ভৈরবসভার 'গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর'

ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’
ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’

চারদিক থেকে মানুষ হত্যার খবর আসছে। ভৈরবে তখনো পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করেনি। হঠাৎ ভৈরবের আকাশে দেখা গেল চারটি জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার ও গানশিপ। কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হলো জ্বালাও-পোড়াও। গুলির শব্দে আর আগুনের শিখা দেখে বোঝার বাকি নেই পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হয় উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ের আলগড়া খেয়াঘাটে। উদ্দেশ্য, ওপারে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া। নদ পার হওয়ার আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে শহীদ হন সাড়ে তিন শ নিরস্ত্র বাঙালি। সেই দিন শহীদদের রক্তে লাল হয়ে যায় ব্রহ্মপুত্রের পানি। শহীদ হওয়া লোকজনের মধ্যে বেশির ভাগ শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

ভৈরব গণহত্যার এই ইতিহাস শোনাচ্ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধা তালাত হোসেন বাবলা। শ্রোতা ভৈরব বন্ধুসভার অর্ধশতাধিক বন্ধু। আয়োজনটির উদ্যোক্তা ভৈরব বন্ধুসভা। আসর বসে শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোর ভৈরব আঞ্চলিক কার্যালয়ে। অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন।

ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’
ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’


অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো ভৈরব অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ভৈরবসভার সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল ও আল আমিন তুষার। ইতিহাস জানতে গিয়ে জানা গেল, পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করার মতো অস্ত্র সেদিন ভৈরববাসীর হাতে ছিল না। হত্যাযজ্ঞ, লুট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদল একপর্যায়ে ভৈরব বন্দর দখল করে নেয়।

হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পাকিস্তানি সেনারা চলে যাওয়ার পরও মানুষ ভয়ে ওই দিন আপনজনের লাশ নিতে আসেনি। পরদিন অনেকে এসে আপনজনদের লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। যাঁদের স্বজন পাওয়া যায়নি, তাঁদের এই ঘাটেই গণকবর দেওয়া হয়। ওই দিন অনেক লাশের মধ্যে এমন লাশও পাওয়া গেছে, যেখানে মৃত্যুর সময় মা তাঁর শিশুসন্তানকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ছিলেন। এসব হৃদয়বিদারক ইতিহাস জানার পর উপস্থিত বন্ধুরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’
ভৈরবসভার ‘গণহত্যার ইতিহাস শোনার আসর’


একই সঙ্গে উঠে আসে, মুক্তিযুদ্ধে এক দিনে এক স্থানে এতসংখ্যক নিরস্ত্র মানুষ হত্যার ইতিহাস খুব বেশি নেই। কিন্তু ভৈরবে গণহত্যার ইস্যুটি সব সময় অবহেলিত হয়ে আসছে। বছরের দুবার জাতীয় দিবসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া ছাড়া আর কোনো আয়োজন থাকে না। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর। ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শহীদদের নামের তালিকা করা হয়নি। এটি ভৈরবের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জন্য দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।
ওই সময় তরুণদের পক্ষ থেকে দ্রুত শহীদদের নামের তালিকা তৈরির দাবি ওঠে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন নাহিদ হোসাইন, সুমাইয়া হামিদ, রাসেল মোল্লা প্রমুখ। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ভৈরব বন্ধুসভার একটি তথ্যকণিকা প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানের সূচনাতে প্রত্যেকের কাছে তথ্যকণিকা তুলে দেওয়া হয়।
মানবকল্যাণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা