খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ

খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ
খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ


সবুজ শ্যামল বাংলা নিজেকে রাঙিয়েছে রংধনুর সাত রঙে। এমন কোনো রঙের অস্তিত্ব নেই, যা বাংলার প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। সবুজের বিশাল বনভূমি, উঁচুনিচু ধূসর পাহাড়, নীল সমুদ্র, সাদা পানির ঝরনা, শরতের কাশফুল, হঠাৎ গর্জে ওঠা কালো মেঘ। বৃষ্টি–রোদ্রের লুকোচুরিতে প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে খেলা করছিল। টানা সাত দিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ি রাস্তা ভেঙে যাওয়ার ভয়, খাগড়াছড়ির দর্শনীয় আলুটিলা গুহা ও রিসাং ঝরনায় পিচ্ছিল খাওয়ার ভয়ে ভ্রমণ তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হলো সাত দিন। কিন্তু বিধিবাম, শনিবার সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ। যেহেতু তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাই রোদ থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হলো না। নির্দিষ্ট তারিখ হলো পরের শনিবার। এক শনিবার থেকে পরবর্তী শুক্রবার টানা রোদ, তপ্ত গরম। শনিবার ভোররাত থেকেই বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টি, বজ্রের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। সবার ভয়, এবারও বুঝি ভ্রমণ বাতিল হয়।

খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ
খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ


বের হলাম খাগড়াছড়ির জলপাহাড় পার্ক, রিসাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্ক, তারেং ও আলুটিলা গুহা দেখার জন্য। চবি বন্ধুসভার ৪৭ জন বন্ধু নিয়ে বাস রওনা দিল খাগড়াছড়ির উদ্দেশে। বাসে উঠে বন্ধুসভার সদস্যদের হাসি আনন্দে আকাশের মেঘ ভয় পেয়ে আর আসার সাহস পায়নি। সকালবেলা নাশতা করা হয় জলপাহাড় পার্কের নিকট একটি রেস্টুরেন্টে।

খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ
খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ


খাওয়ার পর স্থানীয় সংগঠন ‘বন্ধু জুনিয়র’ চবি বন্ধুসভাকে ফুল দিয়ে বরণ করে এবং জলপাহাড় পার্ক ঘুরিয়ে দেখায়। লেকের জল, পাহাড়, ছোট চিড়িয়াখানা, নৌকা ভ্রমণ, পানির ওপর বাঁশের তৈরি সেতু, সেতু দিয়ে লেকের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া, সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটি জায়গা। জলপাহাড় পরিদর্শন শেষে রওনা হওয়া রিসাং ঝরনা দিকে। রিসাং ঝরনা যেতে হয় উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে। ঝরনায় যাওয়ার সময় নিচের দিকে নামতে হয়। হাঁটতে হয় প্রায় ৩০ মিনিট। মোটরসাইকেলে করেও যাওয়া যায়। যাওয়ার পথে দুটো জায়গায় রয়েছে শরবত আর ফলের দোকান। রিসাং ঝরনায় নামার জন্য রয়েছে ইটের তৈরি সিঁড়ি। সিঁড়ির গোড়ায় রয়েছে কাপড় পরিবর্তন করার রুম। কাপড় পরিবর্তন করে নেমে যাওয়া হয় ঝরনার পানিতে গোসলের জন্য।

খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ
খাগড়াছড়িতে চবিসভার বার্ষিক আনন্দভ্রমণ


সিঁড়ির ধাপগুলো নেমে, পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে ঝরনার পানিতে গা অবগাহন করার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে নেমে আসে স্বর্গীয় অনুভূতি। মন চায় এখানেই থেকে যাই সারা জীবন। দেখতে হবে আরও স্থান, ঝরনার পানিতে ভেজার সুযোগ দিতে হবে অন্যদের, আবার পাড়ি দিতে হবে পাহাড়ি পথ, উঠতে হবে ১০০০ ফুট ওপরে। ঝরনার পানিতে গোসল করে গোসলখানায় পরিষ্কার হয়ে সবাই রওনা দিলাম বাসের উদ্দেশ্যে। বাস নিয়ে চলল দুপুরের খাওয়ার জন্য আদিবাসী খানমুই রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁয় আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন খাগড়াছড়ি বন্ধুসভার সদস্যরা।

দুপুরের খাবার তালিকায় ছিল শুঁটকি মাছ, পাহাড়ি বাঁশকোড়ল দিয়ে সবজি, সামুদ্রিক মাছ ভাজা, মুরগি, ডাল। খোলামেলা খানমুই রেস্তোরাঁয় খাওয়া শেষে যাত্রা শুরু হল জেলা পরিষদ পার্কের উদ্দেশ্যে।  জেলা পরিষদ পার্কের সুন্দর সুন্দর স্থাপনা, লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ মুগ্ধ করে বন্ধুদের। পার্ক ভ্রমণ শেষে খাগড়াছড়ি ও চবি বন্ধুসভার সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।

জেলা পরিষদ পার্ক থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা। সন্ধ্যায় পৌঁছালাম তারেং, যেখান থেকে অবলোকন করা যায় পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাকে। স্পষ্ট দেখা যায় খাগড়াছড়ির ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া চেংগী নদী। মিটমিট করে জ্বলতে থাকা শহরের বৈদুতিক বাতিগুলো যেন আকাশে ঝিকমিক করা তারা। তরঙ্গায়িত হয়ে আসা আলোগুলো মনে করিয়ে দেয় ছোটবেলায় মাঠিতে শুয়ে আকাশে তারা দেখার কথা। তারেং থেকে দেখা যায় সবুজ আর নীলের মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দৃশ্য।

তারেংয়ের কাছেই আলুটিলা গুহা, যেটি আমাদের শেষ গন্তব্য। গুহা অন্ধকার জায়গা, রাতের বেলায় সেটি আরও গাঢ় অন্ধকার। অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়লাম আলুটিলায়। এটি প্রায় তিন হাজার ফুট ওপরে, এখান থেকেও দেখা যায় পুরো শহর। টর্চলাইট আর মোবাইল ফ্ল্যাশ লাইট নিয়ে রওনা দিলাম অন্ধকার গুহায়। অন্ধকারে ছেলেদের পশুপাখির নকল ডাক পথটুকু করেছিল ‘ভয়ংকর’ সুন্দর।  গুহায় যারা প্রথম প্রথম প্রবেশ করেছিল, তারা কিছুটা ভয় পাচ্ছিল, যদিওবা ভয়ের কিছু নেই। ৪৮ জনের এত বড় দল যেকোনো ভয়কে দূর করতে পারে। কখনো বসে, কখনো মাথা নিচু করে পাড়ি দিতে হয়েছে গুহা। শেষ প্রান্তে এসে সবাই বিজয়ের হাসি দিয়েছে কিন্তু অন্ধকারে শব্দ শোনা ছাড়া হাসি দেখা যায়নি। গুহা থেকে আবারও সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়েছে।

আলুটিলা থেকে রওনা দিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে। পথিমধ্যে বাসেই নির্বাচিত করা হলো  ‘ম্যান’ অ্যান্ড ‘ওমেন’ অব দ্য ট্যুর। সবচেয়ে বেশি ভোটে ম্যান নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ সোবহানী এবং ওম্যান নির্বাচিত হন মৌসুমি আহমেদ মিতু। আয়োজন করা হয়েছিল র‍্যাফল ড্রয়ের।

কায়কোবাদের নেতৃত্বে সফলভাবে শেষ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার এই আনন্দ আয়োজন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মাইনুল মোরশেদ, ইকবাল সানি, জান্নাতুল ফেরদৌস, অর্নব, তনুশ্রী, সুজানা, জাহিদ, তুলি, শরীফ, উজ্জ্বল, হূমায়ুন, গিয়াস, তানভীর, লিয়া, ইশতি, রিফাত, বিজয়, রাকা, পূরবী, নাফিসা, রিমি, আফরিন, নূপুর, সোহাগ, ফেরদৌস, আযম, আতিক, স্বর্ণা প্রমুখ।