দুঃখ ছুঁয়ে জোছনার ছায়া

সঞ্জীব চৌধুরীর জনপ্রিয় গানের কথায় বলছি, ‘আমি কাউকে বলিনি সে নাম’।
একটি সত্য ঘটনা অবলম্বন করে গল্পটি লিখছি। গল্পের চরিত্র সত্য, ঘটনা সত্য, শুধু নাম-পরিচয় গোপন রাখার অনুমতি নিয়ে লেখা।
নীলা ও হিমাদ্রি পাশাপাশি বাসায় থাকত ১০ বছর। দুজনের মধ্যে কোনো কথা হতো না। ২০১৪ সালে হিমাদ্রির পরিবার বাসা পরিবর্তন করে চলে যায় অন্য এলাকায়। নীলা জানত না কোথায় চলে গেছে হিমাদ্রি। নীলা খুব কষ্ট পেতে লাগল, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো।
হিমাদ্রি একই শহরে কিন্তু সে নিজেও জানে না নীলা অসুস্থ।
এক মাস পর সুস্থ হয়ে বাসায় আসে। বাড়ির সবাই তাকে বলে হিমাদ্রি ঢাকা চলে গেছে।
নীলার সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলো হিমাদ্রির! নীলা তখন কিছু বলতে পারল না।
নীলার কোনো মুঠোফোন নেই!
নীলা হিমাদ্রির ফোন নম্বর সংগ্রহ করে একটি দোকান থেকে কল দিল। দু-তিন মিনিট কথা বলল, জানতে চাইল হিমাদ্রির সম্পর্কে।
কথার একপর্যায়ে ছেলেটি বলল, একদিন দেখা করবে?
মেয়েটি বলল, তোমার প্রিয় স্থান কোনটি।
ছেলেটি বলল, নদীতীর।
মেয়েটি বলল, নদীতীর কোথায় পাব?
তখন শহরের কুশিয়ারা নদীর তীরের কথা বলল ছেলেটি।
মেয়েটি তখন বলল, কবে?
আমার জন্মদিনে!
না, আমি বের হতে পারব না।
তাহলে?
মেয়েটি বলল, শরতের যেকোনো দিন।
ছেলেটি বলল, হ্যাঁ, শরতে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বিকেলের আলোয় তোমার কথা শুনব।
শরৎ এসেছে। দেখা হলো। মেয়েটি খুব ভালোবাসে ছেলেটিকে!
মেয়ের পরিবার সব জানে। তাই মেয়েটির ওপর নজর রাখে সব সময়।
আর ছেলেটার সম্পর্কে ও জানতো বিয়ে করেছে সে।
কিন্তু আজ জানল ও এখনো বিয়ে করেনি। তাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
মেয়ের হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা হিমাদ্রি নীলা। ওই লেখার জন্য মেয়ের বাবা মেয়েকে খুব মেরেছে।
সব শুনে হিমাদ্রি অবাক হয়ে বসে ছিল। বুঝতে পারছিল না কী বলবে?
ছেলেটি প্রশ্ন করে, সত্যি মেহেদি দিয়ে আমার নাম লেখা?
মেয়েটি তখন তার কোমল হাতটা দেখাল।
ছেলেটি বলল, এত ভালোবাসো তুমি আমায়?
মেয়েটি বলল, হ্যাঁ, খুব ভালোবাসি।
কিন্তু বাবা আমাকে শপথ করিয়েছে, এসব যেন ভুলে যাই। এখন তুমি কিছু করতে পারবে?
ছেলেটির মুখে কথা আসছিল না কী বলবে।
ছেলেটি বলল, আমি চেষ্টা করব তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে।
কারণ, ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়েকে ভালোবাসে। এখন যদি নীলা জানে আর কিছু ঘটে, তখন!
এই ভয়ে সত্য বলল তাকে এবং দুজন বন্ধু হয়ে থাকবে।
মেয়েটি নীরবে কাঁদতে শুরু করে। ছেলেটি তখন কাছে এসে হাতটি ধরে কান্না থামায় এবং বাড়ি পৌঁছে দেয়।
সভাপতি, সিলেট বন্ধুসভা