লকডাউন


সজল মা–বাবার বড় সন্তান। ছোট এক ভাই ও বোন আছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা গেলে সংসারের সব ভার সজলের কাঁধে এসে পড়ে। অথচ সজল তখন দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুই বুঝে ওঠেনি, বোঝার কথাও না।
সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, এরই মধ্যে হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। তিন ভাইবোনের বড় সংসার চালাতে গিয়ে বাবা তেমন কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারেননি। তাই তো এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হওয়া হয়ে ওঠেনি সজলের, অথচ বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ডাক্তার হবে।
পরিবারের অভাব–অনটন দেখে দূরসম্পর্কের এক চাচার মাধ্যমে এক অফিসে প্রিয়নের চাকরিতে যোগ দেয় সজল। সারা দিনের কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরে ঘুমাতে যায়, মনের ক্লান্তিতে তার ঘুম আসে না, মাথার ওপর ঘরের টিনের দিকে চেয়ে থাকে, আর দুচোখের কিনারা গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি। তবু পরিবারের কথা ভেবে মনের সব দুঃখ–কষ্ট আড়াল করে পরিশ্রম করে যায়।
চাকরির আট মাসের মাথায় করোনার মহামারিতে পৃথিবী অসুস্থ হলে সজলের কপালজুড়ে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। কারণ, সারা দেশে যখন লকডাউন শুরু হলো, ঠিক তখনই সজল চাকরি হারাল। কোনো সঞ্চয় নেই, কীভাবে মা, ভাই, বোনের মুখে খাবার তুলে দেবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না সজল। চক্ষুলজ্জার ভয়ে কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্যও নিতে পারছে না। লকডাউনের এই কঠিন সময়ে সজল পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বেঁচে থাকতে পারবে কী প্রশ্ন থেকে যায়।

উপদেষ্টা, পটুয়াখালী বন্ধুসভা