একজন রেজাউল করিম

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম


নাগেশ্বরী। কুড়িগ্রাম জেলার একটা ছোট্ট উপজেলা। ছোট হলে কী হবে, সংস্কৃতিচর্চায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মানচিত্রের এক কোনায় অবস্থান করা এ উপজেলাটি। জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতাগুলোতে সর্বোচ্চ স্থান করে নেওয়া ও চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার অর্জন করার সংখ্যাটাও নিছক কম নয় নাগেশ্বরীর। এই অর্জনগুলোর বেশির ভাগই এসেছে কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে। প্রতিটি অর্জনের পেছনে থাকে একজন প্রশিক্ষকের পরিশ্রম। নাগেশ্বরীতে সংস্কৃতিচর্চার কথা উঠলেই যে নামগুলো সবার আগে উঠে আসে, তাঁদের মধ্যে রেজাউল করিম রেজা নামটি অন্যতম। যিনি ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার একমাত্র আবৃত্তি সংগঠন ‘কথক’–এর মাধ্যমে শুদ্ধ আবৃত্তিচর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত পালন করছেন।

কথকের শিক্ষার্থীরা
কথকের শিক্ষার্থীরা


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’–এর সদস্য হন রেজাউল করিম। সেখান থেকেই শুরু কবিতার সঙ্গে পথচলা। তবে অর্জিত এই প্রতিভা শুধু নিজের মধ্যে রেখে দিতে চননি তিনি। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নিজ জন্মস্থান নাগেশ্বরীতে ফিরে এসে সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘কথক’—আবৃত্তি সংগঠন। উদ্দেশ্য, শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে নিজ উপজেলার ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটানো। ২০০০ সালের ২৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে কথকের যাত্রা শুরু হয়।

আবৃত্তি সংগঠনটির নামকরণ করেন মো. কামাল, যাঁকে রেজাউল করিম তাঁর আবৃত্তিচর্চার ‘মহাগুরু’ বলে সম্বোধন করেন। মো. কামাল দুই বাংলাতেই (বাংলাদেশ ও ভারত) আবৃত্তিকার হিসেবে সমাদৃত। সপ্তাহে এক দিন আবৃত্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কথক সদস্যদের। আর এর গুরুদায়িত্ব পালন করেন রেজাউল করিম। শুধু আবৃত্তি শেখানোই নয়, পাশাপাশি কথক সদস্যদের প্রমিত বাংলায় কথা বলা এবং প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য চারিত্রিক ও আচরণগত শিক্ষা দেন তিনি। প্রাণবন্ত উপস্থাপনার পাশাপাশি রেজাউল করিমের আবৃত্তি দর্শক সারিতে মুগ্ধতা ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দেয়।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এলাকাবাসীর ভালোবাসা অর্জন করেছে কথক। ‘কবিতা আবৃত্তিও যে উপভোগ করা যায়, তা রেজার আবৃত্তি শুনেই প্রথমবার জেনেছিলাম।’ বলেছেন আরফিন আখতার ছিদ্দিকা, প্রধান শিক্ষক ও একজন কথক সদস্যের অভিভাবক।

কথকের শিক্ষার্থীরা
কথকের শিক্ষার্থীরা


কথক সদস্য হাবিবা সুলতানা হ্যাপি বলেন, ‘কথক আমার জীবনদর্শন বদলে দিয়েছে। ১০–১২ বছর বয়সে কথকের সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই সঙ্গে পরিচয় আরেকটি নামের সঙ্গে—রেজা কাকু (রেজাউল করিম), যিনি পরম মমতায় আমাদের কবিতা শেখানো শুরু করলেন।’

প্রতিবছর প্রদীপ জ্বালিয়ে ও আবৃত্তিসন্ধ্যার মাধ্যমে কথকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হয়। উপস্থিত সব অতিথি ও দর্শকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রজ্বলিত মোমবাতি। কথক প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই সন্ধ্যায় শুদ্ধ সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা সবার হাতে একটি করে মোমবাতি দিই। মোমের আলো যেন সবার মনের যত অন্ধকার আছে তা দূর করে দেয়—এটাই কথকের চাওয়া।’

‘আবৃত্তির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে চাই। আবৃত্তিই আমার প্রতিবাদের ভাষা।’ বলেছেন রেজাউল করিম। কথকের সফলতার পেছনে উৎসাহ, পরামর্শ ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য রেজাউল করিম ধন্যবাদ জানান তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের। কথকের উদ্বোধনকারী নারায়ণ চন্দ্র বর্মা (বর্তমান যুগ্ম সচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়), কথকের উপদেষ্টা ও শিক্ষক সুব্রত ভট্টাচার্য এবং বড় ভাই মো. মুসা কালিমুল্লাহকে (খামার ব্যবস্থাপক, কুড়িগ্রাম) সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানান তিনি।