হিউস্টনে সুরাঙ্গনের সংগীতসন্ধ্যা

সংগীতসন্ধ্যার একটি দৃশ্য
সংগীতসন্ধ্যার একটি দৃশ্য

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন শহরে হয়ে গেল সুরাঙ্গন স্টুডেন্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে ও শিল্পী কাদেরী কিবরিয়ার একক সংগীতানুষ্ঠান। সুরাঙ্গন মিউজিক স্কুলের উদ্যোগে গত ১২ আগস্ট রোববার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সুরাঙ্গন স্কুলের শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা মিলে উপহার দেয় এক মনোজ্ঞ সংগীতসন্ধ্যা।

প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটি অব গ্রেটার হিউস্টনের সভাপতি ড. হান্নান খান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব হিউস্টনের সভাপতি শাহ এম হালিম, হিউস্টন দুর্গাবাড়ী সোসাইটির সহসভাপতি সুজিত সেনগুপ্ত ও টেগোর সোসাইটি অব হিউস্টনের সভাপতি দেবলীনা ব্যানার্জি।

অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধের আকর্ষণ ছিল সংগীতালেখ্য ‘আলোর আনন্দলোকে পঞ্চকবি’। উপজীব্য ছিল বাঙালির অনেক গর্বের পঞ্চকবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদ সেনের সৃষ্টি এবং সেই সৃষ্টির আলোক বার্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক আনন্দলোকে পাড়ি দেওয়া। কখনো ভাষ্য, কখনো একক বা দলীয় সংগীত, আবার কখনো একক বা দলীয় নৃত্যে অনুষ্ঠানটি সত্যিই আনন্দের বার্তা এনে দিয়েছিল। তবলাবাদক রাজা বাঙ্গার সংগত বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তবলায় নিরঞ্জন রায় ও বরুণ চৌধুরীও যথাযথ সংগত করেছিলেন। বিদ্যুৎ ঘোষ ও বিক্রম বাঙ্গা ছিলেন মন্দিরা ও অন্য তালবাদ্যের সংগতে। বেহালাবাদক বিপ্লব সমাদ্দার তাঁর বেহালা সংগতের সঙ্গে সঙ্গে মধুর কণ্ঠে আবৃত্তি ও ভাষ্য পাঠের মধ্য দিয়ে আলেখ্যর সঞ্চালনা করে অনুষ্ঠানটিকে প্রতিটি শ্রোতার কাছে করে তুলেছিলেন অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী।

সংগীতসন্ধ্যার একটি দৃশ্য
সংগীতসন্ধ্যার একটি দৃশ্য

সুরঙ্গনার কর্ণধার রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রুপা ঘোষের উদ্যোগ ও পরিশ্রমে মার্কিন দেশে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীরা একনিষ্ঠ অনুশীলনের মাধ্যমে গানগুলো শুধু সুন্দরভাবে পরিবেশনই করেনি, তাদের বাংলা উচ্চারণও ছিল চমৎকার। নৃত্যেও তেমনি একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার প্রশংসনীয় প্রকাশ ছিল। নৃত্য পরিকল্পনায় ছিলেন নৃত্যগুরু সুপ্রদীপ্তা দত্ত, সিলভিয়া ফারুক ও শাওন সরকার। অংশগ্রহণ করেছিলেন তিথি, পলিন, নুসাইবা, শিঞ্জিনী, অনন্যা, শাওন, শান্তা ও সঞ্চালি। তাদের সঙ্গে ছিল তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে।

দ্বিতীয়ার্ধের আকর্ষণ ছিল একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়ার একক সংগীতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সুরাঙ্গনের পক্ষ থেকে শিল্পী কাদেরী কিবরিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন কাদেরী কিবরিয়া
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন কাদেরী কিবরিয়া

সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি সাধুবাদ জানান স্কুলের অধ্যক্ষা ও পরিচালক রুপা ঘোষকে। তিনি বলেন, সুরাঙ্গন দ্বিতীয় প্রজন্মের মাঝে আমাদের বাংলা সংস্কৃতি বিশেষ করে রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। প্রবাসে শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলা গানের চর্চা ও প্রসারে সুরাঙ্গন মিউজিক স্কুলের প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পরে তিনি সুরাঙ্গনের সব শিক্ষার্থীদের তার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান ও সনদপত্র বিতরণ করেন।

পুষ্পিতা, তিথি, পূর্ণতা, স্মিতা, গ্রন্থি, হেরা, নুসাইবা, প্রিয়ন্তী, ফাইয়াদ, শিরিন, তিন্নি, শায়ন, নিকিতা, সারণি, আভিশ্রি, আভিনন্দ, ফারিয়া, পলিন, আদি, যশ, রোকসানা, অনুশ্রী, জারিয়া, নুবায়েদ, অর্পন, রাসমিয়া, পূর্ণতা, স্নোভার, উম্মুল, রায়া, বিনীতা, অঙ্কিত, আকাশ ও পূজাসহ আরও কয়েকজনকে সনদ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সুরাঙ্গনের পক্ষ থেকে শিল্পী কাদেরী কিবরিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়
অনুষ্ঠানে সুরাঙ্গনের পক্ষ থেকে শিল্পী কাদেরী কিবরিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়

এরপর শুরু হয় কাদেরী কিবরিয়ার গান। তাঁর ভরাট কণ্ঠে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন কখনো রবীন্দ্রসংগীতে, আবার কখনো হারিয়ে যাওয়া পুরোনো দিনের বাংলা গানে। আর গানের ফাঁকে ফাঁকে কখনো তাঁর রবীন্দ্রসংগীতের দুই গুরু দেবব্রত বিশ্বাস আর চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে, আবার কখনো তাঁর সংগীত জীবনের মজাদার অন্য গল্পে শ্রোতাদের তিনি মাতিয়ে তোলেন। তাঁকে কয়েকটি দ্বৈত গানে সহযোগিতা করেন রুপা ঘোষ।

এই আনন্দের রেশ নিতে নিতে শ্রোতামণ্ডলী কখন যে অনুষ্ঠানের শেষ অঙ্কে পৌঁছেছিলেন সে খেয়াল কারও ছিল না। পরিশেষে সকল অংশগ্রহণকারীকে রুপার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন মীলা সেনগুপ্ত। তাঁর দক্ষ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি এক মনোরম ও আনন্দদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অতিথি ও অন্যান্য
সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অতিথি ও অন্যান্য

শিক্ষার্থী, অতিথি শিল্পী, কলাকুশলী মিলে প্রায় ৯২ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে এমন একটি বর্ণময় ও সফল প্রচেষ্টার জন্য রুপা ঘোষ, তাঁর স্বামী প্রদীপ ও সুরাঙ্গন স্কুল পরিবার—সকলের অনেক প্রশংসা, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা প্রাপ্য। তাদের এই নিরলস প্রচেষ্টার জন্য এই সুদূর প্রবাসেও বাংলা সংস্কৃতির আলোকবর্তিকা জ্বলে চলেছে, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পদ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

কুলসুম পারভীন: হিউস্টন, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র।