আম্মু ও ২০১৮

২০ পেরিয়ে ২১ বছরে আছি। জীবনে অনেক সাল এসেছে, আবার চলেও গেছে। কখনো সালের গুরুত্ব আলাদা করে অনুভব করিনি। ২০১৮ আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। সুখভাবনা নয়, কষ্টগাথা। এই এক কঠিন সাল। তারিখটি ১ মার্চ। সাল–তারিখ ভাবনার মূলে আমার মা–জননী।

আম্মুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ওই তারিখে গেলাম চিকিৎসকের কাছে। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হলো। শেষে চিকিৎসক আমাকে জানালেন, আম্মুর শরীরে মরণব্যাধি ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। মায়ের মমতামাখা মুখটি ভেসে উঠল। বারবার মনে হচ্ছিল, হয়তো ২০১৮ সালের মধ্যেই আমার আম্মু ডাক শেষ। অবচেতন মনে শঙ্কা পেয়ে বসেছিল একমাত্র ছোট বোন তানহার জন্য। কী হবে আমাদের দুই বোনের। আম্মু ছাড়া আমাদের দুই বোনের পৃথিবী অর্থহীন।
আমার মুখ থেকেই আম্মু জানতে পারল তার এই কঠিন অসুস্থতার কথা। এত কঠিন কথা আম্মু আমার মুখ থেকে আগে শুনেনি। তার মুখটি তখন কাঁপছিল। সঙ্গে কাঁপছিল আমার পৃথিবীও।

মনে মনে বলছিলাম, বললেই হলো? কথা নাই, বার্তা নাই আমার আম্মুর কেন এত কঠিন রোগ হবে? শুরু হলো আমার জীবনে আম্মুকে নিয়ে চিকিৎসাযুদ্ধ। গেলাম আরেক চিকিৎসকের কাছে। তিনিও একই শঙ্কার কথা জানালেন। এবার ঢাকায়। পরীক্ষা করানো হলো। রিপোর্ট পেতে এক সপ্তাহ। সময় আর যায় না। মনে হচ্ছিল এক সপ্তাহ কেন এত দীর্ঘ হয়? ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর আরও কয়েকটি পরীক্ষা করাতে হলো। আরও তিন দিন অপেক্ষা। দিন এল। গেলাম রিপোর্ট আনতে। জানাল বিকেলে আসতে হবে। এইভাবে কেটে গেল দুটি মাস। চূড়ান্ত রিপোর্টে জানা গেল, আম্মুর শরীরে ক্যানসারের জীবাণু আছে, তবে সেটি প্রতিরোধযোগ্য। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মনে হলো সৃষ্টিকর্তা আমার জীবন থেকে মধুর ডাক আম্মু কেড়ে নিচ্ছেন না, দয়া করে রেখে যাচ্ছেন।

দুটি সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আম্মু প্রায় এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। জীবনের কঠিন সময়গুলোতে আব্বু ছিল অতন্ত্রপ্রহরীর মতো। কাজ, নাওয়া–খাওয়া ভুলে আব্বু আমাদের পাশে থেকেছে। আম্মুকে বিশেষ সময় দিয়েছে। আজ মা দিবসের বিশেষ দিনে কেন জানি ২০১৮ সালের কঠিন দিনগুলোর কথা মানসপটে ভেসে উঠছে। সরাতে পারছি না কিছু সময়ের জন্যও। কখনো আঁতকে উঠছি, আবার কখনো যুদ্ধজয়ের আনন্দে শিহরিত হচ্ছি। কারণ, আম্মু আমার জীবনে এখনো জীবন্ত দৃশ্যমান।
ভালোবাসি তোমাকে আম্মু। পৃথিবীর সব আম্মুর জন্য শ্রদ্ধা।

ভৈরব বন্ধুসভা ও মহানগর বন্ধুসভা