বাবা আছেন আমার কল্পনায়

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বাবা আমার কাছে কল্পনার এক অনুভূতির নাম। বুঝতে শিখেই জেনেছি, বাবা নেই। ছেলেবেলা থেকেই হোস্টেলে আমার জীবন শুরু। এমনিতে ভালোই থাকতাম কিন্তু হোস্টেলে কারোর বাবা এলে গার্ড মাইকে নাম ধরে ডেকে বলত, ‘তোমার বাবা এসেছে। গেটে এসে দেখা করো।’ বুকটা কেঁপে উঠত। গলার কাছে দলা পাকিয়ে কান্না আসত। দৌড়ে চলে যেতাম ছাদে কান্না লুকাতে।

দুই সপ্তাহ পরপর কর্তৃপক্ষ এক দিনের ছুটি দিত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। তবে সেই সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি। বছরের দুই ঈদে দুবার বাড়িতে যেতাম। ঈদের সেই ছুটিও থাকত তিক্ততায় ভরা। সে সময় অনেক বেশি বাবার সমাধিতে যেতাম। দেখতাম, বাবার সমাধির দুই পাশই খালি রাখা হয়েছে। মা, চাচি এবং প্রতিবেশিদের মুখে সব সময় বাবাকে নিয়ে আলোচনা হতো। আমাকে দেখলে তা একটু বেশিই হতো, যদিও তা আমার ধারণা মাত্র।

তাঁদের মুখেই শুনেছি, বাবা নাকি খুব ভালো মানুষ ছিল। রাগী ছিলেন, তবে নাকি কারোর কখনো কোনো ক্ষতি করেননি। যে–ই দেখত, বলত, ‘তুমি কি জাহিদ ভাইয়ের মেয়ে? তুমি তো একদম তোমার বাবার মতো দেখতে হয়েছ। ভবিষ্যতেও বাবার মতো হোয়ো। তোমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিল। খুব স্পষ্টবাদী, কখনো অন্যায় করত না, প্রশ্রয়ও দিত না।’

আমি এখনো কল্পনাতে বাবার স্নেহ, আদর, শাসন, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব অনুভব করি।

বাবার চলে যাওয়ার ২৯ বছর হলো। বাবাকে সমাহিত করা হয়েছে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে। ছেলেবেলায় বাবার অভাব যতটা না বুঝেছি, আজ বড় হয়ে তার চেয়ে বেশি বুঝি। আজও গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কান্না। কত দিন যাওয়া হয়নি বাবার সমাধিতে। বাবা নেই ঠিকই, তবে আমার কল্পনায় অনুভবে এখনো বেঁচে আছেন।

কাজী তাহমিনা: মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা