মুম্বাইয়ে বাণিজ্যিক সেমিনার ও স্বাধীনতা দিবস
ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে এক বাণিজ্য সেমিনার এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উৎসাহ উদ্দীপনা ও যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়েছে।
বাণিজ্যিক সেমিনার
বাংলাদেশ: অ্যান অ্যাট্রাকটিভ বিজনেস ডেসটিনেশন অ্যান্ড পোটেনশিয়ালস ফর গ্রোথ ইন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট শীর্ষক এই সেমিনার গত মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) ইন্ডিয়ান মার্চেন্টস চেম্বার (আইএমসি) অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। সভাপতিত্ব করেন আইএমসির প্রেসিডেন্ট ড. ললিত কানোডিয়া। আইএমসির প্রায় ৪০ জন সদস্যসহ মুম্বাইয়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মুম্বাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার মো. লুৎফর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির সাম্প্রতিক চিত্র উপস্থাপন করেন। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক উচ্চপ্রবৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি ও দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতির বিষয় তুলে ধরা হয়। সেমিনারের দ্বিতীয় অংশে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বর্ণনা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়।
মো. লুৎফর রহমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো বিশেষত গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, কৃষিভিত্তিক শিল্প, জাহাজনির্মাণ শিল্প, সিরামিক, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক, অবকাঠামো উন্নয়ন, হিমায়িত খাদ্য ও চিংড়ি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পাটজাত দ্রব্য, প্লাস্টিক, ওষুধশিল্পের কথা উল্লেখ করেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার তুলে ধরে তিনি বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাষা ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য, আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অভিন্নতা ইত্যাদি সুবিধাসমূহ ব্যবহার করে উভয় দেশই বিপুলভাবে লাভবান হতে পারে।
হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী তাঁর বক্তব্যে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ, এর তাৎপর্য ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অবস্থান এবং পোশাকশিল্প, আউটসোর্সিং, চাল উৎপাদনে অতিনির্ভরশীলতা, মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য, জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অর্জনের চিত্র তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সহমতসহ সাম্প্রতিক সময়ে স্থল ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণে দুই দেশের সাফল্যকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আইএমসিকে বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধিদল প্রেরণেরও আহ্বান জানান।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সেমিনারে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে যেকোনো বিষয় জানতে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মুম্বাইয়ের বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানান। ভারতের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মুম্বাইয়ে মিশন কর্তৃক আয়োজিত এ ধরনের বাণিজ্যিক সেমিনার এটাই প্রথম ও সেমিনারটি ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আইএমসির প্রেসিডেন্ট ড. ললিত কানোডিয়া বাংলাদেশে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল প্রেরণসহ অন্যান্য বিষয়ে হাইকমিশন ও উপহাইকমিশনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন
২৬ মার্চ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে মুম্বাইয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম আয়োজনের অংশ হিসেবে সকালে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে উপহাইকমিশনার মো. লুৎফর রহমান জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। দেশে ও প্রবাসে সম্মিলিত কণ্ঠে একই সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপহাইকমিশন প্রাঙ্গণে উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এ সময় উপহাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
সকালে মো. লুৎফর রহমান তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অপরিসীম অবদানের বিষয়টি আলোকপাত করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে উন্নয়নে অবদান রাখতে আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যায় স্থানীয় হোটেল তাজমহল প্যালেসে উপহাইকমিশন এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহারাষ্ট্র সরকারের চিফ সেক্রেটারি সুমিত মল্লিক। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জি প্রমুখ। কূটনৈতিক কোরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য, মহারাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মুম্বাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতি অঙ্গন ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, ভারতীয় নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি