কুষ্টিয়া ভ্রমণের কথকতা

কুষ্টিয়া বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (ডানে)
কুষ্টিয়া বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (ডানে)

২১ এপ্রিল কুষ্টিয়া শহরে যখন পৌঁছালাম, তখন বেলা তিনটা। তর সইছে না, তাই একটু বিশ্রাম নিয়েই সোজা চলে গেলাম লালন সাঁইজির কাছে!

লালনের শহরে এসে লালনের আখড়ায় না গেলে যে আসাটাই বৃথা। সাঁইজির আখড়ায় আগে থেকেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বন্ধুসভার ইমাম মেহেদি। লালনের অনুসারীদের কণ্ঠে লালনগীতি শুনলাম, খেলাম কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি। অতঃপর একতারা আর লালনের প্রতিকৃতি কিনে হোটেলে ফেরা।

পরদিন সকালের গন্তব্য কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর এবং তাঁর বাড়ি। সঙ্গে ইমাম মেহেদি। কাঙাল হরিনাথ জাদুঘরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন জাদুঘরের ম্যানেজার আহসানুল হক এবং প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান। ম্যানেজার এসে ভেতরে নিয়ে গেলেন। জাদুঘরে রয়েছে কাঙাল হরিনাথের ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইজের কাঠের ব্লক, মুদ্রণে ব্যবহৃত নানা ছোট যন্ত্র, জিংক ব্লক, তাঁর সময়ে প্রকাশিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, অমৃতবাজার পত্রিকা, কাঙালের স্বহস্তে লেখা বাউলগান, চিঠি আরও নানা কিছু। জাদুঘরে একটি ট্রেডেল মুদ্রণযন্ত্র রাখা আছে। যেখানে লেখা আছে, ‘কাঙাল হরিনাথ ব্যবহৃত ক্লাইমার ও ডিক্সন কোম্পানির কলাম্বিয়ান প্রিন্টিং প্রেস, ১৮৪১।’ কিন্তু মথুরনাথ যন্ত্রটি এখনো রয়েছে কাঙাল হরিনাথের বাড়িতে। জাদুঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম কাঙালের বাড়িতে যন্ত্রটি দেখতে। এখন কাঙাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধর অশোক মজুমদারের স্ত্রী গীতা মজুমদার এবং তাঁর ছোট ছেলে দেবাশীষ মজুমদার দেখাশোনা করেন।

এর পরের গন্তব্য আমার সমস্ত হৃদয়জুড়ে যাঁর বসবাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। রওনা হলাম শিলাইদহের উদ্দেশে। কুমারখালী থেকে শিলাইদহ ১০ কিলোমিটার। কুঠিবাড়িতে পৌঁছানোর পর আনন্দ আর উত্তেজনার শেষ নেই। সব ঘুরে ঘুরে দেখছি রবিঠাকুরের ব্যবহৃত জিনিস, সবুজ মাঠ, সেই পুকুরপাড়, যেখানে মৃণালিনী গোসল করতেন। শিলাইদহ থেকে কুষ্টিয়ায় ফেরার পথে মীর মশাররফ হোসেন জাদুঘরটাও দেখে নিলাম।

বিকেলে কুষ্টিয়ার প্রথম আলোর অফিসে দেখা হলো কুষ্টিয়া বন্ধুসভার নতুন-পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে। মুক্তা, মীম, পিয়াস, রুম্পাসহ আরও অনেকে ছিলেন। বন্ধুদের কাছ থেকে পেলাম একতারা উপহার।

দেখা হলো কুষ্টিয়া বন্ধুসভার সভাপতি মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গে।

দেশের যে প্রান্তেই যাই, বন্ধুসভার বন্ধুদের সহযোগিতা পাই। এ এক বৃহৎ মেলবন্ধন।

সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ