আমার আনন্দময় শৈশব

শৈশবকাল থেকে বৃষ্টি আমার ভীষণ পছন্দ। বৃষ্টি এলেই দৌড়ে বাইরে চলে যাওয়া, মাঠে সবাই মিলে ঝাঁপাঝাঁপি, বৃষ্টির জমা পানিতে মাছ ধরা, এমনকি ফুটবল খেলা পর্যন্ত কতই না মজা করতাম।
বাসায় এসে আম্মুর হাতের পিটুনি খেতাম, বলতাম আর যাব না। কিন্তু সেই বৃষ্টি এলে আবার ঠিকই চুরি করে বেরিয়ে পড়তাম।
আম্মুর চাকরির পর পেয়েছি সরকারি কোয়ার্টার।
বিস্তৃত সবুজ মাঠ, খোলা আকাশ। আমার শৈশব বদ্ধ ঘরে কাটেনি।
বদ্ধ ঘর বলতে বুঝতাম কেবল পুতুল, লুডু, দাবা। এর বাইরে আম্মু যখন বিকেলে ঘুমে, আব্বু বাইরে যাওয়ার আগে আমি আর আমার বোন ঘুমের ভান ধরতাম। এরপর যেই না আব্বু চলে যেত, তখনই হয়তো ডাইনিংয়ের চেয়ারে উঠে অথবা প্রায় আমার সমবয়সী বোনটার কোলে উঠে দরজার ছিটকিনিটা খুলতাম। কতবার যে এভাবে কোলে নিতে গিয়ে ও নিজেও পড়ত আর আমাকেও ফেলে দিত। একবার দরজা খুলতে পারলে এরপর আমাদের আর পায় কে?
গোল্লাছুট, বৌছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বোম্বাস্টিং, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ কত কত খেলায় যে মত্ত হতাম মাঠজুড়ে…
সমবয়সী আপন ভাই, বন্ধু আবু সাঈদ জর্জের সাইকেল জোর করে নিয়ে চালাতাম প্রায়ই।
ছেলেমেয়ে কোনো বিভেদ ছিল না। বৃষ্টির সময় ছেলেগুলো মাছ ধরত আর আমরা পাতিলে রাখতাম।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে আমরা ফুল দিতাম, আগের দিন সন্ধ্যায় সামনের কলেজের বাগান থেকে ফুল চুরি করতাম, সেকি আয়োজন। বেড়া ডিঙিয়ে পাহারা বসিয়ে হতো ফুল চুরি। পরদিন সকাল থেকে শহীদ মিনারের আশপাশে ঘোরাঘুরি, গান গাওয়া।
পয়লা বৈশাখে আমরা শাড়ি পরে পুরো এলাকা ঘুরে বেড়াতাম। বড় আপু আমাদের সবাইকে শাড়ি পরিয়ে দিত। আর প্রতিবছর এদিনে আব্বু মেলা থেকে নিয়ে আসত নতুন হাঁড়ি-পাতিল। যদিও তা ১০ দিনেই এক এক করে ভেঙে যেত। আব্বু গ্রামে যেত আর মেলা থেকে খই, খেলনা মিঠাই, বাতাসা আরও অনেক কিছু আনত, আর আমরা কয়েক দিন ধরে সেগুলো নিয়ে উৎসব করতাম।