আলোয় ঝলমলে উদ্ভাসিত তারুণ্য

বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা
বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা


সুরমা নদীর ওপর আগাপাছতলা লোহায় তৈরি কিন ব্রিজটা যখন পার হচ্ছি, তখন ব্রিজের অন্য পারে লন্ডনের বিগ বেনের আদলে তৈরি ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা। টানা বর্ষণে খানাখন্দে ভরা রাস্তার যানজট ঠেলে ঢাকা থেকে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর পৌঁছালাম। তাড়াহুড়া করে হোটেলে ঢুকেই সরাসরি নাশতার টেবিলে। নাশতা শেষে বের হলাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্দেশে। বেরিয়েই দেখি, একি বিপত্তি! এ যে পুরো রাবীন্দ্রিক বর্ষা! ঘনকালো মেঘে ঢাকা আকাশ আর অঝোর বর্ষণে দিব্য সকালটা যেন ঘোর সন্ধ্যা! মনে কু ডাকল, যে লক্ষ্যে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসা, না জানি তা ভেস্তে যায়!

বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা
বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা


ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করে নিতে সিলেট বিভাগের কয়েক শ স্বপ্নবাজ তারুণ্যের আজ জড়ো হওয়ার কথা জেলার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। ভাবলাম, এই অঝোর শ্রাবণধারায় আসবে তো তারা! ভাবতে ভাবতেই একটা সিএনজিতে চড়ে এপথ-ওপথ ঘুরে বৃষ্টির প্রবল ঝাপটায় অর্ধভেজা হয়ে পৌঁছে গেলাম শিল্পকলা একাডেমির সদর দরজায়। দরজা খুলেই তো চক্ষু চড়কগাছ! ওরিব্বাপস্! মিলনায়তন দেখি কানায় কানায় ভরা! খুশিতে ভরা বর্ষায় ময়ূয়ের মতো পেখম মেলে দিল মনটা।

জুন মাসের শেষ শুক্রবার বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ আর সিলেট বন্ধুসভার আয়োজনে ‘তৈরি হও, এগিয়ে যাও’ শিরোনামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের এই আয়োজনে কথা বলতে ঢাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন এসেছি। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর বন্ধুসভার সভাপতি দন্ত্যস রওশন ভাইয়ের সঞ্চালনায় শুরু হয়ে গেল প্রশিক্ষণ। প্রথমেই ‘সংগঠকের ভূমিকা ও নেতৃত্ব’ নিয়ে কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুমিত আল রশিদ। এরপর ‘ক্যারিয়ার কথা’ বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক নাজমুল হাসান। দুই শিক্ষকের ক্লাসে মগ্ন হয়ে কখন যে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেল তা বোঝাও গেল না। তবু বন্ধুদের প্রশ্নের শেষ নেই! জানার নেশা তো আছেই, সঙ্গে ‘ভালো প্রশ্ন করলেই বই উপহার’ রওশন ভাইয়ের এই ঘোষণায় প্রশ্ন করার উৎসাহ তখন তুঙ্গে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক রিদিতা তাহসিন অদিতিকে নিয়ে ‘সবার জন্য বিতর্ক’ বিষয়ে কথা বলতে আসলাম আমি নিজেই। বিতর্ক নিয়ে দুজন মিলে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেল। বাধ্য হয়েই বিরতি। বিরতির পর ফিরে এবার টানা ক্লাস হলো আইটি, আবৃত্তি ও উচ্চারণ, ফটোগ্রাফি, লেখক হওয়ার কৌশল এই চারটি বিষয়ে। ক্লাস নিলেন বন্ধুসভা জাতীয় ও ঢাকা মহানগর পর্ষদের রবিউল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মোহতারিমা রহমান, সাইদুল ইসলাম, সৈকত বরণ শীল এবং জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দন্ত্যস রওশন ভাই নিজেই। প্রশ্ন-উত্তর আর জানার নেশায় দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলে শেষ হলো প্রশিক্ষণ পর্বের।

প্রশিক্ষণের লেজ ধরে এবার শুরু হলো সিলেট বন্ধুসভার আয়োজনে সাংস্কৃতিক পর্ব। চমৎকার কিছু আবৃত্তি, গান, নাচ আর গীতিকাব্য শেষে সিলেটি ধামাল নাচে শেষ হলো এই পর্বের। ততক্ষণে অংশগ্রহণকারী সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অংশগ্রহণের সনদ আর মনে জেগেছে টগবগে বিশ্বাস- ‘তৈরি হচ্ছি, আমিও পারব’। সারা দিনের প্রশিক্ষণ শেষে মেঘে ঢাকা ফ্যাকাশে সন্ধ্যায় এই আত্মবিশ্বাসটুকু সঙ্গে নিয়েই রাঙা মনে বাড়ি ফিরল সর্বজয়ী তারুণ্য। পেছন থেকে তাদের দেখতে দেখতে মনে হলো- তৈরি হওয়ার পূর্ণ সুযোগ পেলে পূর্ণযৌবনা সুরমা নদীর মতোই ফুলে-ফেঁপে দুকূল দাপিয়ে ছুটবে এই তারুণ্য। তাই তো বন্ধুসভার আহ্বান, ‘তৈরি হও- এগিয়ে যাও’।