LHC পেলাম কেমন করে?

২০১২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার সার্ন (ঈঊজঘ) গবেষণাগারে হিগস বোসন কণা শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকেই এ দেশের সবার মধ্যে সার্ন ও মৌলিক কণা সম্পর্কে আগ্রহ বহুগুণে বেড়েছে। ১৯৫০-এর দশকে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ গবেষণাগারের নাম নানা মৌলিক ও প্রাযুক্তিক আবিষ্কারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইন্টারনেটের ভিত্তি যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (world wide web), সংক্ষেপে যাকে www বলি, তার শুরু এই সার্নের কম্পিউটার ল্যাবগুলোতেই। আবার মোবাইল ও ট্যাবের টাচস্ক্রিনের প্রথম কার্যকর মডেলটি সার্নের পরীক্ষাগারেই তৈরি হয়েছিল। তবে এ ল্যাবের কাজ ম–লত মৌলিক কণা আর নিউক্লিয় বিক্রিয়া নিয়েই। কিন্তু একে সফল করতে গিয়েই এখানকার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা প্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও উদ্ভাবন ও গবেষণা চালান। সার্নে অনেক ধরনের পরীক্ষা হলেও এর সবচেয়ে বড় যন্ত্র, Large Hadron Collider (LHC) সবচেয়ে পরিচিত। প্রোটনকে গুচ্ছাকারে উচ্চশক্তিতে পরিচালিত করা এ যন্ত্রটির ম–ল কাজ। কিন্তু পরীক্ষণের এ পর্যায়ে আসতে এ ল্যাবের বিজ্ঞানীদের প্রায় ৬০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে মৌলিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা বেশ পিছিয়ে পড়ে। সব নিউক্লিয় গবেষণা মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হয়ে পড়ে। এ সীমাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে ও ইউরোপে আবারও নিউক্লিয়ার গবেষণা শুরুর জন্য বিজ্ঞানীরা এক যৌথ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। সমন্বিত এই কার্যক্রম চালুর জন্য ১৯৫২ সালে গঠিত হয় এক পরিষদ। এর ফরাসি নাম Conseil Européen pour la Recherche Nucléaire। যার আদ্যক্ষর নিয়ে ১৯৫২ সালে জন্ম নেয় CERN। পরে প্রতিষ্ঠানটির ফরাসি নাম পরিবর্তিত করে (ইংরেজিতে: European Organization for Nuclear Research) করা হলেও এর সংক্ষিপ্ত রূপটি অপরিবর্তিতই রাখা হয়। কারণ, তত দিনে CERN একটি সুপরিচিত নাম।

অতিসরলীকরণ করলে বলা চলে, আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2-এর ওপর ভিত্তি করেই সার্নের মূল গবেষণা চলে। অর্থাৎ E পরিমাণ শক্তি ব্যয় করলে m ভরের মৌলিক কণা তৈরি করা সম্ভব। এ ধারণার প্রমাণ মেলে পরীক্ষাগারে কণা-প্রতিকণা তৈরির মাধ্যমে। ১৯২৮ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী পল ডিরাক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মধ্যে বিশেষ আপেক্ষিকতাকে জুড়তে গিয়ে দেখেন, প্রতিটি কণার (চার্জযুক্ত) একটি প্রতিকণা থাকবে। প্রথমে ডিরাক ইলেকট্রনের এই প্রতিকণাকে প্রোটন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু পরে এটি নতুন মৌলিক কণা হিসেবে গণ্য হয়, যা বর্তমানে পজিট্রন নামে পরিচিত। কারণ, কণা ও প্রতিকণার উভয়েরই ভর সমান হতে হবে—ডিরাকের তত্ত্ব তা-ই বলে। প্রোটনের চার্জ ইলেকট্রনের বিপরীত হলেও ভর পুরোপুরি ভিন্ন। ১৯৩২ সালে কসমিক রশ্মি নিয়ে গবেষণার সময় কার্ল অ্যান্ডারসন চিত্র-১-এর ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে তার ছবি তোলেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, সিসার মোটা পাত থেকে দুটি কণা বিপরীত দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুরো সেটআপটি চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে রাখা আছে। কণা দুটির চার্জ বিপরীত হওয়ায় চৌম্বকক্ষেত্রে তারা বিপরীত দিকে বেঁকে গেছে। কেউ হয়তো ভাবতে পারত, এটা আসলে একটা কণারই গতিপথ দেখা যাচ্ছে, যা সিসার পাত ভেদ করে গেছে। কিন্তু ইলেকট্রনের গতিশক্তি এতটা বেশি নয় যে তা সিসার পাত ভেদ করতে পারে। তাই শুধু কণা-প্রতিকণার যুগল তৈরির মাধ্যমেই এ গতিপথের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। এই প্রতিকণা শনাক্তকরণের জন্য কার্ল অ্যান্ডারসন ১৯৩৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। বলে রাখা ভালো, তাঁকে শুধু ছবি তোলার জন্য নয়, ঘটনার সফল ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যও পুরস্কারটি দেওয়া হয়।

সে সময় এই কণা-প্রতিকণা যুগল তৈরির জন্য কসমিক রশ্মির ওপর নির্ভর করতে হতো। কারণ, গবেষণাগারে নতুন মৌলিক কণা তৈরির মতো যথেষ্ট গতিশীল কণা তৈরি করা যেত না। কারণ, আলোর বেগ c-এর মান অনেক বেশি। তাই বেশি ভরের কণা সৃষ্টি করতে হলে এমন প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়, যেখানে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী কণাগুলোর গতিশক্তির মান অনেক বেশি। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করা যেতে পারে, শিশুর হাতে ছোড়া একটা ইটের টুকরার গতিশক্তির মান একটি প্রোটনের গতিশক্তির তুলনায় অনেক অনেক বেশি। তাহলে আমরা নিত্যদিনের ঘটনার মাধ্যমে কেন শূন্য থেকে নতুন নতুন মৌলিক কণা তৈরি করতে পারি না? এটা বুঝতে হলে মনে রাখতে হবে, একটা ইটের টুকরোয় একটি-দুটি ইলেকট্রন বা প্রোটন থাকে না। বরং সেখানে অ্যাভোগ্যাড্রোর সংখ্যার কাছাকাছি (১০২৩) সংখ্যক অণু থাকে। তাহলে ইটের ভেতরের প্রতিটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের গতিশক্তির মান তুলনাম–লকভাবে অনেক কম। আরেকভাবে চিন্তা করলে বলা যায়, প্রতিটি কণার বেগ আলোর কণার তুলনায় অনেক অনেক কম। চিত্র-২-এ বিশেষ আপেক্ষিকতায় বেগের সঙ্গে কীভাবে গতিশক্তির পরিবর্তন হয়—তা দেখানো হয়েছে। এটা থেকে দেখা যাচ্ছে, কণার বেগ আলোর বেগের কাছাকাছি এলে অতি দ্রুত তার গতিশক্তি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে, মৌলিক কণার বেগ বাড়ানো। এ কাজটার জন্য বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। একে বলা হয় কণা ত্বরক যন্ত্র। এ রকম কণা ত্বরক মূলত দুই প্রকারের, রৈখিক ও বৃত্তাকার। বলে রাখা ভালো, মৌলিক কণার ত্বরণ ঘটাতে হলে কণার ওপর বল প্রয়োগ করতে হবে। একমাত্র যে বল কার্যকরভাবে মৌলিক কণার ওপর বের হতে মৌলিক কণার ওপর প্রয়োগ করতে পারি তা হচ্ছে, তড়িেচৗম্বকীয় বল। এটা শুধু বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণায় প্রয়োগ করা যায়। এ কারণে চার্জহীন নিউট্রন বা নিউট্রিনোর জন্য কোনো কণা ত্বরক নেই। এ রকম চার্জহীন কণার বিকিরণ রশ্মি পেতে হলে বিশেষ মৌলের নিউক্লিয়াসকে টার্গেট বানিয়ে প্রোটনের রশ্মি (beam) দিয়ে আঘাত করতে হয়।

নিউক্লিয়ার জগতে শক্তি পরিমাপের জন্য শক্তির একক ইলেকট্রন-ভোল্ট ব্যবহৃত হয়। এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের গতিশক্তি যে পরিমাণ বৃদ্ধি হয়, তাকে এক ইলেকট্রন-ভোল্ট বলি। যদি আমাদের সাধারণভাবে ব্যবহৃত একক জুলে (Joule) প্রকাশ করলে ১ ইলেকট্রন-ভোল্ট = ১.৬১ x ১০-১৯ জুল। আপাত নগণ্য মনে হলেও কিন্তু মৌলিক কণার জগতে এই মানটাই ধর্তব্য।

শুধু বৈদ্যুতিক বিভব পার্থক্য ব্যবহার করেই কণার ত্বরণ ঘটানো সম্ভব (চিত্র-৩)। তাই প্রথম দিকে ম–লত রৈখিক ত্বরক উদ্ভাবন ও ব্যবহূত হতো। এর একটা সহজ উদাহরণ হলো ভ্যান ডি গ্রাফ যন্ত্র। এর দুটি ভিন্ন সংস্করণ আছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনে। কিন্তু উচ্চশক্তির নিউক্লিয় কণা পেতে হলে অনেক বেশি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা প্রয়োজন। কারণ, প্রোটন বা অন্য নিউক্লিয়াসের চার্জ পরিবর্তনের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু আমরা যে বস্তু ব্যবহার করেই ত্বরক বানাই না কেন, উচ্চমাত্রার বিভব পার্থক্য নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা সম্ভব নয়। আমরা বৈদ্যুতিক স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গের উদাহরণ হিসেবে হরহামেশাই দেখে থাকি। তা ছাড়া বেশি বিভব পার্থক্য ধরে রাখার জন্য আমাদের যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাও লাগবে। তাহলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী? এ সমস্যার সমাধান করলেন আর্নেস্ট লরেন্স। তিনি ভাবলেন, কণাকে একবারে পুরো একটা বিশাল বিভব পার্থক্যের মাঝ দিয়ে না চালিয়ে যদি তুলনামূলকভাবে কম বিভব পার্থক্যের মাঝ দিয়ে বারবার চালানো হয়, তাহলে কণাটির মধ্যে অল্প জায়গায় বেশি শক্তি সঞ্চালিত করা সম্ভব। ধারণাটাকে শিয়ালের কুমির ছানা দেখানোর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কথিত আছে, লরেন্স সাইক্লোট্রনের ডিজাইনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বাইবেল থেকে। বাইবেলে বর্ণিত আছে, বিশাল বপুধারী পরাক্রমশালী যোদ্ধা গোলিয়াথকে (Goliath) একটি পাথরের আঘাতে পরাস্ত করেছিলেন বালক ডেভিড। এ ঘটনাই অনুপ্রেরণা জুুগিয়েছিল লরেন্সকে। তিনি সাইক্লোট্রন (cyclotron) নামের যন্ত্রটি নির্মাণ করলেন ১৯৩৪ সালে। তাঁর প্রথম মডেলটি ছিল মাত্র চার ইঞ্চি সাইজের, (চিত্র-৪) যার মাধ্যমে আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তির প্রোটন বা নিউক্লিয়াসের রশ্মি তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।

অবশ্য সাইক্লোট্রনের ভেতর প্রোটন (বা অন্য চার্জবিশিষ্ট কণাগুলো) একটি চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে চলমান। এর কাজ হচ্ছে কণাগুলোর পথকে বাঁকানো (অ্যান্ডারসনের পজিট্রন আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও এই ঘটনার ব্যবহার আমরা আগেই দেখেছি)। সাইক্লোট্রনের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, কণার শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়। আবার কণার কক্ষপথটা স্পাইরাল আকারের হয় (চিত্র-৫)। এ কারণে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ধ্রুব চৌম্বকক্ষেত্রের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বিশালাকৃতির চুম্বক বানানো যেমন ব্যয়সাধ্য, তেমন এর ওজনের কারণে প্রকৌশলগত দিক দিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। একটি পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমারের কথা ভাবলেই এ সমস্যাটি বোঝা যাবে। এ কারণে একটা সীমার বেশি শক্তির কণা পাওয়ার জন্য সাইক্লোট্রন ব্যবহার করা যায় না। বিশেষত, আমরা যদি আলোর কাছাকাছি বেগের কণা পেতে চাই। এ ঘটনাগুলো থেকে সহজেই বোঝা যায়, কণা পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষণের সঙ্গে তড়িৎ প্রকৌশল ও যান্ত্রিক প্রকৌশলের একটা নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

সাইক্লোট্রনের সীমাবদ্ধতা এড়ানোর জন্য এবং আরও উচ্চশক্তির কণার প্রবাহ তৈরির জন্য এবার বিজ্ঞানীরা নতুন ডিজাইনে হাত দিলেন। তাঁরা ১৯৬০-এর দশকে নির্ভর করে সিনক্রোটন (Sznchrotron) কণা ত্বরক চালু করেন। এ-জাতীয় মেশিনে কণাগুলো একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে এবং চৌম্বকক্ষেত্রটি শুধু এই কক্ষপথের ওপরই প্রযুক্ত হয়। ফলে মেশিনের আকারের ওপর সাইক্লোট্রনের সীমাবদ্ধটাকে পাশ কাটানো যায়। কণাশক্তির সঙ্গে সঙ্গে কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও, চুম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতাকে একই সঙ্গে পরিবর্তিত করে কণার কক্ষপথটিকে স্থির রাখা হয়। এই মূলনীতিগুলো পুরোনো মনে হলেও বর্তমানে ব্যবহূত LHCও এই চিন্তাধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

LHC-তে যে রকম পরীক্ষণ করা হয়, তা মূলত রাদারফোর্ডের করা পরীক্ষারই আধুনিক সংস্করণ। রাদারফোর্ড তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম থেকে বিকিরিত আলফা কণা দিয়ে সোনার পাতকে আঘাত করান। (চিত্র-৬) পারমাণবিক ঘটনাবলির জন্য আলফা কণার গতিশক্তির মান অনেক বেশি। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন কণা তৈরির মতো শক্তি ধারণ করে না। বিভিন্ন প্রকার কণা ত্বরক (particle accelerator) আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে আমরা আলফা কণার (যা আদতে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস, কোনো মৌলিক কণা নয়) পরিবর্তে প্রোটন অথবা ইলেকট্রন ব্যবহার করি। প্রতিটি আলফা কণায় নিহিত ৩৬০০০০০ ইলেকট্রন-ভোল্ট (Electron-Volt = eV) শক্তি কোনো সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত শক্তির তুলনায় লাখো গুণেরও বেশি। হাইড্রোজেন পরমাণুকে আয়নিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ ১৩ দশমিক ৬ ইলেকট্রন-ভোল্ট! সংখ্যাটি অনেক বড় মনে হলেও এই মুহূর্তে LHC-তে প্রদক্ষিণশীল প্রোটনের শক্তির তুলনায় কিছুই নয়। এই প্রোটনগুলোর গড়শক্তির পরিমাণ 7000000000000 (7x1012) eV বা রাদারফোর্ডের আলফা কণার শক্তির ২০০০০০০ গুণ বেশি। বলাই বাহুল্য, এত বিপুল শক্তি থেকে প্রচুর মৌলিক কণা তৈরি করা যায়। ব্যাপারটা দেয়ালে একটি বল মেরে শব্দ তৈরি করার মতো। বিজ্ঞানীরা এই নবসৃষ্ট মৌলিক কণাগুলোকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন, বল দিয়ে দেয়ালে তৈরি করা শব্দ শোনার মতো। ধরা যাক, যদি আমরা আরও বিকট শব্দ শুনতে চাই, তাহলে একটা বল ও দেয়ালের পরিবর্তে যদি দ্রুত পরস্পর বিপরীত দিকে ধাবমান দুটি ১৬ চাকার ট্রাককে সংঘর্ষ ঘটাই, তাহলে সৃষ্ট শব্দের পরিমাণ অনেক অনেক বেশি হবে।

এ ধরনের ঘটনাই খঐঈ-তে ঘটানো হয়, যেখানে বিপরীতমুখী দুটো প্রোটনের বিম বা রশ্মির সংঘাত করানো হয় (চিত্র-৭)। এই সংঘর্ষে নতুন নতুন মৌলিক কণা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বিজ্ঞানীরা এগুলোকে দেখা ও শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন। আমরা যেমন বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণ রাখার জন্য ছবি তুলি এবং এ কারণে বিভিন্ন প্রকার ক্যামেরা ব্যবহার করি, ঠিক সে রকমই সার্নে চারটি বিশাল বিশাল ডিটেক্টর বা শনাক্তকারী যন্ত্র সমাহার আছে। এগুলো হচ্ছে ATLAS, CMS, ALICE ও LHCb। আশার কথা, বাংলাদেশ বর্তমানে ALICE-এর সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য একটি প্রাথমিক সমঝোতাও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।