তাসমানিয়ায় স্থায়ী বসবাসের ভিসা নিয়ে আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

তাসমানিয়ার মানচিত্র। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
তাসমানিয়ার মানচিত্র। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যে বিভিন্ন নিয়মকানুন পূরণ করে অফশোর (বিশ্বের অন্য কোথাও থেকে) আবেদনকারীর জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগের ঘোষণা, অন্যদিকে অভিবাসন পেতে তাসমানিয়ায় আগে থেকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর নতুন শর্ত আরোপ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ভিসা শ্রেণি ৪৮৯-এর আওতায় অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূলীয় দ্বীপরাজ্য তাসমানিয়া মনোনীত ভিসাধারীরা রাজ্যের যেকোনো জায়গায় চার বছর মেয়াদে বসবাস ও কাজের সুযোগ পাবেন বিদেশি আবেদনকারীরা। দুই বছর বসবাস ও এক বছর কাজ করার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যা কিনা অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রযোজ্য ছিল। তবে, এ ভিসার শর্ত বাস্তবে পূরণ করা কঠিন হবে বলে অভিজ্ঞ অভিবাসন আইনজীবীরা মন্তব্য করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনের অন্যান্য শর্ত পূরণ করার পরও তাসমানিয়া রাজ্যে যে ক্যাটাগরিতে বেশির ভাগ মানুষ আবেদন করতে পারবেন, তাদের এ ভিসা পেতে হলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত চাকরি পাওয়ার প্রমাণপত্র অথবা ইংরেজিতে বেশি দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস-এর সকল বিভাগে ৭ স্কোরের সঙ্গে চাকরি পাওয়া যাবে সেরকম প্রমাণপত্র লাগবে। তারপরও কর্তৃপক্ষের একটা ইচ্ছেমাফিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার থাকবে বলে একটা বাক্য রয়েছে। অভিবাসন আইনজীবীরা ধারণা করছেন, এ কারণে অভিবাসন ইচ্ছুকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে যেকোনো মুহূর্তে।
অন্যদিকে, যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তাসমানিয়ায় এক বছর পড়াশোনা করলেই অভিবাসন পাবেন বলে এসেছিলেন (অনশোর আবেদনকারী) তাদের ব্যাপারে তাসমানিয়া সরকার নতুন শর্ত যুক্ত করে তড়িঘড়ি আরেকটি ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় নানা পরিবর্তন, নতুন শর্ত ও সংশোধন করায় সেখানে অভিবাসনে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মনে এক ধরনের অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে তাসমানিয়ার রাজ্য সরকার কয়েক মাস আগে যে ঘোষণা দিয়েছিল সেখান থেকে সরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের ক্ষেত্রে এক বছরের বদলে দুই বছর পড়াশোনার বাধ্যবাধকতার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেননি।

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

অনেক শিক্ষার্থীই বুঝতে পারছেন না, দীর্ঘসময় ধরে তাসমানিয়ায় পড়াশোনার শেষে অভিবাসী হওয়ার জন্য আদৌ তারা আবেদন করতে পারবেন কিনা। এই সিদ্ধান্তে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় তাদের আবেদন প্রত্যাহার করতে শুরু করেন। আবেদন তুলে নেওয়ার এই সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করলে তা নতুন আইনের আওতায় পড়বে না বলে সম্প্রতি আরেকটি ঘোষণা দেয় তাসমানিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগ। এতে করে সাময়িক স্বস্তি ফিরে এলেও অবিশ্বাস কেটে যায়নি। শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দুই বছর পড়াশোনা ও একটা ডিপ্লোমা করার পরও তাসমানিয়া সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না।
এ বিষয়ে অভিবাসন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা তাসমানিয়ায় পড়াশোনা করার পর আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে চূড়ান্তভাবে অভিবাসন নাও পেতে পারেন। তবে, এত কিছুর পরেও চোখে নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে যারা এখনো তাসমানিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের অভিবাসনের ভবিষ্যৎ ভেবে অনেকেই শঙ্কিত। তাই, আবারও ভালো করে ভেবে চিন্তে তাসমানিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অভিজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দিয়েছেন।

*কাউসার খান, অভিবাসন আইনজীবী। ইমেইল: <[email protected]>