বেঁচে থাকুক ভালো কাজের বন্ধন

বেঁচে থাকুক ভালো কাজের বন্ধন। সিলেট বন্ধুসভার ডেঙ্গু নিধন কর্মসূচি।
বেঁচে থাকুক ভালো কাজের বন্ধন। সিলেট বন্ধুসভার ডেঙ্গু নিধন কর্মসূচি।


অন্তরে দেশটা থাকলে অনেক কিছুই যে করা সম্ভব, তা করে দেখায় সিলেটের একঝাঁক তরুণ-তরুণী। পরিচয়ে তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের বন্ধু, তারা প্রথম আলো বন্ধুসভা, সিলেটের বন্ধু।
আমার দিনের সবচেয়ে সুন্দরতম কাজটি হচ্ছে একমাত্র ছেলে ‘পুণ্য’কে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। রোজ ওকে স্কুল গেটে বিদায় দিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকি গেটের ওপারে। চোখ ভরে তখন পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি দৃশ্য দেখা যায়...খুব সকালে কচি কচি বাচ্চারা খেলছে, দৌড়াচ্ছে, হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। কী অপূর্ব সে দৃশ্য! এরপর ঘণ্টা বেজে উঠলে দৌড়...

সেদিন, আমার রুটিন কাজ শেষে সকালের আপাত কোলাহলহীন রাস্তা ধরে হাঁটছি পাঠানটুলা-মদিনা মার্কেট রাস্তা ধরে। হঠাৎ চোখ আটকায় সড়কের বিভেদরেখা বরাবর লাগানো নতুন গাছের সারিজুড়ে। মৃদু হাওয়ায় দুলছে পাতা, শাখায় শাখায় তুমুল আনন্দ, সবুজ ভালোবাসায় আমি কাতর হয়ে যাই। চোখ ফেরাতে পারি না, চোখ ফেরালেও মন ফেরে না...খোঁজ নিয়ে শুনি, সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা এই গাছগুলো লাগিয়েছে। ফেসবুকে তাদের কাজের ছবি দেখি, কোদাল হাতে ছবি, রাধাচূড়া হাতে ছবি, জলের ফোয়ারা হাতে ছবি, আশপাশের মানুষকে বৃক্ষের যত্ন নেওয়ার কথা বলার ছবি...আচমকা তাদের মুখগুলো ভেসে ওঠে আমার সামনে, বন্ধুর মুখ—এরা এই শহরেরই ছেলেমেয়ে। মুখগুলো মুখস্থ। অসাধারণ সব কাজ করেন তারা।

কেবল গাছ লাগানো নয়, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নতুন কাপড় উপহার দেওয়ার আয়োজনটিও আমার মন ছুঁয়ে যায়। শরীর কিংবা বয়সের চেয়ে বহুগুণ বেশি এদের চিন্তার মাত্রা। খুব সম্প্রতি ডেঙ্গু নিয়ে তাদের কার্যক্রমও নজর কেড়েছে। কথিত বড়দের মতো কেবল ফটোসেশন নয়, বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের সচেতন করতে দেখেছি নিজের চোখে। নিজ হাতে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা, মশার ওষুধ ছিটানো—সেটাই তো প্রকৃত বন্ধুর কাজ।

বন্ধুসভার এই বন্ধুরা একসঙ্গে বসে পড়ে, একসঙ্গে গান গায়, বনভোজনে ছোটে। একই প্রাণে তাদের সকল প্রাণ বাঁধা। ভালো কাজ যাদের নেশায়, দেশকে তারাই কিছু দিতে পারে। এ অদ্যম তারুণ্যের জয় হোক, বেঁচে থাকুক বন্ধুতা, ভালো কাজের বন্ধন।
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি