সাংহাইয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে বর্ণিল বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে চিনল সবাই। সাংহাইয়ের জিয়াওতং বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ এপ্রিল রোববার দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংহাইতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংগঠন মিনি বাংলাদেশ ইন সাংহাই এবং জিয়াওতং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (বিএসইউ)। বর্ণাঢ্য সব আয়োজনের প্রতিটি ধাপেই ছিল বাঙালিয়ানাকে সবার সামনে বিশেষত বিদেশিদের সামনে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরার অদম্য প্রয়াস।
বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে সাংহাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত উল্লেখযোগ্য বিদেশি শিক্ষার্থী যোগ দেন। দিনব্যাপী এই আয়োজন মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল।
প্রথম পর্বে সকাল থেকে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রদর্শনীর। এই পর্বের মূল আয়োজনে ছিল স্থিরচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। আরও ছিল স্টলের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ প্রদর্শন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, রূপবৈচিত্র্য, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলাকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়। এ সময় শত শত বিদেশিকে প্রবল আগ্রহ নিয়ে প্রদর্শনী উপভোগ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিদেশিদের বৈচিত্র্যময় বাংলা খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে খিচুড়ি, টিকা কাবাব ও পুডিং ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সাংহাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা। দর্শক সারিতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মূল অনুষ্ঠানে গান, আবৃতির ফাঁকে দেশীয় গেমশোর আয়োজন ভিন্নমাত্রা যোগ করে। গেম শোতে পুরুষদের জন্য মোরগ লড়াই, নারীদের জন্য মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতার মতো জনপ্রিয় সব খেলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বিদেশিদের উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ প্রামাণ্যচিত্রের দুটি অংশও অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
শেষ পর্বে নৈশভোজে সম্পূর্ণ বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়। নৈশভোজের পর গেম শোতে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সব আয়োজন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আয়োজকদের চেহারায় ক্লান্তির বদলে ছিল তৃপ্তির আভা। বিদেশিদের সামনে দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারার আনন্দ অপার্থিব।