'বাপ হইলে বুঝবি'

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বাবারা সব সময়ই একটু কঠিন প্রকৃতির হন। সব সময় মুখে একটা গম্ভীর ভাব থাকবে, সব সময় কঠিন গলায় কথা বলবেন, একটু অনিয়ম করলেই বকা দেবেন—এমনই হয় বোধ হয়। ছোটবেলায় কেউ যখন জিজ্ঞেস করত, ‘বলো তো বাবু, তোমাকে কে বেশি আদর করে? আব্বু, না আম্মু?’ অকপটে উত্তর দিতাম, ‘আম্মু।’
আমরা চার ভাইবোন; আব্বু–আম্মু দুজনই চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকেই আব্বুকে সব সময় ব্যস্ত দেখেছি, কখনো আয়েশ করে জিজ্ঞেস করেননি, ‘বাবা, কী অবস্থা তোমার?’ বাবা কখনো উলটাপালটা খরচ করতেন না। যথেষ্ট ইনকাম ছিল, কিন্তু কখনোই তিনি আয়েশি জীবনযাপন করেননি। যখনই বিরক্ত হয়ে যেতাম, শুধু একটা কথাই বলতেন, ‘বাপ হইলে বুঝবি!’

এখন আমি মেডিকেল কলেজে পড়ি। নিজের ইচ্ছা ছিল না মেডিকেলে পড়ার, বাবার ইচ্ছাতেই পড়ছি। আব্বুর সঙ্গে খুব রাগ করে ছিলাম, কথা বলতাম না। কিন্তু বাস্তব দুনিয়াতে পা রেখে বুঝতে পারছি, বাবা ঠিকই বলেন। এই দুনিয়াতে সৎ থেকে জীবনযাপন করাটা খুবই কঠিন। মানুষ অহরহ যেকোনো কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, বাছবিচার করে না।

আমার বাবা শক্ত ছিলেন বলেই আজ টিকে আছি, ভুল পথে পা বাড়াইনি। অনেক কঠিন হতে হয় বাবাদের, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের সুবিধাকে সব সময়ই বর্জন করেন। সন্তানেরা যাতে সঠিকপথে থাকে, সে জন্যে শাসন করেন বাবারাই। আজ আমাকে কেউ যখন জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার আইডল কে?’ আমি বলি, আমার বাবা।

নিজে কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এখনো কষ্ট করে যাচ্ছেন নিজের সন্তানদের জন্যে কিছু করে যেতে। কজন আছেন পৃথিবীতে, যিনি আপনার জন্যে নিঃস্বার্থভাবে সারাটা জীবন করে যাবেন?

এম এ কাভী সেকান্দার আলম: দপ্তর সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা