বাবার অফিস ব্যাগ


মনে আছে, খুব ছোট্টবেলায় বাবা অফিস থেকে আসার সময় হলেই আমি জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। অনেক দূর থেকে বাবার বাইকের শব্দ চিনতে পারতাম।
গেটের কাছে আসতেই আমি দৌড়ে নিচে নামতাম। বাবার ব্যাগ নিতাম। তখনো আমাদের গ্রামে সংবাদপত্র প্রচলিত ছিল না, বাবার ব্যাগ থেকে সংবাদপত্র বের করে পড়তে বসতাম। আসরের নামাজের পর সবাইকে সংবাদপত্র পড়ে শোনাতাম। সংবাদপত্রের সঙ্গে চকলেট, বরই, কমলা, পেয়ারা কিংবা অন্য কোনো ফল থাকত। সবাই মিলে সেগুলো ভাগ করে খেতাম। আমাদের বিকেলগুলো এভাবেই কাটত।

কেটে গেছে অনেকটা সময়। স্নাতকোত্তর করছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। COVID-19 আতঙ্কে বন্ধ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বাড়ি এসেছি আমরা ভাইবোনেরা। কিন্তু বাবার অফিস ছুটি নেই। আজও দাঁড়িয়ে ছিলাম জানালায় বাবার পথ চেয়ে। তবে আজ সংবাদপত্রের জন্য নয়। হাতে ডিটারজেন্ট নিয়ে। বাবার বাইকের শব্দ পেতেই বালতিভর্তি পানিতে ডিটারজেন্ট গুলে নিয়ে গেটে গেলাম। বাবা আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগের জিনিসপত্র বের করে ব্যাগটি এবং বাইরের সব পোশাক ভিজিয়ে দিলাম ডিটারজেন্ট গোলানো পানিতে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে মেখে তারপর বাবা ঘরে ঢুকলেন। হেলমেটে স্প্রে করলাম ডেটল।
আগে বাবা অফিস থেকে ফিরলে যতটা উচ্ছ্বসিত হতাম, আজ ততটাই আতঙ্কিত।
আচ্ছা, সারা দিন যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাঁদের কেউ বিদেশফেরত নন তো!
যাঁদের সঙ্গে দুপুরে খেয়েছেন, তাঁরা কেউ COVID-19 আক্রান্ত নন তো?
আচ্ছা, রাস্তায় আসার সময় কোনো বাহকের সঙ্গে দেখা হয়নি তো?
আজ আবার উপজেলা পরিষদের বৈঠক ছিল। আচ্ছা, তাঁরা সবাই সুস্থ ছিলেন তো?
আমার বাবা এখনো সুস্থ তো? যদি তাই না হয়, তাহলে আমরা আক্রান্ত হতে কতক্ষণ? আমরা ঠিক কতখানি সচেতন?

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।