ঈদে নতুন জামা

দুই বছর ধরে বন্ধুসভা থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সারা দেশের বন্ধুসভার বন্ধুরা দিয়ে আসছেন নতুন জামা। এ রকম একটি চমৎকার উদ্যোগ বন্ধুসভা যে নিতে পারে এবং সফল করতে পারে, তাতে দ্বিধা নেই। প্রথমবার ১০ হাজারের বেশি শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন বন্ধুরা। তার পরেরবার আরও বেশি। একটি জামা পেয়ে শিশুরা যে কী খুশি হয়, সেই অনুভূতি বা সেই খুশির হাসি পৃথিবীর কোনো শব্দে ব্যাখ্যা করা যাবে না।

গত দুবারই আমি ছিলাম নিজ এলাকায়। দুবারই মৌলভীবাজার বন্ধুসভা থেকেছে সেরা দশে। এবারও প্রস্তুতি চলছে আরও বেশিসংখ্যক শিশুর মুখের হাসি দিয়ে নিজেদের ঈদকে আরও বর্ণিল করতে।

সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভায় শুরু হয়ে গেছে জামা বিতরণ। বাচ্চাদের হাতে, শরীরে নতুন জামা, সবুজ প্রাণবন্ত হাসির ছবিতে ভরে উঠছে বন্ধুসভার পেজ। বন্ধুরা, একটি জামা কিনে দেওয়া খুব সহজ কিন্তু একটি মুখের হাসির কারণ হওয়া খুব কঠিন। সেই কঠিনকেই আমরা বন্ধুরা সহজ করছি, সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের ঈদের আনন্দেও। আমরা সবাই নিজেদের সাধ্যমতো জামা কিনছি এবং নিয়ে যাচ্ছি সেসব শিশুর কাছে, যারা ঈদে নতুন জামা চিন্তাও করতে পারে না। স্বপ্নেও দেখে না। দেখে শুধু অন্য বাড়ির বাচ্চাটি ঈদের দিন নতুন চকচকে একটি জামা পরেছে। আর সে ভেতরে-ভেতরে কাঁদে, বাইরেও কাঁদছে। সেই কান্না কেউ দেখে না। তবে আমরা এখন দেখছি, যতটুকু সম্ভব দেখার চেষ্টা করছি। আশা করি, এই উদ্যোগটি ধারাবাহিক থাকলে একসময় আমরা সারা দেশে আরও বেশি শিশুকে নতুন জামায় রাঙিয়ে দেব ঈদের সময়।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, গতবার যখন নতুন জামা নিয়ে একটি গ্রামে গেলাম, তখন এক শিশুর বাবা বলেছিলেন, ‘নতুন জামা কই থেকে দিবো, মুখে ভাতই দিতে পারি না, গরিবের আবার ঈদ কিসের!’

আমরা নিজেদের জন্য অনেক কিছু ঘটা করে কিনি ঈদে বা ঈদ ছাড়াও, সারা বছরই। একদিন, একবার না হয় আপনার পাশের অসহায় শিশুটির জন্য একটি জামা কিনলেন, তাতে তো খুব ক্ষতি হবে না। সেই জামাটি স্থানীয় বন্ধুসভার কাছে দিয়ে দিতে পারেন। এতে আপনার খারাপ লাগবে না, একবার ভেবে দেখুন, আপনার দেওয়া জামাটি পরে একটি শিশু ঈদ করছে। তার মুখে হাসি। যে হাসি আপনি টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না। তখন আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে। আর এভাবেই শুরু করতে হবে আমাদের আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ। সমাজে এখনো অনেক মানুষ আছেন যাঁরা পাশে থাকতে চান, শুধু বিশ্বস্ত একটি সংগঠন চান। বন্ধুসভা সেই বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে এ দেশে। শুধু বন্ধুসভার বন্ধুরা যান তাঁদের কাছে। খুলে বলুন আমাদের এই নতুন জামার কথাটি, দেখবেন অনেক গুণ বেশি শিশুকে দিতে পারছি আমরা নতুন জামা।

বন্ধুরা সময় বেশি নেই। ঈদ সামনে। যতটুকু সম্ভব আসুন আরও বেশি মুখের হাসি ফোটাতে চেষ্টা করি। এমন অসাধারণ কাজে কেউ ‘না’ করবে না। আপনি নিজেও যতটুকু পারেন, প্রত্যেক বন্ধু নিজের সাধ্যমতো সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করলে আমরা ঠিকই পারব গত দুবারের থেকে এবার আরও বেশি মুখের হাসি নিয়ে ঈদ করতে।

উপদেষ্টা, মৌলভীবাজারসভা