ঈদ যায়, ঈদ আসে


ঈদের আনন্দ তো শুরু হয় ক্যাম্পাস ছুটির পর থেকেই। আসল মজা হয় শহর থেকে গ্রামে আসার সময়। ভিড় ঠেলে বাসে উঠে কোনোমতে বসে যখন জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিই, চোখ তখন আটকে যায় আশেপাশের বাস, ট্রাকের দিকে—মানুষের গাদাগাদি! এত কষ্ট করে বাড়িতে যাওয়ার পরও সবার চোখমুখে থাকে খুশির ঝিলিক। আমাদের রিলেটিভ এবং কাজিনদের বেশির ভাগই থাকে বাইরে এবং ঈদ হয় আমাদের জন্য মিলনমেলা। এবারে আমরা সবার আগে পৌঁছেছিলাম।
সবাই পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয়ে যায় আমাদের সেই আড্ডার আসর। এত দিন পর চেনা মুখগুলো, গ্রামের মানুষগুলো, তাদের ভালোবাসা—অন্য রকম অনুভূতি। যদিও বাইরে থাকায় বাড়িতে বেশ কিছু কাজ জমে যায়, একসঙ্গে সবাই কাজ করতেও ভালো লাগছিল।
এক চাঁদরাতে কাজিনরা সবাই মিলে গ্রামের রাস্তায় বের হয়েছিলাম। নিস্তব্ধ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, এই অনলাইনের যুগে এসেও অফলাইনের সম্পর্কগুলো কতটা হৃদয়ছোঁয়া! গভীর রাত পর্যন্ত সবাই মিলে মুভি দেখেছি। হরর সিনে আটকে থেকেছে আমাদের মুহূর্তগুলো। ঈদের আগের রাতে ছোট-বড় সবাই বসে একসঙ্গে মেহদি দিয়েছি, ঠিক ছোটবেলার মতোই।
সবচেয়ে ভালো লাগছিল যখন সব কাজিন মিলে মাংস বিলি করতে গিয়েছিলাম। বিকেলের দিকে স্কুল ফ্রেন্ডসদের সঙ্গে মিট করা, স্কুলের বারান্দায় বসে আড্ডা দেওয়ার মজাটাই ছিল অন্য রকম। একদিকে স্মৃতির আনাগোনা, অন্যদিকে এত দিন পর এক হতে পারার সুখ। বড় হয়ে যাওয়ায় সালমির ব্যাপারটা মিস করি। ঈদের পর দিন ফ্যামিলির সবাই মিলে নৌকাভ্রমণের ব্যাপারটা সত্যি ভোলার নয়। নৌকায় বসে থেকে প্রকৃতির অদ্ভুত সুন্দর রূপ আর বাতাসের কম্বিনেশান ছিল ফিল করার মতো। সঙ্গে বাদাম আর বিটলবণ! উফ!
সবকিছুর পরও মনে হয় আব্বুটা বেঁচে থাকলে নতুন পাঞ্জাবি পরে যখন রওনা দিত ঈদমাঠে, জানালার পর্দা সরিয়ে আমি তাকিয়ে থাকতাম নিষ্পলকভাবে। তারপরও ঈদ আসে, ঈদ যায়। ঈদ থাকে আমাদের ছুটি পর্যন্ত, যত দিন সবাই একসঙ্গে থাকি। আবার শুরু হয় পরের ঈদের অপেক্ষা।