সুস্থ পৃথিবীর প্রতীক্ষায়

সমুদ্রের ঢেউয়ের জলোচ্ছল ঝংকার এখনো কানে বাজে। ছবি: সংগৃহীত
সমুদ্রের ঢেউয়ের জলোচ্ছল ঝংকার এখনো কানে বাজে। ছবি: সংগৃহীত

স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে মনোমুগ্ধকর কিছু ফেলে আসা স্মৃতি। গত ডিসেম্বরে ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার পর আট বন্ধু, আট বর্গকিলোমিটার দ্বীপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই। বন্ধু মুকিত, সাদী, সাহাদাত, কামরুজ্জামান, জুয়েল, আলী, নূরউদ্দিন ও আমি ১৪ ডিসেম্বর রাতের ট্রেনে সিলেট থেকে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছে বিচে ঘুরতে শুরু করলাম। সমুদ্রের ঢেউয়ের জলোচ্ছল ঝংকার এখনো কানে বাজে। ছোট্ট রাবেয়ার শামুক বিক্রি করার বায়না দেখে, আমরা তাকে নিরাশ করিনি। সমুদ্রের বুকে রক্তিম সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লেগেছিল। মনে হয়েছিল, এই প্রথম এত সুন্দর সূর্যাস্ত দেখলাম।

পরদিন সমুদ্রের বুকে একটু একটু করে উদয় হওয়া সূর্যকে দেখে হারিয়ে গিয়েছিলাম সূর্য আর সমুদ্রের সেই অপরূপ মায়ায়।

সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে ফেরির পেছনে সাদা গাঙচিলের বিচরণ ভোলার নয়। মনে হচ্ছিল, গাঙচিলগুলো আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। বিজয় দিবসে স্বপ্নের দ্বীপে পা রেখে আমাদের আনন্দের সীমা ছিল না। কটেজে উঠে প্রথমেই ছুটে যাই নীল সমুদ্র স্নানে। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে এদিক–ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকি।

সমুদ্রের বালুতে খালি পায়ে হাঁটি, সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করি। অসংখ্য শামুক আর ঝিনুক পড়ে ছিল সাদা বালুতে, সেগুলো কুড়িয়ে নিই। অসম্ভব সুন্দর ঝিনুকের বুকে কান পেতে শুনি সমুদ্রের গহিন ধ্বনি।

সন্ধ্যার পর সবাই বিচে হরেক রকম দোকান ঘুরে দেখলাম। সামুদ্রিক সুস্বাদু মাছ খেলাম। রাতে সমুদ্রের গহিন জল থেকে মোহনীয় ভঙ্গিতে ধীর লয়ে উঠে আসে রুপালি চাঁদ। ঠান্ডা হিমেল বাতাসে ফেরির ওপর বসে এমন রুপালি চাঁদ দেখে কার না দলবেঁধে মন খুলে গান গাইতে ইচ্ছা করে। চাঁদনি রাতে সমুদ্র আর দ্বীপটাকে রূপকথার কোনো এক মায়াপুরীর মতোই লাগছিল।

দ্বীপে রাত্রিযাপন শেষে সাইকেল রাইড করে ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে ভ্রমণ, ডাব খাওয়া, চারদিকে সমুদ্রের গর্জনে বাতাসে ভেসে আসা ঝংকার তোলার শব্দসহ নতুন সব অভিজ্ঞতা। এ দ্বীপে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্যার ‘সমুদ্রবিলাস’ নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন, সেই বাড়িও দেখার সৌভাগ্য হলো।

কত দিন প্রিয় মুখগুলো দেখি না, দেখি না এমসি ক্যাম্পাসে অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়দের আড্ডা। ছবি: সংগৃহীত
কত দিন প্রিয় মুখগুলো দেখি না, দেখি না এমসি ক্যাম্পাসে অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়দের আড্ডা। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান করোনা–পরিস্থিতি থেকে পৃথিবী সুস্থ হলে আবার এমন একটি ভ্রমণ খুবই প্রয়োজন। কত দিন প্রিয় মুখগুলো দেখি না, দেখি না এমসি ক্যাম্পাসে অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়দের আড্ডা, এমসি হোস্টেলের বন্ধুবান্ধব, শহীদ মিনারে বসে প্রিয় বন্ধুসভার পাঠচক্রগুলোও বড্ড মিস করছি।

করোনার জন্য গৃহবন্দী হয়ে আমার মতো বই ও অনলাইন কোর্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছেন অনেকেই। আমিও তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আছি, সুস্থ পৃথিবীর বুকে নতুন এক বিজয়ের রক্তিম সূর্য দেখার।

সভাপতি, এমসি কলেজ বন্ধুসভা, সিলেট

বন্ধুসভায় লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]