফাঁকি

ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ট্রাম্পের কোনো আয় হয়নি বলে রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছে। সে কারণে ওই বছর আয়করও দেননি ট্রাম্প-মেলানিয়া দম্পতি।

বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, শুধু আয়কর ফাঁকিই নয়, ক্ষমতার প্রথম দুই বছরে ট্রাম্প আয়কর নিরীক্ষার সম্মুখীন হননি; যদিও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের আয়কর ফাইল পর্যালোচনার নিয়ম আছে। টানা চার বছর আইনি লড়াই চালানোর পর সম্প্রতি ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের আয়কর নথি প্রকাশের রায় পেয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প

প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প সেই সময় আয়কর দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ট্রাম্পের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে দেখিয়ে তাঁরা কয়েক বছর আয়কর কম দিয়েছেন। এ ছাড়া নানা ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে ট্রাম্প কম আয়কর দেন। হোয়াইট হাউসের হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটি এরই মধ্যে ৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কর অব্যাহতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্পের আয়কর রিটার্নে বিস্তারিত বিবরণ নেই।

নথি অনুসারে, ২০১৮ সালে ট্রাম্প-মেলানিয়া দম্পতির সমন্বিত মোট আয় ছিল ২৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। সেবার তাঁরা প্রকৃত আয়কর পরিশোধ করেছেন ১০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে তাঁরা আয় দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ ডলার এবং আয়কর পরিশোধ করেছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ডলার। এই দুই বছর তাঁরা আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে তাঁরা ক্ষতি দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সে বছর তাঁরা আয়কর দিয়েছেন মাত্র ৭৫০ ডলার। ২০২০ সালে তাঁরা এক ডলারও আয়কর দেননি।

গোপন নথি জব্দ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়ি মার-আ-লাগো

চলতি বছরের জানুয়ারিতে এফবিআই ট্রাম্পের মার-এ-লাগোর বাড়ি থেকে ১৫টি বাক্সভর্তি হোয়াইট হাউসের গোপন নথি জব্দ করে। গত আগস্টে আরও ২০ বাক্স গোপন নথি উদ্ধার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অভিযোগ, ক্ষমতা ছাড়ার সময় ট্রাম্প অবৈধভাবে সব মিলে ১১ সেট গোপন নথি হোয়াইট হাউস থেকে নিয়ে গেছেন। তবে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের বাড়ি থেকে এফবিআইয়ের উদ্ধার করা জিনিসের মধ্যে রয়েছে ২০টি বাক্স, ফটো বাইন্ডার এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক পরামর্শদাতা রজার স্টোনের পক্ষে লেখা একটি চিঠি। এ ছাড়া ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কে লেখা একটি নথি উদ্ধার করা হয়েছে।

দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্প অর্গানাইজেশন

কর ফাঁকির মামলায় দোষী সাব্যস্ত  হয়েছে ট্রাম্পের পারিবারিক আবাসন কোম্পানি। ৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্কের একটি আদালত ট্রাম্প অর্গানাইজেশনকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
এতে কোম্পানিটিকে ১৬ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হতে পারে। ভবিষ্যতে ঋণপ্রাপ্তি ও অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি সমস্যায় পড়তে পারে। মামলায় আগামী ১৩ জানুয়ারি দণ্ড ঘোষণা করবেন বিচারক।

ট্রাম্পেরও আছে জয়

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের টুইটার হ্যান্ডেল বন্ধ করা হয়েছিল; যা গত ১৯ নভেম্বর করা এক জরিপের পরিপ্রেক্ষিতে খুলে দেওয়া হয়েছিল। টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্ক ওই জরিপ চালিয়েছিলেন। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলার পক্ষে ভোট দেন। তবে পক্ষ-বিপক্ষের ব্যবধান ছিল অল্প।

ওই ভোটে টুইটারের দৈনিক ২৩ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ ভোট দেন। ৫১.৮ শতাংশ পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে দেন ৪৮.২ শতাংশ।

ট্রাম্পের ‘অভিবাসন নীতি’ বহালে রুল: করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর কথা বলে মেক্সিকো সীমান্তে লাখ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটকে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট আড়াই বছর আগের সে অভিবাসন নীতি বহাল রাখতে গত ২৭ ডিসেম্বর একটি রুল জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির ৫ জন রুলের পক্ষে ভোট দেন। অবশ্য মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে যেসব বিচারপতি আছেন, তাঁদের বেশির ভাগ রিপাবলিকান মনোনীত।

ট্রাম্পের আমলে কার্যকর করা অভিবাসনবিষয়ক বিতর্কিত সেই নীতি বহাল রাখতে সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ আসায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়ল। কারণ, অভিবাসন নিয়ে এই নীতি বাতিল হচ্ছে বলে ধারণা ছিল জো বাইডেন প্রশাসনের।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রণীত এই নীতির নাম ছিল ‘টাইটেল ৪২’। ওই নীতির আওতায় সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে দেওয়ার কর্তৃত্ব পায় সরকার। এমনকি যাঁরা আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য, তাঁদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রুলও স্থগিত থাকবে। এর পরবর্তী শুনানি হবে ফেব্রুয়ারিতে।

একুশের রেশই মুখ্য

তবে যত আলোচনাই হোক না কেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গার ঘটনাই যে ট্রাম্পকে দুই বছরের মাথায়ও আলোচনায় রাখছে, তা স্বীকার করতেই হবে। এই আলোচনা এখনই থামছে না। অন্তত ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রাথমিক বাছাই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এই বিবেচনায় একুশের রেশ চলবে অন্তত ২০২৪ সাল পর্যন্ত।


মো. ছানাউল্লাহ, প্রথম আলোর সহসম্পাদক