তাঁবু নম্বর ৮৭


‘তাঁবুতে থাকার অভিজ্ঞতা আছে কার কার’ জাতীয় বন্ধুসমাবেশে রেজিস্টেশনের আগে এভাবেই জানতে চেয়েছিলাম সাউথইস্ট বন্ধুসভার সব সদস্যের কাছে। একজনও হাত তোলেনি। ‘গাজীপুরে বন্ধু সমাবেশে কে কে যেতে চাও?’ এ প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে এমন কেউ ছিল না যে হাত তুলে বলেনি ‘ভাইয়া, আমি যাব।’ মনে হচ্ছিল, সবাই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছি, এখন বললে এখনই বের হয়ে যাবে।

শেষমেশ ১৮ জনের বিশাল দল নিয়ে আমরা ঢাকা থেকে গাজীপুরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম ৬ তারিখ বিকেলে। ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের জন্য বাস নিতে পারিনি, তাই লোকাল বাসের অর্ধেক ভাড়া করেই রওনা হলাম। বাসে উঠে বসতেই হিমেল গান শুরু করল, পাশ থেকে বেসুরো গলাই গেয়ে উঠল জান্নাত। মাঝেমধ্যে বাসের হেল্পার মামা এসে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন।

গাজীপুরে যখন পৌঁছালাম, তখন রাত অনেক। ঢাকার তুলনায় গাজীপুরে ছিল বেশ ঠান্ডা। আমাদের জন্য বরাদ্দ হলো ৮৭ নম্বর তাঁবু। ছেলে আছি আমরা মাত্র ১২ আর মেয়ে ৬ জন। মেয়েদের জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা আর ছেলেদের জন্য তাঁবু। এই ঠান্ডার ভেতর তাঁবুতে থাকা লাগবে আমাদের আর মেয়েরা থাকবে ফ্ল্যাটে এটা ভেবে ছেলেদের রাগ-আক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু রাগ দেখাল মেয়েরা; তারাও যে তাঁবুতে থাকতে চায়।

ঢাকা শহরে রাত ১২টার পর কখনো বের হওয়া হয়েছে বলে মনে নেই। তবে রাত দুইটায় বন্ধুরা সবাই মিলে বের হলাম পুরো মৌচাক মাঠটা একবার ঘুরে দেখার জন্য। হালকা শীত লাগা, সঙ্গে চারদিকে আলোর মিছিল, উৎসবমুখর পরিবেশ।

গ্রামের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আত্মীয়স্বজনদের বিয়েতে বাসায় অনেক মেহমান এলে এক কক্ষে গাদাগাদি করে ১০-১২ জন থাকতাম। কেন যেন সেই দিনগুলো খুব মিস করেছি অনেক দিন। হঠাৎ করে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি এক তাঁবুর নিচে ১২ জনের তাঁবুবাস, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ঘুমানো আর সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হওয়া জীবনে স্মৃতির পাতাটাকে অম্লান করে রাখবে আমৃত্যু।

সাউথইস্ট বন্ধুসভা