বৃক্ষপ্রেম

আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন রবীন্দ্রনাথের ‘বলাই’ গল্পটা ছিল সবচেয়ে প্রিয়। সকালে মক্তব থেকে আসার সময় রাস্তা থেকে ছোট চারাগাছ খুঁজে এনে খালি জায়গায় লাগানো নেশা ছিল আমার। খেলার মাঠে যেখানে ব্যাটিং করতাম, তার ঠিক পাশে ছিল একটি গাছ। তার নাম জানা ছিল না। বন্ধুদের বলতাম এটাই আমাদের শিমুলগাছ। তখন প্রতিদিনই গাছটি দেখতে পারতাম। হঠাৎ একদিন দেখি ওই গাছটি নেই। বড় একটি দালান এখনো ওখানে আছে। তারপর থেকে কাউকে না জানিয়ে গাছের চারা যেখানে খালি জায়গায় পেতাম, সেখানেই গাছ লাগাতাম। এই নেশা থেমে থাকেনি, এখনো আছে। কিন্তু গাছ লাগানোর জায়গায় নেই। থাকলেও এখন অনুমতি নিতে হয়, তার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়।
২০১৪ সালে বন্ধুসভায় আসার পর তাপস তপু সরকার ফোন করে বলে, ‘বিকেলে আমরা ভালো কাজ করব। বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করব।’
তখন আমিও ৫টি গাছের চারা কিনে নিয়ে আসি, আর মোমেন ভাইকে বলি, ‘ভাই কাজ শেষে এই চারাগাছ আমরা এখানে লাগাব।’
পরে মিলেমিশে চারাগাছ লাগানো হয়।
আমার প্রিয় মানুষের জন্মতারিখ ১৩ নভেম্বর। কিন্তু আমি তার জন্মদিন পালন করি একা ১৩টি গাছের চারা লাগানোর মাধ্যমে, কিন্তু তার কথা হলো, সবাই প্রিয় মানুষকে সারপ্রাইজ দেয় আমি দিই না! সত্যি বলতে এর থেকে আর ভালো সারপ্রাইজ হয় কি না, আমার জানা নেই।
এবারও আমি আমাদের সম্পর্ক স্মরণ করে রাখার জন্য নিজে থেকে ২১৩টি গাছের চারা লাগাব।
ওই গাছের চারা যত দিন থাকবে তোমার আমার ভালোবাসা তার থেকেও বেশি দিন থাকবে।
ভূপেন হাজারিকার একটি গান আছে, ‘আমি ভালোবাসি তোমাকে, আর তুমি ভালোবাসো আমাকে, এসো আমাদের সব ভালোবাসা বিলিয়ে দিই মানুষকে।’
এবার তোমার জন্মদিনের গাছটি হবে পৃথিবীর জন্য।
সিলেট বন্ধুসভা