স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে থেকে - স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ৭টা ৪০ মিনিটে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে অধিবেশন শুরু। সে সময় চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ২৭ তারিখের সন্ধ্যা অধিবেশনে আবার পড়েন।
এদিকে ১৯৭১ সালে মেজর জিয়া চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন। বেলাল মোহাম্মদ মেজর জিয়াকে পটিয়া থেকে নিয়ে আসেন। জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতর কেন্দ্রে আসার পথে কয়েক জায়গায় পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে ভাষণ দেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র সেনাদের দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করেন।
জিয়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ২৭ মার্চ তিনি ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৮ মার্চ তাঁর নির্দেশে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ‘বিপ্লবী’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। বিপ্লবী শব্দটা বাদ গেলে নতুন নাম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। 
এরপর যুদ্ধের পুরো সময় এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি প্রিয় গান ছিল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। এ গানটি মানুষের কাছে ছিল আবেগ ও ভালোবাসার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের মানুষকে ভীষণভাবে এ গানটি অনুপ্রেরণা দিত।
প্রথম দিকে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসাবে প্রচারিত হতো। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল। যুদ্ধের সেই ভায়াবহ দিনগুলোতে প্রতিদিন মানুষ অধীর আগ্রহে এ বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অপেক্ষা করত।
২৯ মার্চ থেকে অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ কথাগুলো থাকত। যেকোনো অনুষ্ঠান শেষে আরও থাকত বেলাল মোহাম্মদের সংযোজন করা একটি অংশ—আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তখনই একটি জাতিকে সাহায্য করেন, যখন সে জাতি নিজেকে সাহায্য করে।’
২৮ মার্চ থেকে বেলাল মোহাম্মদসহ সাবই ট্রান্সমিটার ভবনে থাকা শুরু করেন। পাশের গ্রাম থেকে খাবার আসত। এখানে মোহরা নামে একটি গ্রাম আছে। এ গ্রামে ছিলেন দুই ভাই—সেকান্দার হায়াত খান ও হারুনর রশিদ খান। তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে তাঁরা সে সময় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রকে সহযোগিতা করেন। এসব মানুষের কথা ভুলে যাওয়া ভীষণ অন্যায়।
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের আয়ু ছিল মাত্র দুই দিন। ২৬ ও ২৭ মার্চের অধিবেশনেই শুধু ‘বিপ্লবী’ নামটি ছিল। ২৮ মার্চ জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ‘বিপ্লবী’ শব্দটা বাদ দেওয়া হয়। এদিন থেকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের নতুন নাম হয় ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’
পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত এর নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’।

সাংবাদিক ও সংগঠক