স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-বাগাফায় প্রস্তুতি


স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ১০ জনের একটি দল ছিল। ৩০ মার্চ দুপুর পর্যন্ত প্রায় সবাই কালুরঘাটে ছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন বেতার সম্প্রচার কাজে। এই দল ৩০ মার্চ বিমান হামলার পর পটিয়া আসে। পটিয়া থেকে ৩ এপ্রিল রামগড়ে। রামগড়ে পৌঁছাতে সেদিন প্রায় সন্ধ্যা হয়েছিল। ভারত সীমান্তে আছে একটা ছোট্ট নদী। এ নদীর তীর ঘেঁষে রামগড় থানা। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। এই নদীই বাংলাদেশ ও ভারতকে আলাদা করেছে।
মাইক্রোবাস থামল থানার সামনে এসে । এইচ টি ইমাম এগিয়ে এলেন। সে সময় তিনি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক। এখানে সরে এসেছেন আগেই। কাছে এসে বললেন যে বিএসএফের একটি ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা যাবে। একজন বাংলা ও একজন ইংরেজির ব্রডকাস্টার নিয়ে নৌকায় উঠতে হবে।
এটা ছিল স্রোতহীন প্রায় পরিত্যক্ত একটা নদী। কয়েকজন রইলেন রামগড়ে। কয়েকজন নৌকায় নদী পার হলেন। এইচ টি ইমামও সঙ্গে ছিলেন। নদী পার হলেই ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম থানা। থানায় সবার নাম–পরিচয় লেখা হলো। তখন গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে। চারদিক ভীষণ নিস্তব্ধ। কোথাও যেন কেউ নেই। প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর সাবরুম থানায় একটা জিপ এসে দাঁড়াল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা। রাস্তার পাশে ছোট বস্তি।
বিএসএফের (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) একটি ক্যাম্প রয়েছে বাগাফায়। আর এ ক্যাম্পেই আছে ২০০ ওয়াট শর্টওয়েভ একটি ট্রান্সমিটার। এই ট্রান্সমিটারের কথাই বলেছিলেন এইচ টি ইমাম।
ট্রান্সমিটার চালানোর জন্য এখানে অমর সিং নামের একজন শিখ সৈনিক অপারেটর ছিলেন। কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বিমান হামলার পর থেকে সবার সময় কেটেছে পথেঘাটে। যেখানে–সেখানে। ভীষণ অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন তথ্য নিজেদের কাছে লিখে রেখেছিলেন। এসব ছিল গত চার দিনে বিদেশি বেতার ও মানুষের মুখ থেকে শোনা তথ্য।
প্রায় সবাই জানতেন এগুলো একসময় কাজে লাগবে। এর মধ্যে ছিল টিক্কা খানের কল্পিত মৃত্যুসংবাদ। বাংলাদেশে হানাদার বালুচ ও পাঞ্জাবি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ। চট্টগ্রামে দখলদার ছত্রীবাহিনী নামানো। উর্দুভাষীদের যোগসাজশে পাকিস্তানি সৈন্যদের শহরে প্রবেশ। নিরীহ বাঙালিদের হত্যা। নারী নির্যাতন। দ্রুত মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হচ্ছে। জীবন জয়ের শপথ ইত্যাদি।
সাংবাদিক ও সংগঠক

সূত্র:
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-বেলাল মোহাম্মদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস-সম্পাদনা, ড. জাহিদ হোসেন প্রধান, উইকিপিডিয়া ও অনলাইন।