চন্দনাইশে ঈদ আনন্দ

চন্দনাইশে ঈদ আনন্দ
চন্দনাইশে ঈদ আনন্দ


কোরবানির ঈদের ঠিক পরের দিন মঙ্গলবার সকাল আটটা। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা শেষে বাসার সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। বেজে উঠল ঘড়ির অ্যালার্ম। ঘুমকাতুরে চোখ খুলে অ্যালার্মটা যখন বন্ধ করতে গেলাম, সে সময় মনে পড়ল চন্দনাইশ বেড়াতে যাওয়ার কথা। এরপর তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তৈরি হওয়ার পালা। কারণ, ঠিক দশটায় গাড়ি ছেড়ে যাবে চন্দনাইশের উদ্দেশে।

তৈরি হতে হতেই চোখ গেল আকাশের দিকে। মেঘলা আকাশ জানিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি হবে। কিন্তু তাতে কি, তাই বলে তো আর বন্ধুদের ঘোরাঘুরি থেমে থাকতে পারে না। বন্ধু আছে যেখানে, সেখানে আর কি লাগে? এসব ভাবতে ভাবতেই বের হয় গেলাম বাসা থেকে। উদ্দেশ্য দুই নম্বর গেট বাসস্ট্যান্ড। সেখানে যেতে যেতে সব বন্ধুকে ফোন দিতে থাকলাম। দুই নম্বর গেটেই আমাদের একত্র হওয়ার কথা। একে একে আসতে থাকলেন বন্ধুরা।

ইব্রাহীম তানভীর, আদনান রাহিম, ইরফাতুর রহমান, রুনা আক্তার, তাহমিনা লুবনা, শিহাব জিশান, বেনজির বিনতে শওকত, তানজিলা বিনতে শওকত, আজিমুস শানুল দস্তগীর, ওসমান গণিসহ সব বন্ধু আসার পরে বেশ কিছুক্ষণ চলল আমাদের কুশল বিনিময়। একটু অপেক্ষা করতেই ঠিক দশটায় বাস এসে হাজির। সবাই উঠে যে যাঁর মতো বসে পড়লেন। জানালার পাশে কে বসবে, এ নিয়ে চলল কিছুক্ষণ তর্কযুদ্ধ।

বাস চলছে নিজের গতিতে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে। আমরা চারপাশের সবুজ প্রকৃতি যেমন উপভোগ করছি, তেমনি মেতে আছি আড্ডা আর গানে। এভাবে চলতে চলতে ঘণ্টা দেড়েক এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে। চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব জিশানের বাড়ি। মূলত তাঁর উদ্যোগেই প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পরদিন এভাবেই চট্টগ্রামসভার বন্ধুরা দলবেঁধে ঘুরতে আসে চন্দনাইশে। বাস থেকে নামতেই বৃষ্টি আমাদেরকে স্বাগত জানিয়ে ঝিরঝির করে ঝরতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টির শীতল অভ্যর্থনা শেষ হতেই সবাই পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এরপর আবারও আড্ডা আর গল্পে মেতে ওঠা।

আড্ডা শেষ হতে না হতেই মেজবানের খাওয়া প্রস্তুত। সবাই মিলে খাওয়ার মিশন শেষ করতে না করতেই আবারও ঝুম বৃষ্টি। তখন সবার চিন্তা একটাই, কখন থামবে বৃষ্টি আর ঘুরে দেখা যাবে পুরো চন্দনাইশ। অঝোর ধারায় প্রায় এক ঘণ্টা বর্ষণ শেষে থামল বৃষ্টি। এরপর আবারও ঘোরাঘুরি পর্ব শুরু। সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম শঙ্খ নদীর উদ্দেশে। বাসে ওঠামাত্র শুরু হলো গানের আসর। সবাই মিলে গলা মিলিয়ে গাইতে থাকে জনপ্রিয় গানগুলো।

আমাদের আনন্দ দেখে রাস্তায় অনেকেই মুগ্ধ হয়ে বাসের দিকে থাকিয়ে থাকে। আমরা গান গাইতে গাইতে পৌঁছে যাই শঙ্খ নদীর পাড়ে। নদীর দুই পাড়ে সবুজ গাছ আর বালিতে ভরা। নদীর বুকে নৌকা চলছে, অনেকই জাল দিয়ে মাছ ধরছে। আর বালির চরে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছে অনেকেই। নদী আর সবুজ মিলে প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য, তা শঙ্খ নদীর পাড়ে অপূর্ব দেখায়।

হাঁটতে হাঁটতে গেলাম শঙ্খ নদীর ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া সেতুর ওপর। সেতুর ওপর অনেকেই এসে ভিড় জমিয়েছে প্রকৃতি উপভোগ করতে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে নেমে আসতে লাগল অন্ধকার। সেই অন্ধকারের বুক চিরে আবারও আমাদের ছুটে চলা। এগিয়ে চলেছে বাস শহরের পথে। বন্ধুদের সবার চোখে তখনো হয়তো গ্রামীণ সেই দৃশ্য ভাসছে। সে কারণেই বিদায়বেলায় সবার কণ্ঠে একই গান, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়...’।