নীল আকাশের ঠিকানায়

প্রিয় মা
কেমন আছো?
আশা করি সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ভালো রেখেছেন। কিন্তু জানো মা! আমি মোটেই ভালো নেই। দুই বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছি। কিন্তু বাবার সেই শূন্যতা জীবনে কখনো বুঝতে পারিনি। কারণ তুমি সব সময় বাবার অভাব পূরণ করেছ। নিজে অভুক্ত থেকে সব সময় আমাকে পেট ভরে খাইয়েছ, আমার এই চোখ দিয়ে কখনো তোমাকে ছেঁড়া-ফাটা-তালিযুক্ত কাপড় ছাড়া ভালো কাপড় পরতে দেখিনি।

মেহেদী মারফত যখন জানতে পারলাম যে তুমি আর দুনিয়াতে নেই, সত্যি বলছি মা আমি ওর কথা বিশ্বাস করিনি। হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কেনই বা বিশ্বাস করব বলো! যে মানুষটা জীবনে কোনোদিন ভালো খায়নি, ভালো পোশাক পরেনি, যে মানুষটার অন্তর সব সময় ছেলের ভালো দেখে আত্মতৃপ্তি পায়, সেই মানুষ আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারে?

বলো মা,  বলো না? আমার মা তো এতটা স্বার্থপর নয়। আজ সারা দিন না খেয়ে থাকলেও কেউ বলে না, ‘খোকা সময়মতো খাবি কিন্তু নইলে শরীর খারাপ করবে।’ এক সপ্তাহ পড়ার টেবিলে না বসলেও কেউ আদুরে গলায় বলে না, ‘খোকা মন দিয়ে পড়বি, তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার, তোকে যে অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে বাবা। তুই মানুষের সেবা করবি। আমাকে দেখলেই মানুষ বলবে, ওই দেখো দেখো বড় ডাক্তারের মা যাইতাছে! আমার বুকের মদ্যি তহন যে কী রহম বালো লাগবি।’

মা, আমি তোমার স্বপ্ন বিফলে যেতে দিইনি। তোমার খোকা এখন অনেক বড় ডাক্তার। অনেক টাকা-পয়সা, যশ-খ্যাতি তার।  কিন্তু মা, আমার এই যশ-খ্যাতি দিয়ে কী হবে বলো? আমার ধন-সম্পদ বলতে যা ছিল সবই তো তুমি। সেই তুমি আমার থেকে কেন এত দূরে চলে গেলে? বলো মা, বলো না!

তোমার সেই কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে, ‘খোকা তোকে অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে, তুই মানুষের সেবা করবি।’ কথাগুলো মনে হলেই বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে ওঠে। আমাকে কয়েকবার অস্ত্রোপচার করে রক্ত-পিত্ত ধুয়ে ফেললেও তোমার ওই কথাগুলো আমি ভুলতে পারব না মা।

আচ্ছা মা, তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলে? বলতে পারো? জানি কোনো উত্তর দেবে না। কারণ তুমি যে এখন আমার থেকে অনেক অনেক দূরে। তবু ওই নীল আকাশের ঠিকানায় তোমাকে লিখলাম। কারণ, আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না মা।

আই মিস ইউ মা, রিয়েলি মিস ইউ।
ভালো থেকো।
ইতি
তোমার কলিজার টুকরো
খোকা

সাহিত্য সম্পাদক, রাবি বন্ধুসভা