দিঘল মেঘের দেশে-নয়

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

লাইন কেটে যাওয়ার পর মোবাইলটা ব্যাগে রাখতে রাখতে নদীর মনটা কেন খারাপ হয়ে গেল। যদিও নদী সেটা বুঝতে পারল না। নদী রাকিবের বাসার সামনেই ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। তার মাথার ভেতর রাকিবের কিছুক্ষণ আগে বলা কয়েকটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে তার পেটের ক্ষুধাটা বেশ জানান দিচ্ছে। এখানে আসার আগে নদী ভেবেছিল, রাকিবকে নিয়ে কারি পট সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে ঢুকবে। ওখানকার তন্দুরি চিকেন ও নানরুটি তার খুব পছন্দ। দুজনের জন্য একটা আস্ত তন্দুরি চিকেন। চারটা নানরুটি। সঙ্গে রাইতা ও লাল পেঁয়াজের কুঁচি। এই খাবারটা নদী রাকিবের কাছ থেকেই খেতে শিখেছে।

রাকিবের সঙ্গে পরিচয়ের আগে নদী কখনো সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে যায়নি। অবশ্য যাওয়ার মতো সুযোগও হয়নি। পরিচয় হওয়ার পর প্রথম যেদিন রাকিব তাকে সেই কারি পট সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়, তখন সে অস্বস্তিই বোধ করছিল। কিন্তু খাবার খাওয়ার পর তার সেই অস্বস্তি চলে যায়। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই নদী আর রাকিব সেই রেস্টুরেন্টে গেছে। তবে দুপুরের খাবারের সময় কখনো যায়নি। সব সময় রাতের খাবার খেতে গেছে।

আজ নদী রাকিবের সঙ্গে সেই রেস্টুরেন্টে দুপুরে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিল। এ ছাড়া সারাটা দিন একসঙ্গে কাটাবে বলেও ভেবে রেখেছিল। কিন্তু সে ভাবলেই তো হবে না। আরেকজনকেও তো ভাবতে হবে।

নদীর মাথায় ঢুকল না, রাকিব এত দূর যাবে, কয়েক দিন আগের পরিকল্পনা, একটা ফোন দিয়ে গেলে কী এমন ক্ষতি হতো? তাদের মধ্যে কী এই বিশ্বাসের সম্পর্কটা গড়ে ওঠেনি?

কাছেই ওয়েলিংটন ও গ্রে স্ট্রিটের কোণায় ফাস্ট ফুডের দোকান কেএফসি। গ্রে স্ট্রিট ধরে খানিকটা গেলেই ম্যাকডোনাল্ডস। নদী ইচ্ছে করলে এখান থেকে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারে। প্রফেসর রজারসনের বাসাও বেশি দূরে নয়। তার বাসায় গিয়েও নুডলস বা এ জাতীয় খাবার বানিয়ে খেতে পারে। কিন্তু নদীর অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে। নির্জন কোনো স্থানে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে, তা সে নিজেও জানে না। শিমুল ভাবি ও বেবুন ভাবির কাছে সে মিথ্যা বলে এসেছে। এখন নদী ভাবছে, সে এভাবে না চলে আসলেও পারত। সে কার জন্য এসেছে?

নদী ভাবল, আসলে সে কার জন্য এসেছে? রাকিবের জন্য? কিন্তু কেন? সে নিজে নিজে মাথা নাড়ল। সত্যিকার অর্থে সে নিজেই জানে না।

কিছুক্ষণ আগে প্রকৃতিতে যে মেঘলা ভাব করে এসেছিল, এখন আর সেই ভাবটা নেই। চারদিকে চকচকে রোদ উঠেছে। বাসার সামনের লনে আলোছায়ার খেলাটা স্পষ্ট। লনের পাশের একটা গাছে তিন-চারটা চড়ুই এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ছে। চড়ুইগুলো অনবরত শব্দ করছে-কিচির কিচ, কিচ কিচ, কিচির কিচ। কাছে কোথাও একটা পাখি ডাকছে-ডউব ডউব।

নদী জানে না, ক্ষুধার কারণে কি না, নাকি মনের বিতৃষ্ণার কারণে। পেট থেকে মুখে তিতা জল আসছে। সে শব্দ করে থুতুটা ফেলল। তারপর তর তর করে সে রাকিবের বাসার সিঁড়ি বেয়ে নিচে এল। ড্রাইভওয়েতে নেমে কী কারণে যেন সে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাসাটার দিকে তাকাল। এমনিই।

ড্রাইভওয়ে ছেড়ে ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের ফুটপাতে নেমে নদী একটু দাঁড়াল। ভাবতে শুরু করল, আপাতত সে প্রফেসর রজারসনের বাসায় যাবে কি না? নাকি সে সরাসরি হিলক্রেস্টে চলে যাবে? তার ল্যাব খোলা আছে। ওখানে বসে সে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ খানিকটা এগিয়ে রাখতে পারবে। অবশ্য অ্যাসাইনমেন্টের কাজ খুব বেশি বাকি নেই। দুটি অ্যাসাইনমেন্ট সে করে ফেলেছে। এখন তিন নম্বরটা করছে। চারটা নম্বরটা অবশ্য ছোট অ্যাসাইনমেন্ট।

নদী এবারও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। তার মুখে এখনো তিতা জল আসছে। সে আবার শব্দ করে ফুটপাতের পাশের ঘাসে থুতুটা ফেলল। ভরদুপুর বলে ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের ফুটপাত ধরে কেউ হাঁটছে না। এমনকি এখন পর্যন্ত একটা গাড়িও যাওয়া আসা করেনি।

নদী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আজ সে প্রফেসর রজারসনের বাসায় যাবে না। হয়তো সরাসরি ওয়েলিংটন স্ট্রিটের কোণা থেকে বাস ধরে ওল্ড ফার্ম রোডে নেমে বাসায় চলে যাবে। নয়তো ল্যাবে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করবে।

নদী উত্তরমুখো হয়ে ওয়েলিংটন স্ট্রিটের দিকে হাঁটতে শুরু করল। ছায়াটা তার পেছনে। এ ছাড়া ম্যাপল গাছের বিশাল বিস্তৃত ছায়া তার নিজস্ব ছায়াকে গিলে খাচ্ছে। নদী ঘড়ি দেখল। প্রায় দুইটা পঁচিশ বাজে। সে একটু জোরে হাঁটছে। তাকে ওয়েলিংটন স্ট্রিট থেকে আড়াইটার বাসটা ধরতে হবে। হিলক্রেস্টের বাসটা ওয়েলিংটন স্ট্রিট ও গ্রে স্ট্রিটের কোণায় মাত্র দুই মিনিটের জন্য থামে।

ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট শেষ হতেই ওয়েলিংটন স্ট্রিটে ডানে মোড় নিয়ে কিছু দূর গেলে কেএফসি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট। কেএফসির সামনেই বাসস্টপ। কিন্তু নদী ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট ছেড়ে ওয়েলিংটন স্ট্রিটে উঠে ডানে মোড় না নিয়ে কী ভেবে বামে মোড় নিল। তার হঠাৎ নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে হলো।

নদী আবার ঘড়ি দেখল। আড়াইটা বাজে। হাঁটতে হাঁটতে নদী ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, হিলক্রেস্টের বাসটা এসে থেমে তিনজন যাত্রী তুলে আবার চলে যাচ্ছে। নদী নিজে নিজেই মাথা নাড়ল। সে বুঝতে পারছে না, এ মুহূর্তে সে যে নদীর পাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা ঠিক না বেঠিক। তারপরও সে ওয়াইকাটো নদীর অভিমুখে হাঁটতে শুরু করেছে।

ওয়েলিংটন স্ট্রিট ধরে সামান্য গেলেই জেলিকো ড্রাইভ। জেলিকো ড্রাইভ ও প্ল্যাংকেট টেরেসের কোণায় আর কোনো দোকানপাট না থাকলেও একটা রেস্টুরেন্ট আছে। কিছুদিন আগেও এই রেস্টুরেন্টের নাম ছিল হাইড্রো ম্যাজেস্টিক। কিন্তু এখন রেস্টুরেন্টটার নাম ম্যাজেস্টিক বাদ দিয়ে শুধু হাইড্রো রাখা হয়েছে। নদী ভাবল, রেস্টুরেন্টটার নাম হাইড্রো ম্যাজিস্টিকই তো ভালো ছিল। এখন ওটার নাম হাইড্রো রেখেছে কেন? নামটা কেমন নিঃসঙ্গ মনে হয়।

নিঃসঙ্গ ও নিঃসঙ্গতা! নদী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তার এ মুহূর্তে নিজেকে এমন নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে কেন? এই কয়েকটা মাসে কী এমন হয়ে গেছে যে তার নিজেকে এমন নিঃসঙ্গ লাগবে? সেই নারওয়াহিয়ার টুইন রিভার রেস্টুরেন্টে স্ট্যাফিনির বিয়েতে রাকিবের সঙ্গে তার পরিচয়। তারপর এ কয়েক মাস নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট দোলাচলে পথ চলা। ব্যস এটুকুই তো!

হাইড্রো রেস্টুরেন্টের ঠিক উল্টো পাশে হায়াস প্যাডক। পাঁচ-পাঁচটা ওক গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে এলোমেলো ভাবে। যে জায়গাটা রাকিবের সবচেয়ে পছন্দের, নদী ঠিক সেই জায়গাতে এসে স্থির হয়ে দাঁড়াল।

ওয়াইকাটো নদীতে এখন জোয়ারের টান। নদীর জল পাড়ের বড় বড় পাথরগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ডক ও জলের উচ্চতা প্রায় সমান সমান। মধ্যদুপুরের রোদটা ওয়াইকাটো নদীর স্রোতের ওপর বিছিয়ে রয়েছে। বেশ অনেকগুলো হাঁস স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছে। হায়াস প্যাডকে কোনো লোকজন নেই। নদী একাই।

নদী একটা বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসল। বসেই সে এদিক-ওদিক তাকাল। ডান পাশে একটা বড় ওক গাছ। তার দৃষ্টিটা সেই ওক গাছটার গোড়ায় থেমে গেল। রাকিব এই গাছটার গোড়াতেই ঘাসের ওপর বসে। সে ও রাকিব সঙ্গে সেই স্থানটাতে বেশ কয়েকবার বসেছে।

রাকিবের কথা মনে পড়তেই নদী একটু নড়েচড়ে উঠল। কাছের কোনো গাছ থেকে একটা পাখি ডাকছে। নদীর জল থেকে হাঁসের ডাক আসছে প্যাঁক প্যাঁক, প্যাঁক প্যাঁক। পাড়ে জলের শব্দ-ছলাৎ ছলাৎ, ছলাৎ ছলাৎ।

নদী কিছুক্ষণ আগের রাকিবের সঙ্গে মোবাইলে তার কথাগুলো সে আবার বিশ্লেষণ করতে বসল। কারও অবহেলা সে সহ্য করতে পারে না। সারা জীবন নদী একা একা বেড়ে উঠেছে। তার মা-ই তার একমাত্র সঙ্গী ও প্রধান বন্ধু। কিন্তু রাকিব?

নদী ভাবল, হ্যাঁ রাকিব। কিন্তু মানুষটা এত অহংকারী কেন? ভাবগম্ভীর মানুষ সারা জীবনই তার পছন্দ। যদিও নদী সারাক্ষণ ফটফট করে। খাইয়ের মতো ফটফট। তার মা অবশ্য একটা কথা বলেন, মেয়েরা এমনই হবে। উজ্জ্বল, উচ্ছল ও চঞ্চল। ঠিক প্রজাপতির মতো। আর ছেলেরা হবে অহংকারী, কিছুটা মেজাজি ও সীমিত কথার মানুষ। নদী রাকিবের মধ্যে এই গুণগুলো পেয়েছে। আর এই গুণগুলো পেয়েছে বলেই নদী মানুষটাকে এত বিশ্বাস করে। এতটা পছন্দ করে।

কিন্তু এ মুহূর্তে রাকিবের এই অহংকার নদীকে জ্বালা দিচ্ছে। তার ভেতর একটা কষ্ট এসে ভিড় করছে।

ওয়াইকাটো নদীর জলে মেঘের ছায়া পড়েছে। ধূসর ছায়া। নদী চোখ তুলে আকাশে তাকাল। দেখল, সূর্যের মুখে এক টুকরো পেঁজা মেঘ এসে জমেছে। আশেপাশের ছেঁড়া মেঘগুলোও এলোমেলো দৌড়াচ্ছে। মেঘের ছায়াগুলো এখন নদীর জলে এসে পড়েছে।

নদী আবার নদীর জলে তাকাল। নদীর জলে তাকিয়ে তার প্রতি রাকিবের রাগের কারণটা আবার খোঁজার চেষ্টা করল। মানুষটা দুই সপ্তাহে আগেও তার ছোটখাটো কথাগুলো বলত। ছোটখাটো পরিকল্পনাগুলো নিয়েও আলোচনা করত। অথচ আজ সেই মানুষটা সাড়ে তিন শ-চার শ কিলোমিটার দূরের একটা শহরে যাচ্ছে? পাঁচ দিন আগেই যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে? কিন্তু তাকে একটিবারও ফোনও করে যায়নি। কিছু তো একটা হয়েছে?

রাকিবের এই চুলচেরা ব্যাপারগুলো বিশ্লেষণ করতে করতে নদীর মনে তৎক্ষণাৎ একটা প্রশ্ন জাগল। এই প্রশ্নটা যে তার মাথায় আগে আসেনি, তা নয়। সে এই মানুষটাকে নিয়ে এত ভাবছে কেন? আর এ মুহূর্তে সে মানুষটার পছন্দের স্থানটাতেই বা এসেছে কেন?

নদীর আর ভাবতে ভালো লাগছে না। সামনের ওয়াইকাটো নদীর মেঘের ছায়া তাকে অসহায় করে তুলছে। পাঁচটা ওক গাছ। হায়াস প্যাডক। নদীতে জোয়ারের টান। নদীর জলে মেঘের ছায়া। কতগুলো হাঁসের স্রোতের বিপরীতে সাঁতার ও হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক ডাক। এর সবকিছুই তাকে অসহায় করে তুলছে। তার চোখ ভিজে আসতে চাইছে।

নদীর মোবাইলটা তখনই বেজে উঠল। মোবাইলটা ব্যাগে। ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করতে করতে ভাবল, নিশ্চয়ই রাকিব ফোন দিয়েছে। হয়তো সরি বলার জন্য ফোন দিয়েছে। কিন্তু মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনে দেখল, তার মার ফোন।

ফোন ধরে নদী ভেজা গলায় বলল, হ্যালো।

ফোনের ওপাশ থেকে নদীর মা বললেন, হ্যাঁ নদী, মা বলছি।

: হ্যাঁ মা, তুমি তো তোমার মোবাইল থেকেই ফোন দিয়েছ। তোমার নাম উঠেছে।

: না মানে, তুই তো বলিস বাংলাদেশ থেকে ফোন দিলে নম্বর ওঠে না। প্রাইভেট লেখা ওঠে।

: আজ তোমার নাম উঠেছে।

: ও, তোর গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?

: কী শোনাচ্ছে?

: মনে হচ্ছে তোর শরীর খারাপ।

: শরীর খারাপ না। শরীর ভালোই। ওদিকে সব ঠিক আছে তো?

: হ্যাঁ, সব ঠিক আছে।

: তুমি এ সময় ফোন দিয়েছ?

: হ্যাঁ, একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি। সে কথা পরে বলছি। আচ্ছা, নদী তুই ঠিক আছিস তো?

: একই কথা আবার জিজ্ঞেস করছ কেন?

: আমার মনে হচ্ছে তাই। তুই সত্যি করে বল, ঠিক আছিস তো?

: হ্যাঁ মা, আমি ঠিক আছি। আমার মনটা একটু খারাপ।

: মন খারাপ কেন?

: মন খারাপের কোনো কারণ নেই। এমনিই খারাপ।

: তুই এখন কোথায়, বাসায়?

: না মা। আমি একটা নদীর পাড়ে বসে আছি।

: নদীর পাড়ে?

: হ্যাঁ মা। তোমাকে এই নদীটার নাম বলিনি? ওই যে, ওয়াইকাটো নদী।

: এ সময় নদীর পাড়ে কেন?

: আমার ইচ্ছে হয়েছে। এত প্রশ্ন কর নাতো!

ফোনের ওপাশে নদীর মা চুপ হয়ে গেলেন।

নদী জিজ্ঞেস করল, তুমি হঠাৎ এ সময় ফোন দিলে কেন? তাও আবার সরাসরি ফোন। মেসেঞ্জারে ফোন দিলেই তো পারতে?

: মেসেঞ্জারেই প্রথম চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু লাইন ঢুকছে না। পরে বাধ্য হয়ে সরাসরি দিলাম।

: ও আচ্ছা। আমার ফোনের ডেটা মনে হয় অফ করা। আচ্ছা, আমি ডেটা অন করে মেসেঞ্জারে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।

: না, তোকে আর দিতে হবে না। আমি এখন একটু বাইরে যাচ্ছি। শোন, আজ দুপুরে টাঙ্গাইল যাব একটা কবিতা সম্মেলনে কবিতা পাঠ করতে। মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হলে বা আমাকে ফোনে না পেলে কোনো চিন্তা করিস না।

: আচ্ছা। অসুবিধা নেই। কখন ফিরবে?

: আগামীকাল সন্ধ্যাই তো ফেরার কথা। বেশি ঝামেলা হলে পরশু সকালে হয়তো আসব। টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

: কোনো সম্মাননা বা পুরস্কার দেবে নাকি?

: নাহ। সব সময় কী পুরস্কার-সম্মাননা দেয় নাকি?

: হুম্ম, তুমি ভালোভাবে যেও। ঢাকায় ফিরে ফোন দিয়ো।

: আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এবার বল, তোর মন খারাপ কেন?

নদী ফোনের এপাশে বিষণ্ন হেসে বলল, মা, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল, তাই।

নদীর মা ফোনের ওপাশ থেকে বললেন, ধুর পাগলি! (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া: ইমেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: