সিলেট বন্ধুসভার সাংগঠনিক সফর

বন্ধুসভার সভাপতি দন্ত্যস রওশনের সঙ্গে সিলেটসভার বন্ধুরা।
বন্ধুসভার সভাপতি দন্ত্যস রওশনের সঙ্গে সিলেটসভার বন্ধুরা।


ঘটনা ছাড়া কি জীবন চলে? একদমই না। আর সেই জীবন যদি আমার হয় তবে সেখানে তো পরতে পরতেই থাকবে ঘটনাপ্রবাহ। তাই মাঝেমধ্যে নিজেই নিজেকে বলে থাকি ‘অঘটন-ঘটনপটিয়সী’। তবে স্বীকার করতে হচ্ছে যে, আজ যে বর্ণনা তুলে ধরব তা ঘটেছে নেহাত আমাদের বোকামির দরুন। সে যাক গে, ফিরে আসি মূল ঘটনায়...
দিনটি ছিল শুক্রবার। গণিত উৎসব ২০১৯–এর সিলেট অঞ্চলের দিনব্যাপী উৎসব শেষ করেই আমরা কয়েকজন প্ল্যান করলাম ঢাকায় যাব। উদ্দেশ্য প্রথম আলো বন্ধুসভা কক্ষ এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যাওয়া। কেননা এ পর্যন্ত নানান ব্যস্ততা থাকার কারণে, বিশেষ করে আমার ঢাকার বইমেলায় যাওয়া হয়নি। রাত নয়টা বাজতেই শাকির ভাইয়ের ফোনকল।

ট্রেন ছাড়ার সময় ১০টা। খুশিতে আমরা নয়টায় স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। স্টেশনে পৌঁছে যা দেখলাম তাতে রীতিমতো আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ট্রেনে বিন্দুমাত্র দাঁড়ানোর জায়গা নেই, সেখানে টিকিট পাওয়া তো সোনার হরিণ। তো স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়েই উপবন ট্রেনের দ্বিতীয় কামরায় উঠলাম। অন্যের আসন ভাগাভাগি করে সবাই বসেও পড়লাম। শুরু হলো আমাদের ট্রেনভ্রমণ। ট্রেন ছাড়তে না ছাড়তেই আমরা আটজন মিলে গল্প জুড়ে দিলাম। আমাদের আড্ডাটা আশপাশের যাত্রীরা উপভোগও করছিল বেশ।

এই আড্ডার পরিসমাপ্তি ঘটল শায়েস্তাগঞ্জ জংয়ে আসার পর। এই স্টেশন থেকে এক যাত্রী ট্রেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠল, ‘এত থেকে এত পর্যন্ত সিটগুলো আমাদের।’ দুর্ভাগ্যবশত ওই আসনগুলাতে আমরাই বসছিলাম। তাই তার কথামতো আসনগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে। যতটা না রাগ পাচ্ছিল তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছিলাম। কী আর করার। জায়গা না পেয়ে আমরা চারজন মেইন ইঞ্জিনের পেছনের দিকে গিয়ে বসলাম।ট্রেন ছাড়ার পর বুঝতে পারলাম কী বোকামিটাই না করলাম। ট্রেনের গতি এমনই ছিল যে  ঠান্ডায় আমরা একেকজন তরতর করে কাঁপছিলাম। কিন্তু একটা সময় আশপাশের পরিবেশটা আমাদের মুগ্ধ করল।

তারার মিট মিট আলো বারতা নিয়ে এল রাতের গভীরতার। আকাশের গায়ে ফুটে উঠল এক এক করে হাজারো তারার আলোক স্পন্দন। যেন আকাশে তারাদের মিলনমেলা বসেছে। হঠাৎ করেই চোখ যায় আকাশের এক কোনে চিকন হয়ে ওঠা সলাজ নতুন চাঁদের উপস্থিতিতে। দূরে দেখা যায় কোনো মাঝির নৌকার কুপির একটু আলোর কম্পিত উপস্থিতি কিংবা বাতিঘরের বারবার জ্বলে ওঠা কোনো লাল বা সবুজ আলোর বোবা নির্দেশ।

রাত নামে, আরও স্পষ্ট হয় তারাদের উপস্থিতি। আকাশে এমন তারা ঢাকা থাকে কখনোই দেখিনি। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি। তারাদের ভিড়েই হারিয়ে ফেলি অনভ্যস্ত চোখ জোড়া। কালপুরুষ কিংবা সাত্ত্বিক কোনো কিছুই না জেনে দেখি সেই হাজার আলোক বর্ষ দূর হতে আসা একচিমটি আলোর অপার্থিব সৌন্দর্য।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা এভাবে থেকে ভৈরব যাওয়ার পর আরেকটি কামরায় উঠে কখন যে পৌঁছাব ওই অপেক্ষা করছিলাম। এরই মধ্যে প্রত্যেকের মধ্যে ক্লান্তির ছাপ বোঝা যাচ্ছিল। যে যেখানেই পারছি, সেখানেই হয় দাঁড়িয়ে, না হয় কিছু একটার সঙ্গে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু রাস্তা কমছেই না। বিরক্তিও লাগছিল বেশ। ভোর পাঁচটায় ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাল। স্টেশন থেকে বের হয়ে পাশেই একটা হোটেলে গিয়ে রুম নিলাম। যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হয়ে গেলাম নাশতা করার জন্য। হোটেলের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের নাশতা সেরে নিলাম। তারপর আবার যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

দুপুর ১২টার দিকে মিথুনদার ফোনকলে আমাদের সবার ঘুম ভাঙল। তিনি ফোনালাপে জিজ্ঞেস করলেন আমরা কই আছি? কখন প্রথম আলো অফিসে যাচ্ছি। তাঁর কথামতোই আমরা বেলা একটার দিকে তৈরি হয়ে বের হলাম। গন্তব্য প্রথম আলো অফিস।যাহোক আমরা সবাই সি এ ভবনের সামনেই নেমে ঢুকলাম প্রথম আলো অফিসে। সেখানে রিসেপশনে বসা এক আপুর কাছে মিথুন দার জন্য নেওয়া সাতকরা পৌঁছে দিয়ে বন্ধুসভার কক্ষে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলাম।
তিনি গার্ডকে বলে দিলেন আমাদের দেখিয়ে দিতে। গার্ডের কথামতো আমরা বন্ধুসভার কক্ষে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখা পেলাম আমাদের প্রিয় মানুষ দন্ত্যস রওসন ভাইকে কুলবরই খাচ্ছেন। তিনি দেখেই বলে উঠলেন, আরে শাকির, তোমরা কখন আসছ। বসো! বসো! বরই খাও!

আমরা বসার পরপরই শুরু হয় পরিচয় পর্ব। শাকির ভাই ছাড়া আমরা সবাই বন্ধুসভা কক্ষে প্রথম। মনের মধ্যে একটু ভয়ও কাজ করছিল কখন কোন প্রশ্ন করবেন তা ভেবে। যাহোক পরিচয় পর্বের শেষে ভাইয়া জানতে চাইলেন যে আমরা খেয়ে আসছি কি না। তারপর আমাদের সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন লাঞ্চ করাতে। প্রথম আলোর ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে যে যার পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেয়ে চলে গেলাম প্রথমা প্রকাশনীর লাইব্রেরিতে।

সেখানে রওশন ভাই আমাদের সবাইকে উপহারস্বরূপ কালো সীমানা, মাই ব্রিফ হিস্ট্রি, সফল যদি হতে চাও বইগুলো দিলেন। সুযোগ পেয়ে আমরা এই মুহূর্তটা ধরে রাখার জন্য ঘ্যাচাং করে কয়েকটা সেলফিও তুলে ফেলি। তারপর আবার চলে যাই বন্ধুসভা কক্ষে। যাওয়ার পরপরই শুরু হয় আমাদের সাংগঠনিক বৈঠক। বইমেলার পর আমরা আর কী কী কাজ করব তা নিয়ে কথা হলো। বন্ধুসভার গঠনতন্ত্র, সদস্যসংখ্যা, সাংস্কৃতিক টিম, লেখালেখি এই সব ছিল আলোচ্য বিষয়। তা ছাড়া আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। বন্ধুসভা কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে একটা করে বিজ্ঞানচিন্তা দেন খেয়া আপু। অনেক মিশুক একজন আপু। তা ছাড়া আবদুল ওহাব ভাই, শাকিব ভাই ও মারুফ ভাইও ছিলেন আমাদের সঙ্গে।

তারপর চলে যাই প্রথম আলো অফিসে। স্বপ্নের মতো সুন্দর একটা অফিস। অফিসটা সত্যিই স্বপ্নের মতো। প্রতিটা বিভাগের জন্য আলদা আলাদা রুম। মানুষগুলোও আনন্দের সঙ্গে কাজ করছিল। আমরা গেলাম অ্যাডভারটাইজিং ডিপার্টমেন্টে। সেখানে মিথুনদার সঙ্গে গিয়ে বসলাম কনফারেন্স রুমে। একে একে সবুর ভাইয়া, রাশেদ ভাইয়া, তুষার ভাইয়া, জুয়েল ভাইয়া এবং মুনির হাসান ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হলো। লিফট দিয়ে আসার সময় নিয়াজ তুলি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় আমাদের সিলেট বন্ধুসভার কক্ষে।

যাহোক সেখান থেকে চলে গেলাম সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’। এটা আসলেই একটা মিলনমেলা। এত সব প্রকাশনী, এত মানুষ, পাঠক এবং লেখকে মেলার মাঠ ভরপুর ছিল। মেলায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ গেল একগাদা জটলা বাঁধা মানুষের দিকে। কৌতূহলবশত গিয়ে দেখলাম আমাদের জাফর ইকবাল স্যার সেখানে বসে আছেন আর একে একে সবাইকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। সঙ্গে অনেকেই সেলফি তুলছিল। ধীরে ধীরে আমরা সবগুলো স্টলই ঘুরছিলাম। অনেক তারকা ব্যক্তির  আনাগোনাও ছিল বইমেলায়। কেননা তাঁদের বইও ছিল এই বইমেলায়।

একপর্যায়ে আবার দেখা পেলাম আমাদের রওশন ভাই ও ঢাকা মহানগরের অন্য বন্ধুদের। প্রত্যেক বন্ধুই ছিল খুবই মিশুকপ্রকৃতির। নন্দন ভাই আমাদের উপহারস্বরূপ তিনটি বই দিলেন। ধীরে ধীরে মেলা বন্ধ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এল। আমরাও প্রস্তুতি নিলাম বিদায় নেওয়ার। কেননা রাতের গাড়িতে করেই আমাদের সিলেট ফিরতে হবে। রাত সাড়ে ১২টার গাড়িতে সিলেটের জন্য পা বাড়ালাম।
সারাটা দিন যে কীভাবে কাটল, বুঝতেই পারলাম না। যাওয়ার পর থেকেই মিথুনদার মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে পরিচয়,বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, রওশন ভাইয়ের সঙ্গে সাংগঠনিক আলোচনা—প্রতিটি অধ্যায়ই ছিল আমাদের জন্য হুটহাট ভ্রমণের বড় প্রাপ্তি। যেটা আমাদের আগামীর চলার পথে অনেক প্রেরণা জোগাবে। আসলেই এক একেকটা ভ্রমণ থেকে একেক রকম অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। একমাত্র বন্ধুসভার মাধ্যমেই সবকিছু সম্ভব।

সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা

সিলেট বন্ধুসভার সাংগঠনিক সফর

সৌরজিৎ রায় শোভন

ঘটনা ছাড়া কি জীবন চলে? একদমই না। আর সেই জীবন যদি আমার হয় তবে সেখানে তো পরতে পরতেই থাকবে ঘটনাপ্রবাহ। তাই মাঝেমধ্যে নিজেই নিজেকে বলে থাকি ‘অঘটন-ঘটনপটিয়সী’। তবে স্বীকার করতে হচ্ছে যে, আজ যে বর্ণনা তুলে ধরব তা ঘটেছে নেহাত আমাদের বোকামির দরুন। সে যাক গে, ফিরে আসি মূল ঘটনায়...

দিনটি ছিল শুক্রবার। গণিত উৎসব ২০১৯–এর সিলেট অঞ্চলের দিনব্যাপী উৎসব শেষ করেই আমরা কয়েকজন প্ল্যান করলাম ঢাকায় যাব। উদ্দেশ্য প্রথম আলো বন্ধুসভা কক্ষ এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যাওয়া। কেননা এ পর্যন্ত নানান ব্যস্ততা থাকার কারণে, বিশেষ করে আমার ঢাকার বইমেলায় যাওয়া হয়নি।

রাত নয়টা বাজতেই শাকির ভাইয়ের ফোনকল।

ট্রেন ছাড়ার সময় ১০টা। খুশিতে আমরা নয়টায় স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। স্টেশনে পৌঁছে যা দেখলাম তাতে রীতিমতো আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ট্রেনে বিন্দুমাত্র দাঁড়ানোর জায়গা নেই, সেখানে টিকিট পাওয়া তো সোনার হরিণ। তো স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়েই উপবন ট্রেনের দ্বিতীয় কামরায় উঠলাম। অন্যের আসন ভাগাভাগি করে সবাই বসেও পড়লাম। শুরু হলো আমাদের ট্রেনভ্রমণ। ট্রেন ছাড়তে না ছাড়তেই আমরা আটজন মিলে গল্প জুড়ে দিলাম। আমাদের আড্ডাটা আশপাশের যাত্রীরা উপভোগও করছিল বেশ।

এই আড্ডার পরিসমাপ্তি ঘটল শায়েস্তাগঞ্জ জংয়ে আসার পর। এই স্টেশন থেকে এক যাত্রী ট্রেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠল, ‘এত থেকে এত পর্যন্ত সিটগুলো আমাদের।’ দুর্ভাগ্যবশত ওই আসনগুলাতে আমরাই বসছিলাম। তাই তার কথামতো আসনগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে। যতটা না রাগ পাচ্ছিল তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছিলাম।

কী আর করার। জায়গা না পেয়ে আমরা চারজন মেইন ইঞ্জিনের পেছনের দিকে গিয়ে বসলাম।

ট্রেন ছাড়ার পর বুঝতে পারলাম কী বোকামিটাই না করলাম। ট্রেনের গতি এমনই ছিল যে  ঠান্ডায় আমরা একেকজন তরতর করে কাঁপছিলাম। কিন্তু একটা সময় আশপাশের পরিবেশটা আমাদের মুগ্ধ করল।

তারার মিট মিট আলো বারতা নিয়ে এল রাতের গভীরতার। আকাশের গায়ে ফুটে উঠল এক এক করে হাজারো তারার আলোক স্পন্দন। যেন আকাশে তারাদের মিলনমেলা বসেছে। হঠাৎ করেই চোখ যায় আকাশের এক কোনে চিকন হয়ে ওঠা সলাজ নতুন চাঁদের উপস্থিতিতে। দূরে দেখা যায় কোনো মাঝির নৌকার কুপির একটু আলোর কম্পিত উপস্থিতি কিংবা বাতিঘরের বারবার জ্বলে ওঠা কোনো লাল বা সবুজ আলোর বোবা নির্দেশ।

রাত নামে, আরও স্পষ্ট হয় তারাদের উপস্থিতি। আকাশে এমন তারা ঢাকা থাকে কখনোই দেখিনি। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি। তারাদের ভিড়েই হারিয়ে ফেলি অনভ্যস্ত চোখ জোড়া। কালপুরুষ কিংবা সাত্ত্বিক কোনো কিছুই না জেনে দেখি সেই হাজার আলোক বর্ষ দূর হতে আসা একচিমটি আলোর অপার্থিব সৌন্দর্য।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা এভাবে থেকে ভৈরব যাওয়ার পর আরেকটি কামরায় উঠে কখন যে পৌঁছাব ওই অপেক্ষা করছিলাম। এরই মধ্যে প্রত্যেকের মধ্যে ক্লান্তির ছাপ বোঝা যাচ্ছিল। যে যেখানেই পারছি, সেখানেই হয় দাঁড়িয়ে, না হয় কিছু একটার সঙ্গে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু রাস্তা কমছেই না। বিরক্তিও লাগছিল বেশ।

ভোর পাঁচটায় ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাল। স্টেশন থেকে বের হয়ে পাশেই একটা হোটেলে গিয়ে রুম নিলাম। যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হয়ে গেলাম নাশতা করার জন্য। হোটেলের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের নাশতা সেরে নিলাম। তারপর আবার যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

দুপুর ১২টার দিকে মিথুনদার ফোনকলে আমাদের সবার ঘুম ভাঙল। তিনি ফোনালাপে জিজ্ঞেস করলেন আমরা কই আছি? কখন প্রথম আলো অফিসে যাচ্ছি।

তাঁর কথামতোই আমরা বেলা একটার দিকে তৈরি হয়ে বের হলাম। গন্তব্য প্রথম আলো অফিস।

যাহোক আমরা সবাই সি এ ভবনের সামনেই নেমে ঢুকলাম প্রথম আলো অফিসে। সেখানে রিসেপশনে বসা এক আপুর কাছে মিথুন দার জন্য নেওয়া সাতকরা পৌঁছে দিয়ে বন্ধুসভার কক্ষে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলাম।

তিনি গার্ডকে বলে দিলেন আমাদের দেখিয়ে দিতে। গার্ডের কথামতো আমরা বন্ধুসভার কক্ষে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখা পেলাম আমাদের প্রিয় মানুষ দন্ত্যস রওসন ভাইকে কুলবরই খাচ্ছেন। তিনি দেখেই বলে উঠলেন, আরে শাকির, তোমরা কখন আসছ। বসো! বসো! বরই খাও!

আমরা বসার পরপরই শুরু হয় পরিচয় পর্ব। শাকির ভাই ছাড়া আমরা সবাই বন্ধুসভা কক্ষে প্রথম। মনের মধ্যে একটু ভয়ও কাজ করছিল কখন কোন প্রশ্ন করবেন তা ভেবে। যাহোক পরিচয় পর্বের শেষে ভাইয়া জানতে চাইলেন যে আমরা খেয়ে আসছি কি না। তারপর আমাদের সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন লাঞ্চ করাতে। প্রথম আলোর ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে যে যার পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেয়ে চলে গেলাম প্রথমা প্রকাশনীর লাইব্রেরিতে।

সেখানে রওশন ভাই আমাদের সবাইকে উপহারস্বরূপ কালো সীমানা, মাই ব্রিফ হিস্ট্রি, সফল যদি হতে চাও বইগুলো দিলেন। সুযোগ পেয়ে আমরা এই মুহূর্তটা ধরে রাখার জন্য ঘ্যাচাং করে কয়েকটা সেলফিও তুলে ফেলি।

তারপর আবার চলে যাই বন্ধুসভা কক্ষে। যাওয়ার পরপরই শুরু হয় আমাদের সাংগঠনিক বৈঠক। বইমেলার পর আমরা আর কী কী কাজ করব তা নিয়ে কথা হলো। বন্ধুসভার গঠনতন্ত্র, সদস্যসংখ্যা, সাংস্কৃতিক টিম, লেখালেখি এই সব ছিল আলোচ্য বিষয়। তা ছাড়া আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। বন্ধুসভা কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে একটা করে বিজ্ঞানচিন্তা দেন খেয়া আপু। অনেক মিশুক একজন আপু। তা ছাড়া আবদুল ওহাব ভাই, শাকিব ভাই ও মারুফ ভাইও ছিলেন আমাদের সঙ্গে।

তারপর চলে যাই প্রথম আলো অফিসে। স্বপ্নের মতো সুন্দর একটা অফিস। অফিসটা সত্যিই স্বপ্নের মতো। প্রতিটা বিভাগের জন্য আলদা আলাদা রুম। মানুষগুলোও আনন্দের সঙ্গে কাজ করছিল।

আমরা গেলাম অ্যাডভারটাইজিং ডিপার্টমেন্টে। সেখানে মিথুনদার সঙ্গে গিয়ে বসলাম কনফারেন্স রুমে। একে একে সবুর ভাইয়া, রাশেদ ভাইয়া, তুষার ভাইয়া, জুয়েল ভাইয়া এবং মুনির হাসান ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হলো।

লিফট দিয়ে আসার সময় নিয়াজ তুলি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় আমাদের সিলেট বন্ধুসভার কক্ষে।

যাহোক সেখান থেকে চলে গেলাম সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’। এটা আসলেই একটা মিলনমেলা।

এত সব প্রকাশনী, এত মানুষ, পাঠক এবং লেখকে মেলার মাঠ ভরপুর ছিল।

মেলায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ গেল একগাদা জটলা বাঁধা মানুষের দিকে। কৌতূহলবশত গিয়ে দেখলাম আমাদের জাফর ইকবাল স্যার সেখানে বসে আছেন আর একে একে সবাইকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। সঙ্গে অনেকেই সেলফি তুলছিল। ধীরে ধীরে আমরা সবগুলো স্টলই ঘুরছিলাম। অনেক তারকা ব্যক্তির  আনাগোনাও ছিল বইমেলায়। কেননা তাঁদের বইও ছিল এই বইমেলায়।

একপর্যায়ে আবার দেখা পেলাম আমাদের রওশন ভাই ও ঢাকা মহানগরের অন্য বন্ধুদের। প্রত্যেক বন্ধুই ছিল খুবই মিশুকপ্রকৃতির। নন্দন ভাই আমাদের উপহারস্বরূপ তিনটি বই দিলেন।

ধীরে ধীরে মেলা বন্ধ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এল। আমরাও প্রস্তুতি নিলাম বিদায় নেওয়ার। কেননা রাতের গাড়িতে করেই আমাদের সিলেট ফিরতে হবে।

রাত সাড়ে ১২টার গাড়িতে সিলেটের জন্য পা বাড়ালাম।

সারাটা দিন যে কীভাবে কাটল, বুঝতেই পারলাম না। যাওয়ার পর থেকেই মিথুনদার মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে পরিচয়,বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, রওশন ভাইয়ের সঙ্গে সাংগঠনিক আলোচনা—প্রতিটি অধ্যায়ই ছিল আমাদের জন্য হুটহাট ভ্রমণের বড় প্রাপ্তি। যেটা আমাদের আগামীর চলার পথে অনেক প্রেরণা জোগাবে।

আসলেই এক একেকটা ভ্রমণ থেকে একেক রকম অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। একমাত্র বন্ধুসভার মাধ্যমেই সবকিছু সম্ভব।

সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা