অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি কিনতে জেনে রাখা ভালো

সংগৃহীত
সংগৃহীত

বাসযোগ্য শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। তবে বহু বছর আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার মানুষের গড় আয়ের তুলনায় দেশটির ঘরবাড়ি ও জমিজমার মূল্য অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় দেশটির জায়গা-জমির দাম অনেকাংশেই বেশি। তবে দেশটিতে ঘরবাড়ি বা জমি কিনতে যে মূল্য পরিশোধ করতে হয় তাতে মূলত আরও বেশ কিছু অতিরিক্ত অর্থও যুক্ত থাকে। তাই সেসব বাড়তি অর্থ বাঁচাতে বেশ কিছু বিষয় নজরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ উদ্যোক্তা ও বাজেট গুরু টেমি বার্টন। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কাজে লাগতে পারে তাঁর এই পরামর্শ।

সরকারি ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি
অস্ট্রেলিয়ায় ঘরবাড়ি বা জমিজমা কেনার ৩০ দিনের মধ্যে ক্রয়কৃত সম্পদের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। যাকে বলে স্ট্যাম্প ডিউটি। অনেকটা উল্লেখযোগ্য হারেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যভেদে প্রদেয় করের হার ভিন্ন হতে পারে। এ ছাড়া একই রাজ্যের মধ্যেই স্থান, বাজার দর বা আবাসস্থলের প্রকারভেদেও এই স্ট্যাম্প ডিউটি এবং অন্যান্য সরকারি ফির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। আবার বিভিন্ন সময় সরকার স্ট্যাম্প ডিউটি পুরোপুরি বাতিলও করে থাকে। এসব বিষয়ে অজ্ঞতার ফলে গড়ে প্রায় ২৬ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত বেশি স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান করেন অনেকেই। তাই ঘরবাড়ি বা জমিজমা কেনার আগে <stampduty.calculatorsaustralia.com.au> এই ওয়েবসাইটে তথ্য দিয়ে স্ট্যাম্প ডিউটি হিসাব করে নেওয়া ভালো। বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে প্রথম ক্রেতা হলে একটা নির্দিষ্ট দাম পর্যন্ত স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয় না।

আইনি ফি
ঘরবাড়ি–জমিজমা কিনতে আইনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে রাখা বা পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই উত্তম। তবে পেশাদারেরা অনেক সময়ই বাড়তি ফি প্রয়োগ করতে পারেন। যার পরিমাণ গড়ে এক হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারও হতে পারে। তাই এমন কাউকে নিয়োগ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি কোন কোন সেবা গ্রহণ করছেন এবং আইনি বিশেষজ্ঞ আপনার প্রদেয় ফির অধীনে আপনাকে কি সেবা দেবেন। এ সংক্রান্ত অনেক মৌলিক পরামর্শ বা সেবা আপনিও সরকার থেকে বিনা মূল্যেও পেতে পারেন।

কীটপতঙ্গ ও স্থাপনা নিরীক্ষণ
বাড়ির মালিকানা গ্রহণের আগে বাড়িটির কীটপতঙ্গ ও স্থাপনা নিরীক্ষণ করিয়ে নিন। স্বল্প এই ব্যয় আপনাকে ভবিষ্যতে বড় খরচ থেকে বাঁচিয়ে দেবে ঠিকই তবে অনেক সময় এর জন্য অনেক বেশি ফি কেটে নেয়।

ঋণ আবেদন বা প্রতিষ্ঠান ফি
অস্ট্রেলিয়ায় রিয়েল এস্টেটের বাণিজ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে। তাই বাড়ির মালিকানা বা হোম লোন গ্রহণের যেকোনো কাগজে স্বাক্ষর করার আগে ভালোভাবে পড়ে নিন। কেননা অনেক সময়ই অতিরিক্ত কিছু অর্থ পরিশোধের কথা বিক্রেতা কিংবা ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সহজবোধ্য নয় এমনভাবে লিখে থাকে। অনেক সময় ভিন্ন ভাষাও ব্যবহার করা হয়। তাই চুক্তির কাগজে স্পষ্ট ধারণা না নিয়ে স্বাক্ষর করবেন না। এতে গড়ে ৬০০ ডলার পর্যন্ত খরচ বাঁচান যায়।

ঋণদাতার বন্ধক বিমা
অস্ট্রেলিয়ায় হোম লোনের মাধ্যমে বাড়ি কিনলে পুরো মূল্যের ২০ শতাংশ অর্থ বিক্রেতার কাছে জমা রাখতে হয়। তবে কেউ এই ২০ শতাংশ অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে অধিকাংশ সময়েই ঋণদাতার বন্ধক বিমা (এলএমআই) পরিশোধ করে দেওয়ার চুক্তি করা হয় ক্রেতার সঙ্গে। তবে এই এলএমআই পরিশোধের চুক্তি না করাই শ্রেয়। অনেক সময়ই ক্রেতা এই এলএমআই পরিশোধ করতে গিয়ে প্রায় ২০ হাজার ডলার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে থাকেন। এর পরিবর্তে ২০ শতাংশ অর্থ সঙ্গে নিয়েই বাড়ি-ঘর কেনার কথা চিন্তা করা শ্রেয়।

আবাস্থল পরিবর্তনের ব্যয়
যখন আপনি ভাবছেন বাড়ি কেনার প্রায় সকল খরচ শেষ তখনই বাসা পরিবর্তনের জন্য ভাড়ায় আনা শ্রমিক ও পরিবহনের ব্যয় আপনার সামনে এসে হাজির হতে পারে। দূরত্বভেদে সেই খরচ ১০০ থেকে ২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারও হতে পারে। তাই এই পরিবহন খরচ বাজেটের মধ্যে আগে থেকেই রাখুন।

ঘরবাড়ির বিমা
বাড়ি কেনা একজন মানুষের জীবনের অন্যতম একটা বড় খরচ। আর বিশাল এই ব্যয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অবশ্যই বাড়ির বিমা করে রাখা উচিত। তবে সেটি যেন বাড়ি কেনার বাজেট পরিকল্পনার ভেতরে আগে থেকেই থাকে। এই পূর্ব পরিকল্পনা প্রতি মাসে কমপক্ষে এক শ ডলার সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে।
এ ছাড়া বাড়ি কেনার আগেই সেই পরিকল্পনার একটি বাজেট তৈরি করে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন টেমি বার্টন। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য কর্তৃক নির্ধারিত ফার্স্ট হোম বায়ার প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখা, আলাদা করে সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খোলা, দৈনন্দিন বাড়তি খরচ কমিয়ে আনাসহ উচ্চ সুদের ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের অর্থ দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এখন অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি-ঘরের দাম কমতে শুরু করেছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে আরও কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।

কাউসার খান: ইমেইল <[email protected]>