হেসে দিলেন তো জিতে গেলেন

একবার নরম্যান নামের এক ভদ্রলোকের গুরুতর অসুখ হলো। চিকিৎসক বললেন, সর্বোচ্চ ছয় মাস, এর বেশি নয়! নরম্যানের মন খারাপ হয়ে গেল। তবে উনি খেয়াল করে দেখলেন, যখনই তাঁর মন খারাপ হয়, শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন তাঁর মাথায় নতুন এক বুদ্ধি এল—উল্টো করলে কেমন হয়? আমি যদি সব সময় উৎফুল্ল থাকি, তাহলে নিশ্চয় আমার শরীর ভালো হতে শুরু করবে! তিনি তখন হাসির সিনেমা, নাটক আর বই কিনে এনে দিন-রাত এসব নিয়েই মেতে থাকলেন।

ছয় মাস পরে চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলেন, তাঁর কোনো অসুখ নেই! এরপরেও তিনি আরও ৩০ বছর বেঁচে ছিলেন! এই সত্যি ঘটনা তিনি নিজেই লিখেছেন তাঁর Anatomy of an illness বইয়ে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হাসুন, সারা দিন হাসুন। কৌতুক করুন, হাসির কথা বলুন, হাসির কথা শুনুন। জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ লুকিয়ে আছে, চোখ-কান খোলা রাখলেই পেয়ে যাবেন। শরীর-মন ভালো রাখার জন্য, রোগ–জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের ইচ্ছার শেষ নেই। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেন কয়জন? বাকিরা শরীরের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে বড্ড উদাসীন। শুধু শরীর বড় রকম বিগড়ালেই আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং শেষমেশ ডাক্তারের কাছে দৌড়াই।

ইদানীং অসুখবিসুখ খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া গেল তো শুরু হলো আরেকটা অসুখ। ওষুধ খেতে খেতে, চিকিৎসা করাতে করাতে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে। ২০১৮ সালে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন সাড়ে ৫২ লাখ বাংলাদেশি।

সর্বত্রই মানুষ এখন লাগাতার রোগ-জ্বালা, ওষুধ-পথ্য থেকে মুক্তি চায়। পরিস্থিতি ক্রমেই দুঃসহ হয়ে পড়ায় নিত্যনতুন চিকিৎসাপদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শরীর-মন-আত্মা এই তিনের সার্বিক উন্নতি বিধানই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। পদ্ধতিটিকে ইংরেজিতে বলা হচ্ছে হলিস্টিক অ্যাপ্রোজ।

প্রশ্ন হলো, শুধু হেসেই কি শরীর-মন ভালো রাখা যায়? হাসিতে আরোগ্যের প্রবক্তারা জোর দিয়েই বলছেন, আমরা যখন হাসি, তখন আমাদের শরীর–মন বেশ ভালো থাকে। শরীরে কোনো অসুবিধা যদি থেকেও থাকে, অন্তত হাসার মুহূর্তে শারীরিক কষ্টের কথা মনে থাকে না। এই অতি স্বাভাবিক অভিজ্ঞতাই হাসির রহস্য উদ্‌ঘাটনে সাহায্য করেছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান দেখেছে, আমাদের শরীরে বেশির ভাগ অসুখের পেছনে কোনো না কোনোভাবে কাজ করে মানসিক চাপ। দুঃখ, বিষাদ, হতাশা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, অশান্তি, দুর্ভাবনা ইত্যাদি যদি নিয়মিত কারও মনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

মানসিক চাপ থেকে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, পেশির কর্মক্ষমতা, স্নায়ুর স্বাস্থ্য, শরীরের তাপমাত্রা ইত্যাদি অনেক কিছুই এদিক-ওদিক হয়ে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, স্ট্রেস কমাতে হাসি ভীষণভাবে কার্যকর। মানসিক চাপ যেহেতু শরীরে অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপে প্রভাব ফেলে, চেহারায়ও ফুটে ওঠে মলিনতার ছাপ।

এই ছাপ কাটানো যায় কীভাবে? কী করেই-বা ধরে রাখা যাবে যৌবনের ক্ষমতা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসি হচ্ছে এমন একটি ব্যাপার, যা সারা শরীরে আলোড়ন তোলে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সতেজ থাকে। সেই সঙ্গে মনের ভার অনেকটা লাঘব হয়। পুরো শরীরই চাঙা হয়ে ওঠে। যৌবনের ক্ষমতা আবার ফিরে আসে। তাই বলা যায়, হাসি হলো যৌবনের টনিক।