মহাকর্ষ ও গ্র্যাভিটন

মহাকর্ষ বল আবিষ্কার হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে। স্যার আইজ্যাক নিউটন এর আবিষ্কারক। বলতে গেলে পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিই দাঁড় করিয়ে দেয় এই সূত্র। নিউটন বলেছিলেন, মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। সেই আকর্ষণ বলের মান কেমন হবে সেটাও নিউটন হিসাব করে দেখিয়ে দেন। তিনি বলেন, দুটো বস্তুর ভর যত বেশি হবে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বল তত বেশি হবে। আবার বস্তু দুটোর মধ্যে দূরত্ব যত কম হবে, আকর্ষণ বলও তত বেশি হবে। আর দূরত্ব বাড়লে, আকর্ষণও তত বাড়বে। কিন্তু নিউটন বলতে পারলেন না, কেন বস্তু দুটোর মধ্যে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করবে?

আলবার্ট আইনস্টাইন বললেন ভিন্ন কথা। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে তিনি মহাকর্ষ বলের কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। এ তত্ত্বমতে, মহাকর্ষ বলের জন্য বস্তুর ভর দায়ী নয়। গোটা মহাবিশ্ব আসলে স্থান-কালের একটা চাদর হিসেবে কল্পনা করে নেওয়া যায়। সেই চাদরের ওপর বসে আছে মহাজাগতিক বস্তুগুলো। এর ফলে স্থান-কালের চাদরে ত্রিমাত্রিক বক্রতা তৈরি হয়। সেই বক্রপথেই তুলনামূলক ছোট বস্তুগুলো বড় বস্তুর দিকে হেলে পড়ে। আর তাতেই মনে হয় বস্তুগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। আইনস্টাইন তাঁর তত্ত্বের প্রমাণও দিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ মহাকর্ষ বল ছাড়াও মহাবিশ্বে আরও তিন প্রকারের মৌলিক বল আছে। তড়িত্-চুম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও সবল নিউক্লিয় বল। এর মধ্যে দুটি চার্জিত বস্তুকণার মধ্যে যে বল কাজ করে, তা তড়িত্-চুম্বকীয় বল। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতর মৌলিক কণিকাগুলোর মধ্যে যে স্বল্পপাল্লার বল কাজ করে তা দুর্বল নিউক্লিয় বল। আর দুটি নিউক্লিয়ন, অর্থাত্ প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে যে শক্তিশালী বল কাজ করে, তা সবল নিউক্লিয় বল। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন প্রতিটি বলের পেছনেই একধরনের কণার কারসাজি আছে। যেমন তড়িত্-চুম্বকীয় বলের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ফোটন কণা। দুর্বল নিউক্লিয় বল সৃষ্টির জন্য দায়ী ড ও ত নামের দুটো কণা। আর সবল নিউক্লিয় বলকে বহন করে গ্লুওন কণা। বস্তুকণাগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে ধরে রাখতে এগুলো আসলে অনেকটা আঠার মতো কাজ করে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাকর্ষ বলের পেছনেও একধরনের কণা কলকাঠি নাড়ছে। সেই কণার নাম দেওয়া হয়েছে গ্র্যাভিটন। এ কণাটাই বস্তুর ভেতরে মহাকর্ষ বলের জন্ম দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত গ্র্যাভিটন কণার হদিস পাননি বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন গবেষণাগারে এখন গ্র্যাভিটন কণা খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যাক, কী হয়।

লেখক: সাংবাদিক