থ্রি স্টার বনাম ফিফটি স্টার

থ্রি স্টার বনাম ফিফটি স্টার। দন্ত্যস রওশন
থ্রি স্টার বনাম ফিফটি স্টার। দন্ত্যস রওশন


তাহলে চল যাই এক্ষুনি। জিশান আর ইতু গিয়ে দাঁড়াল ক্লাসের সামনে।
ক্লাস নাইন। বড় ভাইয়েরা গল্প করছিল ক্লাসে। তখন টিফিন পিরিয়ড চলছে।
ইতুকে একজন বলল, ‘ভাইয়া, আমাদের একটা কথা ছিল।’
ফারহান বলল, ‘কী কথা?’
রবিন বলল, ‘ব্যাঙের মাথা।’
ক্লাস ক্যাপ্টেন অতনু এসে দাঁড়াল ওদের সামনে।
জিশান ও ইতু ঢুকল ক্লাসের ভেতর।
‘এবার বলো।’ অতনু বলে।
ইতু বলে, ‘ওর না খুব বিপদ।’
অতনু বলে, ‘তাহলে তুমিই বলো। কী হয়েছে তোমার?’
জিশান ঘটনা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে।
ক্লাশের ফাইয়াজ বলে, ‘এই পিয়াস তাড়াতাড়ি টিসু নিয়ে আয় ছেলেটা কাঁদছে।’
এ কথা শুনে ক্লাস ক্যাপ্টেন জিশান একটু রাগ করে বলে, ‘সীমার বাইরে যাস নে।’
সবাই চুপ হয়ে যায়। জিশান কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ‘রোজ স্কুলে আসার সময় ওরা আমার টিফিন খেয়ে ফেলে।’
আরমান বলে, ‘আশ্চর্য! কারা ওরা? ওদের তো মহাশাস্তি হওয়া উচিত।’
‘আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে। গাছতলায় বসিয়ে রাখে। বলে আমাদের সঙ্গে মোবাইল গেম খেল।’ জিশান জানায়।
ফারহান বলে, ‘চল সবাই। এক্ষুনি ওদের ধরে জমিদারবাড়ির পচা পানিতে ফেলে দিয়ে আসি।’
ইতু বলে, ‘অনেক অনেক কাতুকুতু দেয় ওকে। আজ নাকি বাসায় ফেরার সময় ওকে নেংটা করে দেবে। তারপর প্যান্ট আর শার্ট গাছে ঝুলিয়ে রাখবে।’
অতনু বলে, ‘ওদেরকে চেনো? কোথায় থাকে? কী করে?’
ইতু বলে, ‘ওদের নাম নাকি থ্রি স্টার গ্যাং। ওরা ছেলেদের রাস্তায় বিরক্ত করে।’
অতনু বলল, ‘ঠিক আছে, একটা ব্যবস্থা হবে। অ্যাই, তোরা সবাই থাকবি ছুটির পর।’
টিফিন পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজে।
অতনু বলল, ‘সবাই আমরা কৃষ্ণচূড়াগাছের নিচে একত্রিত হব।’
‘ওকে, ঠিক আছে।’
স্কুল ছুটি।
জিশান একা একা বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। ক্লাস নাইনের ভাইয়ারা ছুটল তার দিকে। বড় ভাইয়ারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেল।
রাস্তার দুই পাশে ঝোপঝাড়। বড় ভাইয়েরা সেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছে না।
হঠাৎ দৌড়ে এল তিনটা ছেলে। ঘিরে ধরল জিশানকে। জিশান ভয়ে কাঁপছে।
একজন বলল, ‘অ্যাই পোলা, প্যান্ট খোল।’
আরেকজন বলল, ‘থ্রিতে পড়িস, প্যান্ট পড়ার দরকার কী?’
থ্রি স্টারের আরেকজন বলল, ‘ব্যাগ থেকে বই বের কর। তারপর সব বই পুকুরে ফেলে দে।’
জিশান ব্যাগ খুলছে। আর অমনি জঙ্গলের ভেতর থেকে দৌড়ে এল ক্লাস নাইনের নয়জন। থ্রি স্টারকে ঘিরে ধরল।
পলাশ নামের একজন বলল, ‘অ্যাই তোরা কারা?’
জিশান বলল, ‘আমরা ফিফটি স্টার গ্যাংয়ের সদস্য। এখানে নয়জন এসেছি। বাকিরা আসছে। তোমাদের আজকে জমিদারবাড়ির পচা পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। তাড়াতাড়ি শার্ট খোলো। চলো, পুকুরে নামতে হবে।’
‘আমাদের অপরাধ?’ গ্যাংয়ের সবচেয়ে লম্বা ছেলেটা জিজ্ঞেস করে।
‘একটা ছোট্ট ছেলেকে স্কুলে যাওয়ার সময় বিরক্ত করিস। এটাই অপরাধ।’
ইতু বলে, ‘ভাইয়া, ওরা ক্লাস ফাইভের আপুদের দেখলে শিস বাজায়। বাজে কথা বলে।’
নাইনের সবাই গান ধরে একসঙ্গে, ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে—/ নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?’
থ্রি স্টার গ্যাংয়ের একজন বলল, ‘কিসের মধ্যে কী। পান্তা ভাতে ঘি। গান গাওয়ার কী হলো? আমাদের যেতে দাও।’
আরমান আর ফাইয়াজ লম্বা ছেলেটাকে ধরে পুকুরের পচা পানিতে ফেলে দিল। বাকিরা সবাই হইচই করে উঠল আনন্দে। ওরাও বাকি দুজনকে পাঁজাকোলা করে ধরে নিয়ে গেল পুকুরের পাশে। তারপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল পুকুরে।
জিশান বলল, ‘এবার সাঁতার শুর করো। প্রতিযোগিতা হবে তোমাদের মধ্যে। ওই পাড়ে যে আগে পৌঁছাতে পারবে, সে–ই শুধু ছাড়া পাবে। বাকি দুজনকে হাত–পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দেব।’
ওরা তিনজন সাঁতার শুরু করেছে।
ঠিক ওই সময় সেখানে এলেন ইংলিশ টিচার আওয়াল স্যার।
তিনি বললেন, ‘কী হচ্ছে এসব?’
সব শুনে বললেন, ‘ছি ছি। ওরা তিনজন তো তোমাদের বয়সে বড় হবে। বড়দের সঙ্গে এমন করতে হয়?’
জিশান বলল, ‘স্যার, সবটুকু শুনলে আপনিও ওদের পকুরে ফেলে দিতেন।’
থ্রি স্টার গ্যাংয়ের তিনজন সাঁতরে ওই পাড়ে পৌঁছল ঠিকই। তখনই পুলিশের একটি নীল গাড়ি ওই পাড়ে এসে থামল। ওসি সাহেব বাঁশিতে ফুঁ দিলেন।
‘অ্যাই, তাড়াতাড়ি পুকুর থেকে ওঠ। গাড়িতে উঠে বস।’
নাইনের ছেলেরা সবাই দৌড়ে গেল সেদিকে।
আওয়াল স্যার বললেন, ‘ওদেরকে ছেড়ে দিন, ওসি সাহেব। ওরা ছোট মানুষ। ওরা নিশ্চয় ওদের ভুল বুঝতে পারবে। খারাপ কিছু করে থাকলে আর করবে না।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘স্যার, ওদের তিনজনকে আমরা অনেক দিন ধরে খুঁজছি। ওরা ভয়ানক অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। ওদের নামে মামলাও আছে।’
গাড়িতে ওদের তিনজনকে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। যাওয়ার সময় সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন ওসি সাহেব।
‘তোমরা আজ এখানে না এলে আমরা হয়ত ওদের ধরতেই পারতাম না।’ তিনি আরও বললেন, ‘তোমাদের নয়জনেরও শাস্তি হবে। পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াও। আমি বাঁশি বাজালেই পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’
পুলিশের গাড়ি স্টার্ট দিল। অনেক দূরে চলে গেল। কিন্তু বাঁশি আর বাজল না।
আওয়াল স্যার হো হো করে হাসলেন। বললেন, ‘অ্যাই, তোরা এদিকে ফিরে তাকা। ওসি সাহেব তোদের সঙ্গে মজা করেছেন।’
অতনু বলল, ‘স্যার, পুলিশরাও মজা করে?’
স্যার বললেন, ‘কেন, ওরা কি মানুষ না?’
ফাইয়াজ জিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ওরে ভয় নাই। আর ভয় নাই। তোমাকে আর ওরা নেংটা করতে পারবে না। কাতুকুতু দিতে পারবে না। তোমার টিফিন খেতে পারবে না।’