ভৈরবে বন্ধুসভার রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী
মৃদু আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ল পুরো মিলনায়তনে।
ভৈরব পৌর শহরের ভেনিস-বাংলা কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনের দর্শক ধারণক্ষমতা ২০০ জনের।
নির্ধারিত সময়ের আগেই সব আসন পূর্ণ হয়ে আছে। আসন না পেয়ে আরও শতাধিক দর্শক বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে। আশা যদি একটি আসন খালি হয়, তখন শূন্য আসনটি দখল করা। এরই মধ্যে ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাতটার ঘরে। মিলনায়তনের আলো নিভে গেল। মঞ্চের মৃদু আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে।
একদল তারুণ্যের কণ্ঠি থেকে ভেসে এল ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, বিরাজ সত্য সুন্দরও’ গানটির সুর। সত্য ও সুন্দরকে স্বাগত জানানোর এই গানটির সঙ্গে দলীয় নাচ দিয়ে ভৈরবে সূচনা হয় রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর আয়োজন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো ভৈরব অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা ও ভৈরব বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আল আমিন তুষার।
গান, আবৃত্তি, নাচ আর নাটিকার ফাঁকে ফাঁকে চলে রবীন্দ্র-নজরুলের কবি প্রতিভা নিয়ে আলোচনা।
উদ্বোধনের পর পর বন্ধুসভার বন্ধুরা উপস্থিতজনদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন। তখন রবীন্দ্র-নজরুল আবহে মিলনায়তন নতুন রং পায়।
আলোচকেরা বলেন, বাঙালির জীবনাচরণে রবীন্দ্রনাথ সর্বক্ষণই বিরাজমান। সাহিত্যের সব শাখাতেই তাঁর রয়েছে সমান উপস্থিতি। সৃষ্টিশীল প্রতিভা দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে বিস্ময় জাগিয়েছেন এবং বিশ্বকে জানান দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁকে জীবন থেকে সরিয়ে রেখে জীবন এগিয়ে নেওয়া কঠিন।
নজরুল দ্রোহের কবি। অন্যায় আর অবিচারে তিনি হয়ে উঠতেন বিদ্রোহী ও বিপ্লবী। কবিতা ও গান লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। এককথায় সাহিত্যের বিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন আরেক মাইলফলক এবং অমূল্য সম্পদ।
মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাঙালির যেকোনো সংকটে দুই কবির লেখা প্রেরণা হয়ে ওঠে। তাঁদের সৃজনকর্ম দুর্বল মনকে সাহসী করে তুলে।
বক্তব্য দেন পৌর মেয়র ফখরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন, হাজি আসমত কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাউর রহমান, জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের সাবেক পরিচালক শহীদুজ্জামান স্বপন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুজ্জামান, ওস্তাদ ইসরাইল খান সংগীত নিকেতনের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ, ভৈরব বইমেলা পরিষদের সভাপতি আতিক আহমেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ, আবৃত্তিকার নূরে লাইলা রিক্তা, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা লুবনা হক, জাহিদুল হক, আলাল উদ্দিন, সভাপতি আসাদুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নয়ন আহমেদ ও অনুষ্ঠান উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক ইকরাম বখশ।
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের আলোচিত ছোট গল্প ‘একরাত্রি’ অবলম্বনে নাটিকা মঞ্চস্থ হয়। নাটিকাটির নির্দেশনা দেন যৌথভাবে বন্ধু সুমাইয়া হামিদ ও জনি আলম।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গান পরিবেশন করেন গুণী শিল্পী রওশন আরা খুকি। আবৃত্তি করেন লুবনা হক ও নুদরাতুন তোরসা। গান ও নাচে অংশ নেন বন্ধু তমা, জুয়েনা, প্রিয়াংকা, সানজিদা, মোহনা, জ্যোতি, সুরভী, সূচনা, অর্ণব গণি, শরীফ, সৌরভ, তূর্য্য, নুদরাতুন তোরসা, জেরিন, প্রমি হক, মানিক, ইবাদ, তুশি, মেধা, আফজাল, সামাদ, মিশু, তাইফ। কি-বোর্ডে ছিলেন মাসুদুর রহমান, তবলায় জাকির হোসেন।
অনুষ্ঠানে ভৈরব বইমেলা পরিষদের সভাপতি আতিক আহমেদ বন্ধুসভার পাঠাগারে ৫০টি বই উপহার দেন। বন্ধুসভার পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী রওশন আর খুকিকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
সাহিত্য সম্পাদক