একটি চারা গাছ হবে আমার!

আচ্ছা, মানুষ কি বৃক্ষ হতে পারে? কোনো কোনো মানুষ বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যায়। আবার কোনো মানুষ বৃক্ষের মতো হতে চায়। কোনো মানুষ মানবিক গুণাবলি বিসর্জন দিয়ে খুনি হয়। কিন্তু বৃক্ষ খুন করতে পারে না, খুনি হতে পারে না। আমরা কি সেই বৃক্ষ হতে পারব? যে বৃক্ষের জন্ম হয় প্রাণিকুলের উপকার করার জন্য। যে বৃক্ষ আমাদের খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র, আশ্রয়ের জন্য বাসস্থান, জ্বালানি, বৈচিত্র্যপূর্ণ আসবাবপত্র উপহার দেয়। এ ছাড়া বৃক্ষ আমাদের ঝড়ঝঞ্ঝায় আগলে রাখে, ভূমিক্ষয় রোধ করে, চারপাশের শোভা বাড়ায়, ফুল দেয়, ফল দেয়, সুগন্ধি দেয়, বিষণ্নতায় প্রশান্তি দেয়, নানা প্রজাতির পাখপাখালির আশ্রয় দেয়, অভাব-অনটনে অর্থের জোগান দেয়, অসুখ-বিসুখে ওষুধ ও পথ্য দেয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে।
ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি বৃক্ষ মানবসমাজকে কতটা আর্থিক সুবিধা প্রদান করে তার একটা হিসাব তুলে ধরেন, ‘বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে ১০ লাখ টাকার, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকার, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতাশক্তি বাড়িয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ও জ্বালানি কাঠসহ ফল সরবরাহ করে ৫ লাখ টাকার এবং বিভিন্ন জীবজন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরও ৪০ হাজার টাকা।’ এবার নিশ্চয়ই বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। এরপরও আবাসনের জন্য বন উজাড় করি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বৃক্ষের দেখা মেলে না অবহেলা, অসচেতনতা, হেঁয়ালিপনা আর ভাগ্যের পরিহাসে। আমাদের অর্থলিপ্সার কাছে বৃক্ষ আজ বড় বেশি অসহায়।
যুগ যুগ ধরে যে বৃক্ষগুলো আমাদের উপকারী বন্ধু হয়ে আগলে রেখেছে, আজ সময় এসেছে তাদের আগলে রাখার। কাঠফাটা রোদ থেকে এত দিন আমরা ছায়া পেয়েছি, মায়া পেয়েছি। আজ আমাদেরই বৃক্ষ হয়ে তাদের ছায়া দিতে হবে, মায়া দিতে হবে। কোনো কুঠার নয়, মানুষ হয়ে উপকারীর উপকারিতা স্বীকার করে বৃক্ষগুলোকে বাঁচাতে আমাদের আজ এক একটি চারা গাছ হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আবার সুজলা–সুফলা বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।